Ajker Patrika

২১ বছর বার্সায় যে রূপকথা লিখেছেন মেসি

আরমান হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২১, ১৫: ৫৭
২১ বছর বার্সায় যে রূপকথা লিখেছেন মেসি

রোজারিও থেকে বার্সেলোনা। গল্পটা ২১ বছরের। গল্পের প্রেক্ষাপটে একাধিকবার পরিবর্তন এসেছে। তবে  মূল চরিত্র বদলায়নি এই একুশ বছরে। এই সময়ে বার্সেলোনার পথচলার সঙ্গে লিওনেল মেসির মহীরুহ হয়ে উঠার গল্পটা এতটাই দুর্দান্ত ছিল।

গল্পের শুরুটা হয়েছিল ২০০০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। এরপর কেটেছে ৭ হাজার ৬২৮ দিন।  কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী হয়তো ধরেই নিয়েছিল মেসির ক্যারিয়ারের শুরুর মতো  শেষটাও রাঙাবেন বার্সার জার্সি গায়ে। কিন্তু হলো না। দুই পক্ষের প্রবল ইচ্ছা থাকার পরও আর্থিক ও কাঠামোগত সমস্যায় বার্সায় মেসি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে গেল।

ন্যাপকিন পেপারে চুক্তির মধ্য দিয়ে বার্সার বয়সভিত্তিক দলে মেসি অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল । তিন বছর বয়সভিত্তিক দলে খেলার পর ২০০৩ সালে ১৬ বছর চার মাস ২৩ দিন বয়সে এক প্রীতি ম্যাচ দিয়ে বার্সার হয়ে খুদে জাদুকরের অভিষেক। পরের বছরই তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয় অফিশিয়াল ম্যাচে। বয়সে যত পরিণত হন, মেসির ওপরে ওঠার সিঁড়িগুলো যেন আরও মসৃণ হয়।

২০০৫ সালে ইয়োহান গাম্পার ট্রফিতে ১৮ বছরের মেসির খেলা দেখে জুভেন্টাসের তখনকার কোচ  ফাবিও কাপেলা বলেছিলেন, ‘এত কম বয়সে এমন দক্ষ ফুটবলার আগে দেখিনি!’ শুধু কাপেলা কেন, ২০০৫ সালে রোনালদিনহো ব্যালন ডি অর জেতার পর বলেছিলেন, ‘আমাকে যে বিশ্বসেরা ফুটবলারের পুরস্কার দেওয়া হলো, আমি তো বার্সেলোনারই সেরা না। আমাদের সেরা লিও মেসি।’

পরের বছরে মেসির সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারে কালো মেঘের ঘনঘটা। চোটে পড়েন বার্সা ফরোয়ার্ড। ২০০৬ থেকে ২০০৮ কয়েক দফায় আট মাসের মতো মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। বার্সেলোনা তখন ‘মায়ের মমতায়’ আগলে রাখলেন মেসিকে। সার্বক্ষণিক ফিজিও থেকে শুরু করে খাদ্যের তালিকা, এমনকি দৈনন্দিন জীবনের ছক তৈরি করে দিল বার্সা। ধীরে ধীরে মেসি তাঁর আগের ছন্দ ফিরে পেতে শুরু করলেন।

পরের গল্পটা শুধুই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আর সময়ের আরেক মহাতারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের রোমাঞ্চকর এক লড়াই। আর ন্যু ক্যাম্পের সবুজ গালিচায় ফুটবল সৌন্দর্য উপহার দিয়ে লিখে চলা একের পর এক সাফল্যের উপাখ্যান।

সব মিলিয়ে ১০ লা লিগা, চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ,  সাতটি কোপা দেল রে, আটবার স্প্যানিশ সুপার কাপ, তিনটি উয়েফা সুপার কাপ, তিনটি ক্লাব বিশ্বকাপ বার্সেলোনার শোকেসে থাকা সব ট্রফিতে লেগে আছে মেসির ফুটবলীয় ঐশ্বর্যের ছাপ। বার্সার হয়ে মেসির এই দলগত অর্জনের সাক্ষী ৭৭৮ ম্যাচ, ৬৭২ গোল আর ৩০৫ অ্যাসিস্ট।

বার্সার জার্সিতে দলীয় অর্জনের মতো  ব্যক্তিগত অর্জনের ঝুলিও তাঁর যথেষ্ট সমৃদ্ধ। ২০০৯ সালে বার্সাকে ট্রেবল জিতিয়ে মেসি জিতে নেন ক্যারিয়ারে প্রথম ব্যালন ডি’অর।  ২০১০ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেসির হাতে ওঠে ব্যলন ডি অর। পরের আরও চারবারসহ সর্বোচ্চ ছয় ব্যালন ডি’অর মেসি জিতেছেন বার্সার জার্সিতেই। ব্যক্তিগত অর্জন আর ক্লাবের হয়ে অর্জন, মেসি তাঁর ২১ বছরের বার্সেলোনা-ক্যারিয়ারে যা করে দেখিয়েছেন, ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসেই সেটি অদ্বিতীয়। মেসি বার্সার জার্সিতেই নিজেকে এমনই উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে উচ্চতায় আর কোনো ফুটবলার না যাওয়া পর্যন্ত এটা রূপকথা হয়েই থাকবে।

মেসি-বার্সার এই সম্পর্কটা ২০১৯ সাল পর্যন্ত রেললাইনের মতোই পাশাপাশি চলছিল। তবে গত বছর সেই সম্পর্কের সুরটা হঠাৎ কেটে যেতে বসে! বার্সা ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন মেসি, চুক্তির বাধ্যবাধকতায় যেতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। মেসি না ছাড়লেও তখনকার  ক্লাব সভাপতি  জোসেপ মারিও বার্তেমেউ অবশ্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। অবশেষে গত জুনের শেষ দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে বার্সার সঙ্গে মেসির চুক্তি শেষ হয়। এরপর থেকেই আর্জেন্টাইন তারকার চুক্তি নবায়ন নিয়ে চলছিল নানা গুঞ্জন আর অনুমান।

স্প্যানিশ পত্রিকা স্পোর্ত তো লিখেই দিয়েছিল, অর্ধেক বেতনে আগামী পাঁচ বছর মেসি বার্সেলোনায় থাকছেন। দুই দিন আগেও আরেকটি স্প্যানিশ পত্রিকা মার্কা লিখেছিল, বার্সার সঙ্গে মেসির চুক্তি সময়ের ব্যাপার মাত্র।

গতকাল দিনভর মেসির বার্সা চুক্তি নিয়ে চলেছে নানা আলোচনা। রাতে সেটি মোড় নিল চরম নাটকীয়তায়। আর সেই নাটকের শেষ দৃশ্যে বাজল বিদায়ের সুর। বার্সা থেকে মেসির বিদায়ের সুর। কাতালান রাজ্য থেকে আর্জেন্টাইন রাজার বিদায়ের সুর। ন্যু ক্যাম্প থেকে ফুটবল জাদুকরের বিদায়ের সুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোবাইল হাতে ধোঁয়ার ভেতর থেকে হেঁটে বেরিয়ে আসেন রমেশ, ভিডিও প্রকাশ

ইরানের জন্য ইসরায়েলকে বিসর্জন দেবে রাশিয়া?

রাস্তায় নারীকে চড় মেরে বাইকচালক বললেন, ‘নিজের দেশে ফিরে যাও!’

নেতানিয়াহু বাংকারে লুকিয়ে, ট্রাম্পের একটি ফোনকলই যথেষ্ট: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইরানের ভান্ডারে কত ক্ষেপণাস্ত্র আছে—কত দিন যুদ্ধ চলবে এতে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত