Ajker Patrika

উষ্ণ প্রস্রবণটি এত রং পেল কোথা থেকে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২১ জুন ২০২৩, ১২: ০১
Thumbnail image

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যানে গেলে দেখা পাবেন আশ্চর্য সুন্দর এক উষ্ণ প্রস্রবণের। নানা রঙের খেলা একে পর্যটকদের খুব প্রিয় এক গন্তব্যে পরিণত করেছে। কিন্তু কথা হলো, উষ্ণ প্রস্রবণটি এত রং পেল কোথা থেকে?

উষ্ণ প্রস্রবণটির নাম গ্র্যান্ড প্রিজম্যাটিক স্প্রিং। প্রিজম হলো এমন এক  স্বচ্ছ বস্তু, যার মধ্য দিয়ে সাদা আলোকরশ্মি যাওয়ার সময় সাতটি রঙে বিভক্ত হয়ে যায়। বুঝতেই পারছেন উষ্ণ প্রস্রবণে এই নানা ধরনের রংই একে এমন নাম পাইয়ে দিয়েছে।

ঝরনাটির মাঝখানটা নীল, চারপাশ ঘিরে আছে লাল থেকে সবুজ নানা বর্ণের আংটি বা রিং। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, ঝরনাটি এমন আশ্চর্য চেহারা পাওয়ার কারণ বর্ণিল সব ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব। হ্রদটির উষ্ণ, খনিজসমৃদ্ধ জলে এরা প্রচুর পরিমাণে আছে। ঋতুভেদে এই রং ফিকে হয়, গাঢ় হয়। ওই সময় জলাধারটিতে কী ধরনের ব্যাকটেরিয়ার প্রাচুর্য থাকে, এটি একটা বড় ব্যাপার। আবার পানির তাপমাত্রার কারণে বিভিন্ন ধরনের রিংয়ের জন্ম হয় এতে।

উষ্ণ প্রস্রবণের কেন্দ্রে পানির যে বুদ্‌বুদ চোখে পড়ে, তা প্রচণ্ড উত্তপ্ত। এখানকার তাপমাত্রা ১৮৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটের আশপাশে। চারপাশে পানির উষ্ণতা কিছুটা কম থাকে।

কখনো কখনো উষ্ণ প্রস্রবণটির ওপরে বাষ্পের একটি মেঘ ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়মাঝখানটায় পানি অত্যধিক গরম থাকায় বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়া কিংবা অণুজীবের পক্ষে এখানে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আর এ অংশটায় কমসংখ্যক অণুজীব টিকে থাকায় পানি থাকে অনেক পরিষ্কার, নীল। আর পুকুরটির চারপাশের আংটি বা রিংগুলোয় নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকে। 

ঝরনার প্রতিটি রিং বা আংটিতে আলাদা আলাদা তাপমাত্রা থাকে, ভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া সেখানে টিকে থাকে। আর এ কারণে নানা রং চোখে পড়ে পর্যটকদের।

উনিশ শতকের গোড়ার দিকে গ্র্যান্ড প্রিজম্যাটিক স্প্রিংয়ের কথা প্রথম শোনা যায় ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের মুখ থেকে। ১৮৩৯ সালের দিকে মিডওয়ে গেইসার বেসিন অতিক্রম করা ফার সংগ্রহকারীরাও ফুটন্ত একটি হ্রদের গল্প বলেন।

আপার গেইসার বেসিনের কেবল সাত মাইল উত্তরে বর্ণিল হ্রদটির অবস্থান১৮৭১ সালে হেইডেন এক্সপিডিশন এর নাম রাখে গ্র্যান্ড প্রিজম্যাটিক স্প্রিং। এর এক বছর আগে ওয়াশবার্ন-ল্যাংফোর্ড-ডোয়ানে এক্সপিডিশন এলাকাটি পরিদর্শন করে।

অর্থাৎ তাপমাত্রার ওঠানামা, চারপাশের পরিবেশ আর সূর্যের আলোর খেলা—সবকিছু মিলিয়ে বাহারি রঙে সেজে ওঠে উষ্ণ প্রস্রবণটি। ঝরনার জলে সাত রঙের খেলা দেখে আপনার মনে হতে পারে কোনো তৈলচিত্র বাস্তবে মূর্ত হয়ে উঠেছে। এমনকি হঠাৎ দেখে একে এই পৃথিবীর নয়, ভিনগ্রহের কিংবা কল্পলোকের কিছু একটা মনে হলে দোষ দেওয়া যাবে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যানে গেলে দেখা পাবেন আশ্চর্য সুন্দর এই উষ্ণ প্রস্রবণেরবেশির ভাগ ছবিতে অসাধারণ রূপে ঝরনাটিকে দেখা গেলেও কোনো কোনো পর্যটক আবার সেখানে গিয়ে কিছুটা হতাশ হন। বিপুল ধৈর্য নিয়ে, সঠিক সময়ের অপেক্ষা করে তবেই একটি দুর্দান্ত ছবি তোলা সম্ভব হয়। আর তাই একে সেরা চেহারায় দেখতে চাইলে বেশ কিছুটা সময় থাকতে হবে জায়গাটিতে। এমনকি ভাগ্য ভালো থাকলে লেক ঘিরে ওঠা বাষ্পের মেঘও দেখার সৌভাগ্য হয়ে যেতে পারে আপনার।

গবেষণায় উঠে এসেছে, ঝরনাটি এমন আশ্চর্য চেহারা পাওয়ার কারণ বর্ণিল সব ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীববিশেষজ্ঞরা প্রস্রবণটির খুব কাছে না যাওয়ারও পরামর্শ দেন দর্শনার্থীদের। কারণ পানির তাপমাত্রা কোন অংশে কেমন থাকে তা বোঝা একটু মুশকিল। উষ্ণ প্রস্রবণ ও গেইসার বেসিন ঘিরে একটি হাঁটা পথ আছে। এটি পর্যটকদের নিরাপদ দূরত্ব থেকে জায়গাটির সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ করে দেয়।   

ওপর থেকে দেখা গ্র্যান্ড প্রিজম্যাটিক স্প্রিংঅসাধারণ সৌন্দর্যের পাশাপাশি এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক এলাকাও। ৩০০ ফুট প্রশস্ত ও ১২১ ফুট গভীর প্রস্রবণটি মিনিটে ৫৬০ গ্যালন পানি ছাড়ে, যা একে ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যানের সবচেয়ে বড় উষ্ণ প্রস্রবণে পরিণত করেছে। গোটা পৃথিবীর মধ্যে এর অবস্থান তৃতীয়। তালিকায় গ্র্যান্ড প্রিজম্যাটিক স্প্রিংয়ের ওপরে আছে কেবল নিউজিল্যান্ডের ফ্রাইং প্যান লেক ও ডমিনিকার বয়লিং লেক।

উষ্ণ প্রস্রবণ ঘিরে থাকা পথটি ধরে হেঁটে সহজেই এর অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়মন্টানার পশ্চিম ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের আপার গেইসার বেসিনের কেবল সাত মাইল উত্তরে বর্ণিল হ্রদটির অবস্থান। জায়গাটি পরিচিত মিডওয়ে গেইসার বেসিন নামে। এখানকার ফেয়ারি ফলস ট্রেইলহেড থেকে আধ মাইলের কিছুটা বেশি পথ হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন বিচিত্র, বর্ণিল এই উষ্ণ প্রস্রবণে। আর একবার সেখানে পৌঁছালে মজে যাবেন নীল, লাল, হলুদসহ হরেক রঙের সৌন্দর্যে। 

সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, আনইউজুয়াল প্লেসেস, ডিসকভারিং মন্টানা ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত