Ajker Patrika

যে কারণে চীন থেকে ফেরা হলো না ব্রাজিলের অস্কারের

ক্রীড়া ডেস্ক
Thumbnail image

২০১৬ সালের ডিসেম্বর। হঠাৎ আলোচনায় চলে এলো চাইনিজ সুপার লিগ (সিএএসএল)। প্রবেশ করল এক সোনালি যুগেও। হবেই না কেন! বড় বড় তারকা এনে সবার চক্ষু ছানাবড়া করে দিয়েছিল চাইনিজরা। এ মৌসুমে টাকার বস্তা নিয়ে একের পর তারকা কিনে সৌদি প্রো লিগ যেভাবে ইউরোপ ফুটবলের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিলেন, সাত বছর আগে তেমনটাই করেছিল সিএএসএল। 

পাওলিনহো, রামিরেস, এজেকুয়েল লাভেজ্জি, জার্ভিনহো, হাল্ক, বুরাক ইলমাজ, জ্যাকসন মার্টিনেজদের মতো তারকারা চলে এলেন চাইনিজ ফুটবলে। তাদের সঙ্গে শিগগিরই সাক্ষাৎ হলো কার্লোস তেভেজ, অ্যাক্সেল উইটসেল, হাভিয়ের মাশ্চেরানো, ইয়ানিক কারাসকো ও আলেজান্দ্রো পাতোর। এলেন ফাবিও কানাভারো, লুইস ফেলিপে স্কলারি, ম্যানুয়েল পেল্লেগ্রিনি ও আন্দ্রে ভিলাস-বোয়াসের মতন হাই প্রোফাইল কোচরা। 

অস্কার তখন চেলসিতে পঞ্চম মৌসুমের মাঝখানে। ব্লুজদের হয়ে তত দিনে খেলে ফেলেছেন ২০০-এর বেশি ম্যাচ। জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগ ও ইউরোপা লিগ। ক্যারিয়ারের উত্তুঙ্গ সময় কাটছে ব্রাজিলিয়ান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের। বয়সই বা কী এমন; মাত্র ২৫। ব্রাজিলের হয়ে খেলে ফেলেছেন ৪৮ ম্যাচ। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ঘরের মাঠ মারাকানায় জার্মানির বিপক্ষে ব্রাজিল যে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল সে ম্যাচে স্বাগতিকদের হয়ে শেষ মুহূর্তে একমাত্র গোলটি করেছিলেন অস্কার। তাঁর প্রতি সেলেসাও ও চেলসি ভক্ত-সমর্থকদের আশাও ছিল আকাশচুম্বী। ওই সময় ব্রাজিলে অস্কারকে ভাবা হয়েছিল জিকো ও কাকার উত্তরসূরি। 

কিন্তু সব যেন মিলিয়ে গেল মুহূর্তেই। চীনের ক্লাব সাংহাই পোর্ট থেকে এলো বিশাল এক প্রস্তাব। সেই প্রস্তাব আর ফেলতে পারেননি অস্কার। ২০১৭ সালে চলে গেলেন চীনের ফুটবলে। সময়ের ব্যবধানে চাইনিজ ফুটবলের সেই জোয়ার থেমেছে। লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেলেন অস্কারও। এরপর চীনের ফুটবলে কেমন কাটল তাঁর? দেখতে দেখতে সাত বছর সাংহাইয়ে কাটিয়ে দিলেন অস্কার। 

ব্রাজিলের জার্সিতে অস্কার। ছবি: এএফপিআরেকটু ভালো ফুটবল ও অর্থের খোঁজে চীনে পাড়ি জমিয়েছিলেন অস্কারসহ অনেক নামী ফুটবলার। কিন্তু সেটা কী সম্ভব হয়েছে? অস্কারের বয়স এখন ৩২। ২০১৫ সালের পর থেকে তাঁকে আর দেখা যায়নি ব্রাজিলের জার্সিতে। এই তারকার বেশ কয়েকজন ব্রাজিলিয়ান সতীর্থ পরে ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার ফুটবলে ফিরেছিলেন। পাউলিনহো তো পরে বার্সেলোনায় ফিরে ব্রাজিলের হয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপও খেলেছেন। তবে ফেরা হয়নি অস্কারের। ইউরোপের আধুনিক ফুটবলে যেন ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন তিনি। এখনো খেলে যাচ্ছেন চীনে। ওখানেই যেন তাঁর ঘরবাড়ি। সাংহাইয়ের হয়ে সাত বছরের ক্যারিয়ারে ৪টি লিগ জিতেছেন অস্কার। দলটির অধিনায়কও তিনি। সাংহাইয়ের হয়ে লিগে ১৫০ ম্যাচে ৪৪ গোল ও সব মিলিয়ে চীনের ফুটবলে ২০৭ ম্যাচে করেছেন ৬১ গোল। 
 
ট্রান্সফার মার্কেট জানাচ্ছে, অস্কারের বর্তমান মার্কেট মূল্য ৫ মিলিয়ন ইউরো, যেখানে ২০১৫ সালে তাঁর সেই মূল্য ছিল ৪০ মিলিয়ন ইউরো। সাম্প্রতিক সময়ে চীন থেকে ফেরার কথাও উঠেছিল তাঁর। বেশ কয়েকটি ক্লাবে যাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছিল। তার একটি ফ্লেমেঙ্গো। ২০২৩ সালের শুরুতে চাইনিজ ফুটবলের মৌসুম বন্ধ থাকাকালীন অস্কারকে ধারে নিতে চেয়েছিল ব্রাজিল জায়ান্টরা। ক্লাবটির কোচ ভিটর পেরেইরা এ ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘আমি তাকে (অস্কার) ব্রাজিলে ফেরাতে চেয়েছিলাম। আমাদের বেশ আন্তরিক আলোচনা হয়েছিল। সেই চুক্তি হয়েই যেত। কিন্তু চাইনিজরা না করে দেয়। তারা তাকে হারানো নিয়ে ভয়ে ছিল। তাকে ধরে রাখতে প্রস্তুত ছিল।’ 

চীনের এই ভয় থেকেই কী তবে অস্কারের ফেরা হয়নি? ভবিষ্যতে আদৌ তাঁর ইউরোপ বা লাতিন ফুটবলে ফেরা হবে তো? চাইনিজ ফুটবলে অস্কার অঢেল টাকা পেয়েছেন বটে, তবে হারিয়েছেন ভক্ত-সমর্থক। ব্রাজিল হারিয়েছে এক সম্ভাবনাময়ী তারকাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত