Ajker Patrika

কিছু না করেই আয় করেন তিনি! 

কিছু না করেই আয় করেন তিনি! 

সঙ্গীর অভাবে মন খুলে গল্প-গুজব করতে পারছেন না! এমন সমস্যা আমাদের দেশে প্রকট না হলেও বিশ্বের কোনো কোনো দেশে তো ভালোই প্রকট। বিশেষ করে জাপানে। ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মিচিকো উয়েদা গবেষণা করে দেখিয়েছেন, জাপানের ৪০ শতাংশ মানুষ একাকিত্বে ভোগেন। মানুষ পান না গল্প-গুজব করার। 

এমন পরিস্থিতে জাপানেরই এক যুবক অভিনব উপার্জন-কৌশল আবিষ্কার করলেন। কোনো কাজ না করে শুধু মানুষকে সঙ্গ দিয়ে কীভাবে অর্থ উপার্জন করো যায় তা ভাবলেন। এই ভাবনা থেকে টুইটারে অ্যাকাউন্ট খুলে তাঁর ভাবনার কথা জানালেন। 

তাঁর অভিনব ভাবনায় সাড়া মিলল ব্যাপক। ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ বিভিন্ন কাজে সঙ্গ দেওয়ার জন্য তাঁকে ভাড়া নিতে শুরু করলেন। কেউ বলেন, আসুন, আজ দুপুরে আমার সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজ করবেন আপনি। কেউ বলেন, আমার পাশে বসে একটু গান শুনবেন? চলে আসুন। আর এসব আপাত অকাজই হয়ে উঠল সেই যুবকের আয়-রোজগারের পথ। 

যুবকের নাম সোজি মোরিমোটো। বয়স ৩৯। তিনি ২০১৮ সালে টুইটারে অ্যাকাউন্ট খুলে এই অভিনব কাদায় অর্থ উপার্জন করতে শুরু করেছিলেন। এখন তাঁর টুইটারে ফলোয়ারের সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার। 

মুখে হাসি ঝুলিয়ে সোজি মোরিমোটো বলেন, ‘আমি একটু খাই, একটু পান করি আর খাবার সম্পর্কে সামান্য প্রতিক্রিয়া জানাই। এ ছাড়া আমি আর কিছু করি না।’ 

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, সোজির কাজকর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে টেলিভিশনে সিরিজ শুরু হয়েছে, তিনটি বই লেখা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছেন তিনি। 

এক সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘আমি হচ্ছি ভাড়ায় চালিত কিছুই না করা মানুষ। যাঁরা আমাকে ভাড়া নেন, তাঁরা কথা শুরু না করা অবধি আমি কথা বলি না।’ 

ছোটবেলায় খুব অকর্মণ্য ছিলেন সোজি। তাঁর পরিবারের মানুষ, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে সবাই বলত, ‘অকর্মার ঢেঁকি। কিছুই করে না।’ 

দিনের পর দিন এমন কথা শুনতে শুনতে এক সময় তাঁর মনে হয়, এই ব্যাপারটাকেই ব্যবসায়িক ধারণায় পরিণত করলে কেমন হয়? যথা ভাবনা তথা সিদ্ধান্ত। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন এবং টুইটারে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ শুরু করে দেন। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সোজি মোরিমোটোকে। 

সিবিএস নিউজকে তিনি বলেছেন, প্রতিদিন তিন হাজারের ওপর অনুরোধ পান সোজি। তিনি দিনে তিনটির বেশি অনুরোধ গ্রহণ করেন না। প্রতি অনুরোধের জন্য ৬৯ পাউন্ড করে ফি নেন। 

তবে হেঁজিপেঁজি যা খুশি তাই ধরনের কাজে ভাড়ায় যেতে রাজি নন সোজি। জাপানি এই যুবক এ পর্যন্ত ভাড়ায় গিয়ে মানুষকে ঘরদোর পরিষ্কার করতে সাহায্য করা, কাপড় কাঁচতে সাহায্য করা, ভুতুড়ে বাড়ি পরিদর্শন করতে যাওয়া ও নগ্ন হয়ে পোজ দেওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে গান গাওয়া অভাবী মানুষকে সাহায্য করার জন্য হিম শীতল ঠান্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেছেন, গভীর মনঃকষ্টে কাতর অনেক মানুষের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় বসে গল্প করেছেন, দূরে কোথাও ঘুরতে গেছেন। আবার নিঃসঙ্গ একাকী কোনো মানুষ, যার জন্মদিনে পাশে দাঁড়িয়ে কেক কাটার মতো কেউ নেই, তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে তিনি কেক কেটেছেন। সময় ও সঙ্গ দিয়েছেন। 

সংবাদমাধ্যম মিররকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সোজি বলেছেন, তিনি এক ব্যক্তির সঙ্গে হেলিকপ্টারে সঙ্গী হয়েছিলেন। আবার ডিজনি ল্যান্ডে ঘুরতে গিয়েছিলেন আরেকজনের সঙ্গে। ভাড়ায় গিয়ে একজন প্রতারকের সঙ্গে তিনি সময় কাটিয়েছেন। আবার তিনি হাসপাতালে গিয়ে এমন একজনের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন, যিনি জীবনের ওপর থেকে শ্রদ্ধা হারিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাঁকে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত