Ajker Patrika

বদলে যাচ্ছে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ভেন্যু

ক্রীড়া ডেস্ক
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১: ৩৩
Thumbnail image

অর্ধ যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট এখন প্রায় যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যেকোনো সময় ইউক্রেনের ওপর হামলা চালাতে পারে রাশিয়া।

দুই দেশের এই দা-কুমড়া সম্পর্কের প্রভাব পড়তে পারে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে। রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গের গাজপ্রম অ্যারেনায় ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই হওয়ার কথা। 

কিন্তু দুই দেশের যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ প্রতিযোগিতার আয়োজক উয়েফার। সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ফাইনাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছে তারা। 

সমর্থকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফাইনালের ভেন্যু পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত উয়েফা। তা ছাড়া কয়েকটি দেশ রাশিয়া থেকে ম্যাচ সরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে উয়েফাকে। 

যুক্তরাজ্যের সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রী ট্রেসি ক্রুস বিসিবি স্পোর্টকে বলেছেন, ‘উয়েফার উচিত যত দ্রুত সম্ভব ফাইনাল সরিয়ে নেওয়া।’ 

ইউরোপের বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম বলছে, ইতোমধ্যে ফাইনালের ভেন্যু বদলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে উয়েফা। ফলে টানা তিনটি ফাইনাল হচ্ছে না নির্ধারিত ভেন্যুতে। করোনার প্রার্দুভাবে গত দুটি আসরের ফাইনাল হয়েছে পর্তুগালের লিসবন ও পোর্তোয়। 

আগামী ২৮ মে সেন্ট পিটার্সবার্গে ফাইনাল ম্যাচ আয়োজনের কথা রয়েছে। বিবিসির দাবি, ফাইনালের নতুন ভেন্যু হতে পারে লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম। সেক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় স্তরের লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের প্লে-অফ ও তৃতীয় স্তরের ম্যাচগুলো ওয়েম্বলি থেকে সরিয়ে অন্যত্র নেওয়া হবে। 

উয়েফাকে ভাবতে হচ্ছে উয়েফা যুব চ্যাম্পিয়নস লিগের দিনামো কিয়েভ ও স্পোর্টিং লিসবন ম্যাচ নিয়েও। ম্যাচটি ২ মার্চ ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হওয়ার কথা। 

ইউরোপা লিগেও ইউক্রেন ও রাশিয়ার দুটি দল প্রতিনিধিত্ব করছে। ঝামেলা হচ্ছে তা নিয়েও। 

ইউক্রেনে রাশিয়ান দূতাবাসের সামনে চলছে পুতিনবিরোধী বিক্ষোভএ ছাড়া আগামী মাসে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সূচিও আছে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ২৪ মার্চ পোল্যান্ডকে আতিথেয়তা দেওয়ার কথা রাশিয়ার। রাশিয়ানরা সেই ম্যাচ জিতলে জিতলে সুইডেন কিংবা চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে খেলতে হবে ২৯ মার্চ। প্লে-অফের লড়াইয়ে আছে ইউক্রেনও। যদিও ঘরের মাঠে ম্যাচ নেই তাদের। 

ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার শীতল সম্পর্ক ১৯৯১ সাল থেকে; সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভক্ত হওয়ার পর। পশ্চিম সীমান্তে প্রতিবেশী ইউক্রেনকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হিসেবে রাশিয়া চেয়েছিল নিজের অনুগত রাখতে। যেমনটি রয়েছে অন্যান্য বেশির ভাগ সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলো। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলও। ২০০৪ সালে বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইউক্রেনের তৎকালীন রুশপন্থি প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসলে পশ্চিমের গণতান্ত্রিক দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চোখ পড়ে ইউক্রেনের ওপর। 

প্রায় ১০ বছর শক্ত হাতে দেশ চালালেও শেষ রক্ষা হয়নি ইয়ানুকোভিচের। গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। কিয়েভ চলে যায় পশ্চিমের সমর্থনপুষ্ট গণতন্ত্রপন্থিদের হাতে। এরপর দেশটি আর একদিনের জন্যও শান্তিতে ছিল না। 

ইয়ানুকোভিচের পতনের ২ দিনের মাথায় রুশ সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে রাশিয়া। একসময় ক্রিমিয়া রাশিয়ার অংশ ছিল—সেই যুক্তিতে ভ্লাদিমির পুতিন সামরিক অভিযানের মাধ্যমে উপদ্বীপটিকে আবার নিজ দেশের অংশ করে নেন। 

এতেই ক্ষান্ত হননি পুতিন। ইউক্রেনের রুশভাষী অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে কিয়েভবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সহায়তা করেন তিনি। সীমান্তবর্তী এলাকায় বিপুল সংখ্যক সেনা সমাবেশ ঘটান। প্রতিনিয়ত চাপে রাখেন ইউক্রেনের পশ্চিমাপন্থি সরকারকে। 

এদিকে, ইউক্রেনকে রক্ষায় সহায়তার হাত বাড়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। কেননা, গণআন্দোলনের সময়ই রাশিয়ার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে চোখ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল ইয়ানুকোভিচবিরোধী দলগুলো। ক্ষমতায় আসার পর তা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তারা। 

রুশবিরোধী বা পশ্চিমাপন্থি হওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সোভিয়েতবিরোধী সামরিক জোট ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হলে এর প্রতিবাদ করেন পুতিন। তিনি একে রাশিয়ার নিরাপত্তা-স্বার্থে চরম আঘাত হিসেবে মনে করেন। পুতিন ক্ষিপ্ত হয়ে পুরো ইউরোপ অস্থির করে তোলার হুমকি দিয়ে বসেন। ক্রিমিয়া, বেলারুশ ও মোলদোভায় নতুন করে সেনা সমাবেশ ঘটান তিনি। এরপর শুরু হয়ে যায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বাকযুদ্ধ। কেউ কাউকে সামান্যতম ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে প্রতিদিনই। 

সবকিছুর প্রভাব পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত