Ajker Patrika

স্পটিফাইয়ে ১০ লাখবার শোনার পর জানা গেল গানগুলো এআই দিয়ে তৈরি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৫: ৪৫
শিল্পীদের গান অনৈতিকভাবে এআই প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। ছবি: মিডিয়াম
শিল্পীদের গান অনৈতিকভাবে এআই প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। ছবি: মিডিয়াম

গত মাসের (জুনে) শুরুতে ‘দ্য ভেলভেট সানডাউন’ নামের একটি ব্যান্ড জনপ্রিয় মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম স্পটিফাইয়ে প্রোফাইল তৈরি করে। দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তাদের গান। তবে পরে জানা যায়, এই ব্যান্ড পুরোপুরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি। গান, প্রচারণার ছবি ও ব্যাকস্টোরিসহ সবকিছুই তৈরি হয়েছে প্রযুক্তির সাহায্যে। চলতি মাসে স্পটিফাইয়ে ১০ লাখেরও বেশি স্ট্রিমিং হয়েছে ‘এই নতুন ব্যান্ডের গানগুলো।

প্রকৃত পরিচয় গোপন রেখে ‘ফ্লোটিং অন একোজ’ এবং ‘ডাস্ট অ্যান্ড সাইলেন্স’ নামে জুন মাসে দুটি অ্যালবাম প্রকাশ করে ব্যান্ডটি। তাদের সংগীতধারা জনপ্রিয় ব্যান্ড ক্রসবি, স্টিলস, ন্যাশ অ্যান্ড ইয়ংয়ের ফোক (লোকগীতি) ঘরানার কাছাকাছি বলে ধরা হয়।

এদিকে এক ব্যক্তি নিজেকে ব্যান্ডের ‘অ্যাজাংক্ট সদস্য দাবি করে জানান, ভেলভেট সানডাউন গান তৈরি করতে ‘সুনো’ নামের একটি জেনারেটিভ এআই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছে। এরপর ব্যান্ডটির পক্ষ থেকে প্রথমে তা অস্বীকার করা হলেও, পরে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ব্যান্ডটি ‘গানগুলো সম্পূর্ণ মানব শিল্পী দিয়ে নয়, আবার পুরোপুরি যন্ত্রও দিয়েও তৈরি নয়, বরং এদের মাঝামাঝি কিছু।’

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংগীৎজগতে স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই-নির্ভর গানগুলো স্পষ্টভাবে চিহ্নিত না হলে শ্রোতারা বিভ্রান্ত হতে পারেন।

আইভার্স অ্যাকাডেমির প্রধান নির্বাহী রবার্তো নেরি বলেন, ‘যেসব এআই ব্যান্ড মানুষের সম্পৃক্ততা ছাড়াই কোটি শ্রোতার কাছে পৌঁছাচ্ছে, তা স্বচ্ছতা, স্বত্ব ও সম্মতির দিক থেকে গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।’

ব্রিটিশ ফোনোগ্রাফিক ইন্ডাস্ট্রির (বিপিআই) প্রধান কৌশল কর্মকর্তা সোফি জোনস বলেন, ‘মানব সৃষ্টিশীলতার সহায়ক হিসেবে এআইয়ের ব্যবহার আমরা সমর্থন করি, তবে তা যেন সৃষ্টিশীলতাকে প্রতিস্থাপন না করে। তাই আমরা চাই, শুধু এআই দিয়ে তৈরি সংগীত অবশ্যই চিহ্নিত করে দেওয়া হোক।’

অন্যদিকে, সংগীত গবেষক ও লেখক লিজ পেল্লি বলেন, শিল্পীদের গান অনৈতিকভাবে এআই প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। তিনি ২০২৩ সালের এক ঘটনা উল্লেখ করেন, যেখানে দ্য উইকএন্ড ও ড্রেকের কণ্ঠস্বর নকল করে তৈরি একটি এআই গান টিকটক, ইউটিউব ও স্পটিফাইতে আপলোড করা হয়েছিল।

ভেলভেট সানডাউনের গান তৈরির জন্য ব্যবহৃত এসআই কী ধরনের সংগীত দিয়ে প্রশিক্ষিত, সে ব্যাপারে কোনো স্বচ্ছতা নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে স্বাধীন শিল্পীরা ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করছেন অনেকেই।

ফ্রান্সভিত্তিক অনলাইন মিউজিক স্ট্রিমিং সার্ভিস ডিজারের প্রধান উদ্ভাবন কর্মকর্তা অরেলিয়েন হেরো বলেন, ‘আমরা এআই শনাক্তকারী সফটওয়্যার ব্যবহার করি এবং গানগুলো ট্যাগ করে থাকি।’ তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে এআই গানকে ‘নতুন বাদ্যযন্ত্র’ হিসেবে বিবেচনা করা হলে ট্যাগিং তুলে নেওয়ার চিন্তাও করা যেতে পারে।

তবে ডিজার সম্প্রতি জানিয়েছে, তাদের প্ল্যাটফর্মে এআই সৃষ্ট সংগীতের প্রতি ১০টি স্ট্রিমের মধ্যে ৭টিই জাল বা প্রতারণামূলক।

স্পটিফাই এখনো পর্যন্ত এআই সংগীত আলাদাভাবে চিহ্নিত করে না। এমনকি তারা আগেও ‘ঘোস্ট আর্টিস্ট’ নামের ভুয়া শিল্পীদের তৈরি স্টক মিউজিক প্লেলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করায় সমালোচিত হয়েছে।

বর্তমানে ব্রিটেনে এমন কোনো আইন নেই, যা স্ট্রিমিং সাইটগুলোকে এআই-সৃষ্ট গান স্পষ্টভাবে শনাক্ত করতে বাধ্য করে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার জন্য কঠোর আইনি কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এআই দিয়ে তৈরি মিউজিক সংগীত মানব শিল্পীদের উপার্জনের পথে বাধা না হয়।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত