Ajker Patrika

এআই নিয়ে ট্রাম্পের নতুন পরিকল্পনা, ‘পক্ষপাত’ ও নিয়মনীতি হ্রাসে জোর

অনলাইন ডেস্ক
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনটি সংশ্লিষ্ট নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ছবি: এএফপি
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনটি সংশ্লিষ্ট নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ছবি: এএফপি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) উন্নয়নের জন্য একটি বিস্তৃত রোডম্যাপ বা পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবনকে উৎসাহ দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে, পাশাপাশি প্রশাসনের ভাষায় ‘দাপ্তরিক জটিলতা’ ও ‘আদর্শিক পক্ষপাতিত্ব’ দূর করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

২৮ পৃষ্ঠার এই ‘এআই অ্যাকশন প্ল্যান’-এ দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তিটির জন্য ৯০টিরও বেশি নীতিগত কর্মপরিকল্পনা রয়েছে, যা আগামী এক বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রিপ্টো-বিষয়ক প্রতিনিধি ডেভিড স্যাকস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি আমরা একটি এআই দৌড়ে আছি এবং আমরা চাই এই দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্র বিজয়ী হোক।’

ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, তাদের পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো আমেরিকার উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়ানো এবং চীনের চেয়ে এগিয়ে থাকা। তবে সমালোচকেরা একে আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিচালিত এবং করপোরেট স্বার্থে তৈরি পরিকল্পনা বলে আখ্যা দিয়েছেন।

পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, ফেডারেল সংস্থাগুলো যেন এমন নীতিমালাগুলো পর্যালোচনা ও বাতিল করে, যা এআই উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই এআই ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনটি সংশ্লিষ্ট নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এআই প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক রপ্তানিকে উৎসাহ দেওয়া হবে, আরেকটি আদেশের লক্ষ্য হবে, প্রশাসনের ভাষায় ‘ওয়োক’ বা আদর্শিক পক্ষপাতদুষ্ট এআই সিস্টেম নির্মূল করা।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ‘আমেরিকান এআই সিস্টেমের উন্নয়ন আদর্শিক পক্ষপাত কিংবা পরিকল্পিত সামাজিক এজেন্ডা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। সঠিক সরকারি নীতির মাধ্যমে, যুক্তরাষ্ট্র এআইতে নেতৃত্বের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারে এবং সব আমেরিকানের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে।’

স্যাকস আরও বলেন, পরিকল্পনার একটি অংশ হলো এআই প্রযুক্তি যাতে ‘দুর্বৃত্তদের দ্বারা অপব্যবহার বা চুরি’ না হয় তা নিশ্চিত করা এবং ‘উদীয়মান ও অপ্রত্যাশিত ঝুঁকির ওপর নজর রাখা।’

এআই অবকাঠামো ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণকে ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি উপায় হিসেবে দেখছে, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র চীনের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারে।

স্যাকস বলেন, ‘এআই একটি বৈপ্লবিক প্রযুক্তি, যার অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার ওপর গভীর প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এআইতে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে টিকে থাকা অত্যন্ত জরুরি।’

তবে সমালোচকেরা বলছেন, এই পরিকল্পনা মূলত বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য সুবিধা এনে দেবে।

এআই নাউ ইনস্টিটিউটের সহনির্বাহী পরিচালক সারা মায়ারস ওয়েস্ট বলেন, ‘হোয়াইট হাউসের এআই অ্যাকশন প্ল্যান প্রযুক্তি ধনকুবেরদের দ্বারা এবং তাদের জন্য রচিত হয়েছে এবং এটি বৃহত্তর জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে না।’

ওয়েস্ট আরও বলেন, ‘এই প্রশাসনের অবস্থান করপোরেট স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, অথচ সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যেই এআই দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন।’

২০২৩ সালে ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেন একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যেখানে ফেডারেল সরকারে এআই ব্যবহারে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছিল, যেটি ট্রাম্প জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই বাতিল করেন।

কয়েক দিনের মধ্যে ট্রাম্প আরেকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যেখানে দ্রুত এআই উন্নয়ন, আদর্শিক পক্ষপাত দূরীকরণ এবং আজকের এআই অ্যাকশন প্ল্যানের জন্য জনমত আহ্বান করা হয়।

প্রশাসন জানিয়েছে, বুধবার যে পরিকল্পনাটি প্রকাশ করা হয়েছে, তা ১০ হাজারের বেশি জনমতের ভিত্তিতে তৈরি।

বাইডেন প্রশাসনের এক সাবেক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনায় এমন সব সুরক্ষা ব্যবস্থা বাদ দেওয়া হয়েছে, যা আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা ও জনগণের আস্থাকে রক্ষা করত।

সাবেক বাণিজ্যসচিব জিনা রাইমন্ডোর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ জিম সিক্রেটো বলেন, ‘উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করা জরুরি, তবে দায়িত্বশীল নিরাপত্তাব্যবস্থা তুলে দিলে আমেরিকার এআই বিপ্লব একটি বেপরোয়া জুয়া হয়ে উঠতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তিসংগত নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই এআই প্রযুক্তির আগ্রাসী রপ্তানি চীনের হাত শক্তিশালী করে।’

গত মাসে ট্রাম্প মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট এনভিডিয়াকে তাদের উচ্চমানের এআই চিপ চীনে বিক্রি করার অনুমতি দেন। এর মাধ্যমে তিনি তাঁর প্রশাসনের আগের নিষেধাজ্ঞা উল্টে দেন, যেটিতে এনভিডিয়ার এইচ২০ চিপ বেইজিংয়ে বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা ছিল।

এআই নিয়ন্ত্রণ ইস্যুটি ছিল চলতি মাসে কংগ্রেসে পাস হওয়া ট্রাম্পের বিশাল বাজেট বিল নিয়ে আলোচনার একটি বড় বাধা।

বিলের প্রাথমিক খসড়ায় রাজ্যগুলোকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণে দশ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত আইনপ্রণেতারা বিল থেকে এই ধারা বাদ দেন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কৌশলে বিনিয়োগ সরাচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানি

বিমান বিধ্বস্ত: এক ঘণ্টা পর উদ্ধার হন পাইলট, তখনো বেঁচে ছিলেন

মোহাম্মদপুর থানায় ভুক্তভোগীকে হেনস্তা: চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার, ৩ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

‘ওসি হয়েও আমার কম দামি ফোন, দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই’, ভুক্তভোগীকে মোহাম্মদপুরের ওসি

রংপুরের ১০ কিমি সড়কে ৩৬৫ টন পাথর উধাও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত