Ajker Patrika

৯০ সেকেন্ডের ‘বেবি শার্ক’ ভিডিও থেকেই ৪০ কোটি ডলারের ব্যবসা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ২৫
ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি দেখা হয়েছে এই ভিডিওটি। ছবি: ইউটিউব
ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি দেখা হয়েছে এই ভিডিওটি। ছবি: ইউটিউব

বিশ্বজুড়ে শিশুদের প্রিয় গান বেবি শার্ক ডু ডু ডু। এ পর্যন্ত ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি দেখা হয়েছে এই ভিডিওটি। ভিউ ছাড়িয়েছে ১৬ বিলিয়নের বেশি। ২০১৬ সালের জুনে ইউটিউবে আসার পর এখনো পর্যন্ত জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে এই গানটি। শিশুরা প্রতিদিন এই গান শুনছে। এই গানের থিমে তৈরি হচ্ছে শিশুদের পোশাক, খেলনা, গৃহসজ্জা এবং কেকসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার।

৯০ সেকেন্ডের এই গানের ক্লিপটি প্রকাশের দিনটির স্মৃতিচারণ করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পিংকফংয়ের প্রধান নির্বাহী মি. কিম মিন-সক বলেন, ‘ক্লিপটি প্রকাশের সময় বুঝতেই পারিনি কি ঝড় আনতে চলেছে এই গানটি। আমরা আশা করিনি, এটি আমাদের অন্য কনটেন্ট থেকে আলাদা এবং এত জনপ্রিয় হয়ে যাবে।’

গানটি কতটা ‘ক্যাচি’—তা নিয়ে পিংকফংয়ের সিইও কিম মিন-সকও ভীষণ সচেতন। তিনি বলেন, ‘এটা যেন একটা কে-পপ গান। খুব দ্রুতগতির, ছন্দময় এবং আসক্তিকর। সুরটিতে একধরনের “জপের মতো” প্রভাব আছে, যা শিশুদের মনে রাখা সহজ করে।’

তবে গানটি প্রথমে প্রকাশের পর পরই হিট হয়নি। এটি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শিশুদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এর নাচের কোরিওগ্রাফি ব্যবহার শুরু হয়। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের নাচের ভিডিও অনলাইনে ছড়াতে থাকায় গানটি ভাইরাল হয়ে ওঠে।

কিম বলতে থাকেন, এর জনপ্রিয়তা এমন দ্রুত বাড়ছিল যে পিংকফং অফিসে একটা উৎসবের মতো পরিবেশের জন্ম হয়েছিল। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ২০২০ সালের নভেম্বর, ইউটিউবের সর্বাধিক দেখা ভিডিওর খেতাব দখল করে বেবি শার্ক ক্লিপটি।

কিম জানান, ভিডিওটি প্রকাশের পরের কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠানটির মোট আয়ের প্রায় অর্ধেকই এসেছে এই গান থেকে। নতুন কনটেন্ট ও পণ্যের বিস্তারের জন্য একধরনের লঞ্চপ্যাড হিসেবে কাজ করেছে গানটি।

তবে এই পথ চলা সহজ ছিল না।

২০১৯ সালে পিংকফংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তারা এক মার্কিন সুরকারের কাজ নকল করেছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি খারিজ করে দেয়। পিংকফং যুক্তি দিয়েছিল, তাদের সংস্করণটি পাবলিক ডোমেইনে থাকা একটি লোকগান থেকে তৈরি।

ধারণা করা হয়, বেবি শার্ক গানটির উৎপত্তি হয়েছে ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে। সামার ক্যাম্পগুলোতে এই গান গাওয়া হতো। গানটিতে বারবার ‘Baby shark, doo doo doo doo doo doo’ বলা হয়।

এটি শুধু বিশ্বের লাখো শিশুকে মুগ্ধই করেনি, বরং পিংকফংকে কয়েক শ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি ব্যবসায় পরিণত করেছে। কিম বলেন, ‘এখন ফিরে তাকালে দেখতে পাই, এটি ছিল আমাদের বৈশ্বিক যাত্রার এক বড় বাঁকবদল।’

সেই যাত্রায় আরও পিংকফং এক ধাপ এগিয়ে গেল গতকাল মঙ্গলবার। দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ারবাজারে পা রাখল এই কোম্পানিটি। যাত্রার প্রথম দিনই এই কোম্পানির শেয়ারমূল্য ৯ শতাংশের বেশি বেড়ে কোম্পানির মূল্য দাঁড়ায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

কিম জানান, ২০১০ সালে স্মার্টস্টাডি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় তাঁদের। শূন্য থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের উপযোগী ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করতেন তাঁরা।

প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিল মাত্র তিনজন। এর মধ্যে ছিলেন সিইও কিম মিন-সক এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ডংউ সন। কিম বলেন, ‘অফিসটা ছিল খুব ছোট। এতটাই ছোট যে তখন আমরা বেতন পাওয়ার কথাও ভাবিনি।’

এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১০০ কর্মীর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় এবং সহজ, শেখাভিত্তিক গেম ও কনটেন্টকে প্রাধান্য দেয়। আর তখনই বেবি শার্কের জন্ম।

২০২২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি পিংকফং নামে যাত্রা শুরু করে। শুরুর দিকে তাদের একটি কার্টুনে থাকা ‘প্রাণবন্ত ও কৌতূহলী এক শিয়াল’ চরিত্র থেকে এই নাম দেওয়া হয়।

বর্তমানে পিংকফংয়ের কর্মী প্রায় ৩৪০ জন। সদর দপ্তর সিউলে আর টোকিও, সাংহাই ও লস অ্যাঞ্জেলেসে রয়েছে কার্যালয়।

পিংকফংয়ের অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি বিবেফিন ও সিলুক দ্রুতই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি ‘বেবি শার্ক’-এর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল নয় তা প্রমাণ করা জরুরি বলে মনে করেন কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক মিন জুং কিম।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির একটি বড় সুবিধা, শিশুরা সাধারণত একই কনটেন্ট বারবার দেখতে ভালোবাসে।

কিম মিন-সক জোর দিয়ে বলেন, পিংকফং বেবি শার্কের গণ্ডি ছাড়িয়ে আরও বড় হতে পারবে। বর্তমানে বেবি শার্ক প্রতিষ্ঠানটির মোট আয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। অন্যদিকে বিবেফিন এরই মধ্যে এগিয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের মোট আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ এখন আসে এটি থেকে।

তবে অভিভাবকদের মধ্যে এ ধরনের ভিডিওগুলো নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

দুই সন্তানের বাবা সেলিম নাসেফ জানান, তিনি শিক্ষামূলক কনটেন্ট হিসেবে পিংকফংয়ের কাজকে প্রশংসা করেন। তবে তাঁর স্ত্রী মনে করেন, বেবি শার্ক ‘শিশুদের জন্য অতিরিক্ত উত্তেজনামূলক’। তবুও গানটি এড়ানো প্রায় অসম্ভব। তার তিন বছরের মেয়ের জন্মদিনের আয়োজনই হচ্ছে বেবি শার্ক থিমে।

কিম বলেন, পিংকফং বেবি শার্কের মতো আরেকটি বাণিজ্যিকভাবে শক্তিশালী চরিত্র তৈরি করতে পারবে কি না—তা এখনো স্পষ্ট নয়।

তিনি জানান, শেয়ারবাজারে প্রথম দিন প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৫২ মিলিয়ন ডলার তুলেছে। এই অর্থ দিয়ে চলচ্চিত্র ও চরিত্রভিত্তিক কনটেন্ট আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে।

প্রতিষ্ঠানটি ‘প্রযুক্তিনির্ভর’ কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবে গড়ে উঠতেও চায়। দর্শকদের দেখার ধরন ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে নতুন প্রকল্প সাজাতে চায় তারা।

সিইও কিম বলেন, ‘পিংকফং ইতিমধ্যেই অর্জন করেছে সেই সাফল্য, যা বহু নির্মাতা শুধু স্বপ্নেই দেখেন।’

কিন্তু এখন প্রতিষ্ঠানটিকে বিনিয়োগকারীদের দেখাতে হবে, তারা কেবল এক গানের জোরে টিকে থাকা কোনো প্রতিষ্ঠান নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ