Ajker Patrika

শ্রীলঙ্কা মুশফিকের এত ‘প্রিয়’!

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ২৬ মে ২০২১, ১৪: ৩০
শ্রীলঙ্কা মুশফিকের এত ‘প্রিয়’!

ঢাকা: এমন নয় যে তাঁর ব্যাট নিয়মিত হাসতে জানে না। তবে বাংলাদেশ দল বিপদে পড়লে যেন একটু বেশিই হাসে তাঁর ব্যাট। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে ছোটখাটো গড়নের মুশফিকুর রহিমও হয়ে ওঠেন বড় ত্রাতা। কালও ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন তিনি। ৭০৫ দিন পর মুশফিক পেয়েছেন আরাধ্য ‘১০০’।

প্রতিপক্ষ হিসেবে শ্রীলঙ্কাকে পেলে মুশফিকের ব্যাট একটু বেশিই চওড়া হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তেই ব্যাটিংয়ে ফুল ফোটানোটা ‘অভ্যাসে’ পরিণত করে ফেলছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।

‘প্রিয়’ প্রতিপক্ষই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা। টেস্টে তাঁর প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটা এই লঙ্কানদের বিপক্ষে, ২০১৩ সালে। সীমিত ওভারের দুই সংস্করণে নিজের সর্বোচ্চ দুটি ইনিংসও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দুবাইয়ে ২০১৮ এশিয়া কাপে ওয়ানডেতে ১৪৪, টি–টোয়েন্টি সংস্করণে ২০১৮ নিদহাস ট্রফিতে অপরাজিত ৭২ রান। এই তিন ইনিংসই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে তিনটি গৌরবময় সাফল্য।

কুশল পেরেরাদের বিপক্ষে মুশফিক তাঁর সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন এই ওয়ানডে সিরিজেও।

প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো ৮৪ রানের ইনিংস এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। সেঞ্চুরি মিসের সেই আফসোস মিটিয়ে দিয়েছেন এক দিন পরেই। কাল ৭০৫ দিন পর মুশফিক অধরা সেঞ্চুরিটা অবশেষে কাল পেলেন।

দুই ওয়ানডেতেই মুশফিককে খেলতে হয়েছে বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতেই। টপ অর্ডার দ্রুত ভেঙে পড়ার পর একদিকে যেমন তাঁকে সামলাতে হয়েছে বিপর্যয়, অন্যদিকে বাড়িয়ে নিতে রানের গতিও। দুইবারই তিনি পাশে পেলেন ‘ভায়রা ভাই’ মাহমুদউল্লাহকে। প্রথম ওয়ানডেতে দুজন মিলে করেছিলেন ১০৭ রান। কাল একই পঞ্চম উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেছেন ৮৭ রান। টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ২ উইকেটে ১৫ তোলার পর উইকেটে আসেন মুশফিক।
দলের বেশির ভাগ সতীর্থ ব্যাটসম্যানকে যেখানে রান তুলতে বেগ পেতে হয়েছে, সেখানে মুশফিক বেশ সাবলীল ব্যাটিংয়ে তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি। তিন অঙ্ক ছুঁতে লেগেছে তাঁর ১১৪ বল। ঝকঝকে ইনিংসটি সাজিয়েছেন ১০ চারে। ১০ বাউন্ডারির ৯টিই এসেছে ফিফটি করার পর। ফিফটি করতে লেগেছিল ৭০ বলে। সেখান থেকে সেঞ্চুরি পেতে লেগেছে আর ৪৪ বল। ইনিংসে ছক্কা নেই একটিও।

বিশেষ করে গত তিন বছর বাংলাদেশের সঙ্গে খেলা হলে শ্রীলঙ্কার ‘প্রধান শত্রু’ হয়ে উঠেছেন মুশি। ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত ৯ ওয়ানডে খেলেই তিনি কুশল মেন্ডিসদের বিপক্ষে করেছেন ৬৩৮ রান। গড়টাও ঈর্ষণীয়–৭৯.৭৫।

অথচ ২০০৬ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এর প্রায় তিন গুণ ওয়ানডে (২১টি) খেললেও এত রান করতে পারেননি–৩৫৪। কাল এই ইনিংস খেলার পথে মুশফিক ছাড়িয়ে গেছেন সাকিব আল হাসানকে। এখন ওয়ানডেতে দেশের হয়ে তাঁর ৬৫৫৩ রানই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

গত পাঁচ বছরে চার নম্বর পজিশনের রানের হিসাব করলে মুশফিক বিশ্বের মধ্যেই উজ্জ্বল। এই পজিশনে তাঁর চেয়ে বেশি রান করতে পেরেছেন শুধু দুজন–রস টেলর ও এউইন মরগান। ৫৫ ইনিংসে মুশফিকের রান ২২৮৫।

ক্যারিয়ারের শুরুতে পথ চলাটা তাঁর মসৃণ না হলেও সময়ের সঙ্গে মুশফিক নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশের ‘মিস্টার ডিপন্ডেবল’ হিসেবে।
কঠোর পরিশ্রমে বিশ্বাসী মুশফিকেরও কখনো কখনো খারাপ সময় গেছে। এই মার্চেও নিউজিল্যান্ড সফরে খারাপ করায় চারপাশ থেকে কাঁটায় বিদ্ধ হতে হয়েছে মুশফিককে।

সেই হতাশা ভুলে প্রিয় প্রতিপক্ষ পেতেই কথা বলতে শুরু করেছে মুশফিকের ব্যাট। মুশি দেখিয়েছেন কীভাবে দ্রুত নিজেকে ফিরে পেতে হয়। কীভাবে ধারাবাহিক ভালো খেলে যেতে হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত