Ajker Patrika

এআই বিশ্বে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য আরও তীব্র করে তুলবে: জাতিসংঘ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ০৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সম্ভাবনা ঘিরে যতই উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাক না কেন, এর আড়ালে রয়েছে কিছু কঠিন বাস্তবতা। বিশেষ করে তথ্যনির্ভর বিশ্বে আগে থেকেই বঞ্চিত মানুষের ওপর এই প্রযুক্তির প্রভাব এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে এআই থেকে যে সুফল মিলবে, তার বেশির ভাগই ধনী দেশগুলো ভোগ করবে। মৌলিক চাহিদা পূরণ থেকে শুরু করে উন্নত প্রযুক্তিগত দক্ষতা—সব ক্ষেত্রেই বৈষম্য আরও বাড়তে পারে।

আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে এ পরিস্থিতিকে শিল্পবিপ্লব-পরবর্তী ‘মহা বিভাজন’-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে; যখন পশ্চিমা অনেক দেশ দ্রুত আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে যায় আর অন্য অনেক দেশ পড়ে পিছিয়ে।

কোম্পানি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এআই কীভাবে ব্যবহার করবে—এ প্রশ্ন প্রায় সর্বজনীন উদ্বেগের কারণ। এই প্রযুক্তি মানুষের কাজকে বদলে দিতে পারে, এমনকি কম্পিউটার ও রোবট দিয়ে কিছু কাজ প্রতিস্থাপনও হতে পারে।

কিন্তু এআই নিয়ে যে মনোযোগ-উৎপাদনশীলতা, প্রতিযোগিতা কিংবা প্রবৃদ্ধির দিকে—প্রতিবেদনের লেখকদের মতে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো এই প্রযুক্তি মানুষের জীবনে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে।

ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও বার্তায় প্রতিবেদনের প্রধান লেখক লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক মাইকেল মুথুকৃষ্ণ বলেন, ‘আমরা সাধারণত প্রযুক্তির ভূমিকা অতিরঞ্জিত করি। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, প্রযুক্তি নয়—মানুষই প্রথম অগ্রাধিকার।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব সম্প্রদায়ে এখনো দক্ষতা, বিদ্যুৎ-সংযোগ ও ইন্টারনেট সুবিধা সীমিত, অথবা যারা যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ বা জলবায়ু বিপর্যয়ে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন—তাদের জন্য বাদ পড়ার ঝুঁকি আরও বেশি। একই সঙ্গে এমন মানুষ অনেক সময় ‘অদৃশ্য’ থেকে যান তথ্যভান্ডারে। ফলে তারা কোনো নীতিনির্ধারণী হিসাব-নিকাশে ধরা পড়েন না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি সর্বব্যাপী প্রযুক্তি হিসেবে এআই উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে, নতুন শিল্প তৈরি করতে পারে এবং পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে এগিয়ে আসার সুযোগ দিতে পারে

কৃষিকাজে উন্নত পরামর্শ, কয়েক সেকেন্ডে এক্স-রে বিশ্লেষণ ও দ্রুত চিকিৎসা নির্ণয়, আরও কার্যকর আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন—এসব সুবিধা গ্রামীণ সম্প্রদায় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকার জন্য বড় সম্ভাবনা এনে দিতে পারে।

প্রতিবেদনটি বলছে, দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ ঝুঁকি বিশ্লেষণকারী এআই ব্যবস্থা দ্রুততর, ন্যায়সংগত ও আরও স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করতে পারে, যা তথ্যকে রূপান্তরিত করে ধারাবাহিক শিক্ষায় এবং জনস্বার্থে।

তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশেও ডেটা সেন্টারগুলো অত্যধিক পরিমাণে বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার করতে পারে। এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বাড়তি চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে গেলে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে পারে, পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।

এই প্রযুক্তি নানা নৈতিক, গোপনীয়তা ও সাইবার নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট উদ্বেগও তৈরি করছে।

গবেষকেরা দেখেছেন, হ্যাকাররা সাইবার হামলার কিছু অংশ স্বয়ংক্রিয় করতে এআই ব্যবহার করছে। পাশাপাশি ভুয়া ভিডিও বা ডিপফেকের সমস্যা রয়েছে, যা ভুল তথ্য ছড়াতে পারে বা অপরাধকে সহজ করতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরসহ এশিয়ার অনেক দেশ এআইয়ের সুবিধা কাজে লাগানোর মতো অবস্থানে আছে।

অন্যদিকে আফগানিস্তান, মালদ্বীপ ও মিয়ানমারের মতো দেশে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ কিংবা এআইয়ের গণনাশক্তি কাজে লাগাতে সহায়ক অন্যান্য সম্পদ যথেষ্ট নেই। এমনকি উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে আঞ্চলিক বৈষম্যের কারণে কিছু অঞ্চল পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের এখনো ইন্টারনেট সংযোগ নেই।

ইউএনডিপির এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফিলিপ স্কেলেকেনস বলেন, এই ব্যবধানগুলো কমানো না গেলে লাখ লাখ মানুষ সেসব ডিভাইস, ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা, ডিজিটাল পরিচয়পত্র, শিক্ষা ও দক্ষতা থেকে বঞ্চিত থাকবে; যেগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পূর্ণ অংশগ্রহণের জন্য অপরিহার্য। আর এতে তারা আরও পিছিয়ে পড়বে।

তথ্যসূত্র: এপি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও দুই মিত্র হারালেন মাদুরো, লাতিনে ভেনেজুয়েলার পাশে এখন কারা

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ