Ajker Patrika

টেলিটকের প্রযুক্তিগত বৈষম্য নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মঙ্গলবার আয়োজিত মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মঙ্গলবার আয়োজিত মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটকের প্রযুক্তিগত বৈষম্য নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও অংশ নেন।

মানববন্ধনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, তরঙ্গ নিলামের ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই আন্দোলনের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। একের পর এক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে সরকারের সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটকও বিলুপ্ত করে দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালিদ আবু নাসির বলেন, ‘প্রযুক্তির উন্নয়নের বিপক্ষে আমরা নই। ৭০০ ব্যান্ডের তরঙ্গ ব্যবহারের বিপক্ষেও আমরা নই। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটককে বাইরে রেখে তরঙ্গ বরাদ্দের সিদ্ধান্তের আমরা প্রতিবাদ জানাই। বর্তমানে একটি প্রতিষ্ঠান একাই ৯০ শতাংশ লাভ করছে। অন্য একটি প্রতিষ্ঠান ৮ শতাংশ লাভে আছে। বাকি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ টেলিটক লোকসান গুনছে। এর মধ্যে যদি টেলিটককে পিছিয়ে রাখা হয়, তাহলে বাজারে প্রতিযোগিতা ধ্বংস হবে।’

মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৭০০ ব্যান্ডের তরঙ্গ টেলিটককে বরাদ্দ দিতে হবে।

এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম আন্তর্জাতিকভাবে মোবাইল কভারেজ ও ৫জি বিস্তারের জন্য ‘গোল্ডেন ব্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত। এই ব্যান্ডের মোট ৪৫ মেগাহার্টজের মধ্যে প্রথম ধাপে ২৫ মেগাহার্টজ নিলামের ঘোষণা এবং বাকি ২০ মেগাহার্টজ ভবিষ্যতে চাহিদাভিত্তিক বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত দেশের রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

সম্প্রতি বিটিআরসি ও সব অপারেটরের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় জানানো হয়, আগামী ১৪ জানুয়ারি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।

মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, অভিযোগ উঠেছে, সভায় এক বেসরকারি অপারেটর প্রকাশ্যে টেলিটকের জন্য কোনো ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ না রাখার আহ্বান জানিয়েছে। সরকারের নিজস্ব অপারেটরকে বাদ দিয়ে বিদেশি মালিকানাধীন অপারেটরদের সুবিধা দেওয়ার এই প্রস্তাব ‘বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ও দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজ। ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদেশি মোবাইল অপারেটররা মুক্তবাজারে সেবা দিলেও তখন কলচার্জ, ইনকামিং চার্জ, অব্যবহৃত ব্যালেন্স কেটে নেওয়া—এসব কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছিল।

এমন বাস্তবতায় স্বল্প খরচে জনবান্ধব মোবাইল সেবা দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে টেলিটক প্রতিষ্ঠিত হয়। টেলিটক শুরুতেই কলচার্জ কমিয়ে আনায় বিদেশি কোম্পানিগুলো তা করতে বাধ্য হয়। এটাই ছিল টেলিটকের প্রথম বড় অবদান। দেশে প্রথম অনলাইন ভর্তি আবেদন, চাকরির আবেদন, অনলাইন বিল পরিশোধের মতো জনবান্ধব সেবা চালু করে টেলিটক। বিদেশি অপারেটরদের যেখানে বিনিয়োগ ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি, সেখানে টেলিটক মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকায় সীমাবদ্ধ সুবিধায় দেশের মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে।

মানববন্ধনে বক্তারা জানান, ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম টেলিটকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি মোবাইল নেটওয়ার্কের সবচেয়ে শক্তিশালী কভারেজ ব্যান্ড, যা কম টাওয়ারে বিস্তৃত এলাকা কভার করতে পারে এবং দুর্গম ও গ্রামীণ অঞ্চলে স্থিতিশীল সিগন্যাল নিশ্চিত করে ৫জি বিস্তারের ভিত্তি তৈরি করে। রাষ্ট্রীয় নির্দেশনায় টেলিটক ইতিমধ্যে দুর্গম এলাকায় সেবা দিচ্ছে। কিন্তু সীমিত বিনিয়োগ ও কমসংখ্যক ব্যবহারকারী নিয়ে দেশব্যাপী মানসম্মত নেটওয়ার্ক বজায় রাখা কঠিন। টেলিটককে বঞ্চিত করা হলে গ্রামীণ জনগণ মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে, দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিদেশি অপারেটররা অতিরিক্ত বাজার সুবিধা পাবে। একই সঙ্গে সরকারি জরুরি সেবা বিঘ্নিত হতে পারে।

বক্তারা জানান, ৭০০ ব্যান্ড না পেলে বেশি টাওয়ার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তায় টেলিটকের অপারেটিং খরচ (পরিচালন ব্যয়) বাড়বে; যার প্রভাব গ্রাহকসেবার মান ও খরচ উভয় ক্ষেত্রেই পড়তে পারে।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম, গ্রিন পার্টির চেয়ারম্যান রাজু খান প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ