পর্তুগাল ফুটবল

গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে নাক ভাঙার পর মুখে মাস্ক পড়ে খেলতে হচ্ছে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে খাওয়া ধাক্কাটা যেন এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এখন পর্যন্ত গোল করেছেন মাত্র ১টি, সেটিও পেনাল্টি থেকে। ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা ফ্রান্সের গোল ওই একটিই। মূলত ফরাসিরা এতদূর এসেছে প্রতিপক্ষের আত্মঘা

খেলার মাঠে কখনো যে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কাঁদেননি, তা নয়। ২০২২ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল হারার পর তাঁর কান্নাভেজা চোখের ছবি এখনো টাটকা। ইউরোতে গত রাতে আবারও অঝোরে কাঁদতে দেখা গেছে।

আমি রেকর্ডের পেছনে দৌড়াই না, রেকর্ড আমার পেছনে দৌড়ায়—কদিন আগে আল নাসরের জার্সিতে রেকর্ড গড়ার পর এমন পোস্ট দিয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। শুধু ক্লাব ফুটবলই নয়, আন্তর্জাতিক ফুটবলেও অসংখ্য রেকর্ড নিজের নামে লিখিয়েছেন রোনালদো। পর্তুগিজ তারকা ফুটবলারের ২০ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে গেছে গত রাতে।

বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রেকর্ড গড়ে চলেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আন্তর্জাতিক ফুটবল, ক্লাব ফুটবল সব জায়গাতেই রেকর্ড ভেঙে নতুন করে গড়ছেন তিনি। বিশ্বের যে প্রান্তেই খেলা হোক না কেন, ৩৯ বছর বয়সী রোনালদোর পা জোড়া চলে সমান তালে। সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরের হয়ে রেকর্ড গড়ার পুরস্কার এবার পেলেন এই তারকা ফুটবলা

ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ৫ বার খেলার সুযোগ পেয়ে ইকার ক্যাসিয়াসের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চবার খেলার রেকর্ডের মালিক আগে থেকেই ছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। অবশ্য দুটি টুর্নামেন্টে কোনো ম্যাচই খেলতে পারেননি ক্যাসিয়াস। সে যাই হোক, এবার স্পেনের কিংবদন্তি গোলরক্ষককে পেছনে ফেলে রেকর্ডের মালিক একাই হলেন রোনালদো। 

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ফিরলেন গতকাল। ফেরার ম্যাচে তাঁর দল আল নাসর জিতেছে। দল জেতার পরও ভক্ত-সমর্থকদের তোপের মুখে পড়েছেন পর্তুগিজ এই তারকা ফরোয়ার্ড। 

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ৩৯ বছর পূর্ণ করেছেন কদিন আগে। ম্যাচের ব্যস্ত সূচিও রয়েছে। তবে রোনালদোকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তাঁর ওপর ম্যাচ খেলার ধকল বয়ে যাচ্ছে। গোলমেশিন রোনালদো এখন যেন হয়ে গেলেন ‘হ্যাটট্রিক মেশিন।’ 

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বিশ্রামে থাকবেন, সেটা আগেই জানা গিয়েছিল। তবু পর্তুগালের জিততে কোনো বেগ পেতে হয়নি। সুইডেনকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছে পর্তুগিজরা। 

বায়ার্ন মিউনিখে খেলার পর থেকেই হ্যারি কেইনের সঙ্গে রেকর্ড শব্দটি যেন মিশে গেছে ওতপ্রোতভাবে। একের পর এক রেকর্ডে নাম লিখিয়েই চলেছেন তিনি। পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকা কেইন এবার করেছেন অন্যরকম এক ফিফটি। 

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো খেলতে পারবেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগেই। আগে থেকেই যে তাঁর ওপর ছিল নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানার খড়্‌গ। তবু আল নাসরের ম্যাচ থাকলে তিনি মাঠে না এসে কি পারেন! যদিও তাঁর দল আল নাসর জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি। 

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর গোল মানেই যেন আল নাসরের জয়। সৌদি প্রো লিগ, এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ—সব টুর্নামেন্টেই রোনালদো গোল পাচ্ছেন। একই সঙ্গে জিতছে আল নাসরও। 

ফিফা দ্য বেস্ট ২০২৩-এর পুরস্কার দূরে থাক, ফিফপ্রোর বর্ষসেরা একাদশেও জায়গা করে নিতে পারেননি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সেই রোনালদো ফিফা দ্য বেস্ট অনুষ্ঠানের এক সপ্তাহের ব্যবধানে জিতেছেন তিনটি পুরস্কার। 

বার্সেলোনায় লিওনেল মেসি কাটিয়েছেন প্রায় ২০ বছর। ক্লাব ক্যারিয়ারের অসংখ্য শিরোপা জেতেন বার্সার হয়েই। সেই মেসি এখন খেলছেন ইন্টার মায়ামিতে। শৈশবের ক্লাব বার্সার সঙ্গে মেসির আবার দেখা হওয়ার কিঞ্চিৎ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তবে ভক্ত-সমর্থকদের সেই মেসি-বার্সা পুনর্মিলনী দেখার আশা পূরণ হচ্ছে না। 

শিরোনাম দেখে হয়তো অনেকেই চমকে গেছেন। প্রশ্নটা শুনে চমকে গেছেন স্বয়ং ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার রোনালদো নাজারিও। নামের মিল থাকায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর প্রসঙ্গেই যে এসেছিল এমন প্রশ্ন। 

এল ক্লাসিকোতে লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দ্বৈরথ তো শেষ হয়ে গেছে আগেই। বার্সেলোনার জার্সিতে মেসি ও রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে রোনালদো—দুই তারকা ফুটবলারের মধ্যে চলত তুমুল প্রতিযোগিতা। দুজনের কেউই এখন নেই ইউরোপীয় ফুটবলে। 

২০২৩ সালটা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কাটিয়েছেন স্বপ্নের মতো। আন্তর্জাতিক ফুটবল, ক্লাব ফুটবল মিলিয়ে গত বছর সর্বোচ্চ ৫৪ গোল করেছেন রোনালদো। পর্তুগাল, আল নাসরকে জিতিয়েছেন অসংখ্য ম্যাচ। তবু বিদায়ী বছরের বর্ষসেরা দলে জায়গা হয়নি পর্তুগিজ এই ফরোয়ার্ডের। 

বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আন্তর্জাতিক বা ক্লাব ফুটবল-সব জায়গাতেই দলের জয়ে অবদান রাখছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই জিতে চলেছেন একের পর এক পুরস্কার।