Ajker Patrika

মানুষের প্রত্যাশাই এখন আমাদের শক্তি

বোরহান জাবেদ
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১: ১১
মানুষের প্রত্যাশাই এখন আমাদের শক্তি

প্রশ্ন: দেশ থেকে বলে গিয়েছেন, বিশ্বকাপ নিশ্চিত এবং চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরতে চান। এই আত্মবিশ্বাসের রহস্য যদি বলতেন?

নিগার সুলতানা জ্যোতি: আমরা যখন বাছাইপর্ব খেলতে যাই, যে দলগুলোর বিপক্ষে খেলি, তাদের চেয়ে নিঃসন্দেহে আমরা শক্তিশালী দল হিসেবেই যাই। সম্প্রতি আমরা ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলে এসেছি, সেখানে আমরা পারফর্ম করেছি। একসঙ্গে অনেক বছর খেলছি, সিনিয়ররা আছেন। দল হিসেবেও আমরা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। সবকিছু মিলিয়ে আমরা বাছাইপর্বের দলগুলোর মধ্যে অনেকটা এগিয়ে ছিলাম। সে কারণেই আত্মবিশ্বাসটা এসেছে। যখন দল ভালো ছন্দে থাকে, সেটা অভিজ্ঞতা কিংবা পারফরম্যান্স—সে ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ নেওয়া কিংবা বলা অনেক সহজ হয়ে যায়। 

প্রশ্ন: সবাইকে দেখিয়ে দিতে এবারের এশিয়া কাপ নিশ্চয়ই আরেকটা বড় সুযোগ?

জ্যোতি: প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের প্রমাণের ব্যাপার রয়েছে। সেই সুযোগগুলো সামনে আসছে। আমরা যেহেতু এখন নিয়মিত খেলব, ব্যস্ত সূচি যখন থাকবে, আমরা যত ভালো করব, বিশ্ব ক্রিকেটে তত আমাদের কদর বাড়বে। ক্রিকেট বিশ্ব আমাদের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেবে। প্রতিটি টুর্নামেন্ট, প্রতিটি সিরিজে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জও থাকবে এবং সুযোগও থাকবে নিজেদের সেরাটা দেখানোর। কারণ, আমাদের সম্ভাবনা আছে। সেটা যদি পারফর্মে রূপান্তরিত করতে পারি, সে ক্ষেত্রে আমরাই বেশি লাভবান হব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমরা যত বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলতে পারব, আমাদের সুযোগ তত বাড়তে থাকবে। 

প্রশ্ন: ঘরের মাঠে খেলা, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স। নিজেদের ফেবারিট মনে করছেন কি না?

জ্যোতি: কোন দল কোন অবস্থানে আছে, সেটা নিয়ে চিন্তা করছি না। আমাদের দল যে ভালো অবস্থানে আছে, সবাই দলের জন্য ভালো করতে উন্মুখ। দেখা গেল একদিন কেউ ক্লিক করেনি, আরেকজন সেটা পুষিয়ে দিচ্ছে। দলের জন্য এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই ঘরের মাঠে খেলার একটা সুবিধা থাকে। মানুষের প্রত্যাশা কিন্তু আমাদের প্রতি এখন অনেক বেশি। একটা সময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন আমাদের হাত ধরে (২০১৮ এশিয়া কাপ), সেটা যদি আমরা ধরে রাখতে পারি...। এটা সম্ভব হবে, যদি আমরা দল হিসেবে খেলতে পারি। এবং সবাই যদি যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখতে পারে, সম্ভব। সব মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয়, আমরা যদি ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে পারি, আমরা যদি আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি, যারা রানের মধ্যে আছে তারা যদি ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে, বোলাররা তো সব সময় দলের জন্য সর্বোচ্চ সমর্থন দিয়ে যায়। সবকিছু মিলিয়ে দল হিসেবে খেললে ফাইনালের পথে এগোনো সহজ হবে।

প্রশ্ন: প্রত্যাশার কথা বলছিলেন, এই মুহূর্তে সেটার চাপ কতটা অনুভব হচ্ছে?

জ্যোতি: সবচেয়ে বড় কথা, মানুষ হিসেবে আমার কাছে মনে হয় প্রত্যাশা কখনো চাপ হতে পারে না। মানুষ প্রত্যাশা করে, কারণ তারা আমাদের প্রতি আত্মবিশ্বাসী তাই। সে ক্ষেত্রে প্রত্যাশাই আমাদের কাছে এখন শক্তি। মানুষ বুঝতে পারছে যে আমরা ভালো করতে পারি, আমাদের কাছে ভালো কিছু আশা করা যায়। মানুষ তাই প্রত্যাশা করছে। এটাকে আমরা আমাদের শক্তি ধরে নিয়ে এগোচ্ছি।

প্রশ্ন: বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরেই এশিয়া কাপের প্রস্তুতিতে নেমে পড়তে হলো। হাতে একেবারেই সময় নেই। টানা খেলার ক্লান্তি নিশ্চয়ই আছে?

জ্যোতি: দেখুন, একজন পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে এটাই আমার দায়িত্ব। দল ও দেশকে সার্ভিস দিয়ে যাওয়া। আসলে নিজেরাই চাইতাম আমরা যেন আরও বেশি ম্যাচ পাই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ত সময় পার করি। এখন সেটাই কিন্তু হচ্ছে। অবশ্যই শারীরিক সামর্থ্যের একটা বিষয় আছে। অনেক সময় ক্লান্তি বোধ হয়। তা ছাড়া পরিবার থেকে অনেক দিন দূরে থাকতে হয়। এর পরও কিন্তু আমরা দল হিসেবে খুব আনন্দিত। ঘরের মাঠে এশিয়া কাপ খেলেছি। আগে আফসোস হতো, আমরা খুব বেশি ম্যাচ পাই না। সেই অভিযোগ আর থাকছে না। আমরা বেশ রোমাঞ্চিত।

প্রশ্ন: দল দারুণ ছন্দে থাকার পরও কোনো চিন্তার জায়গা রয়েছে বলে মনে হয়?

জ্যোতি: কোনো দলই তো পরিপূর্ণ হয় না, কোনো খেলোয়াড়ও পরিপূর্ণ হয় না। কোনো না কোনো ঘাটতি থেকেই যায়। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, বিশ্বকাপ বাছাইয়ে যেভাবে খেলে এসেছি, সেমিফাইনালে আরেকটু ভালো খেলতে পারতাম। ফাইনালে রান আরেকটু বেশি করতে পারতাম। আমি নিজেও রান করতে পারিনি বা টপ অর্ডারে তেমন রান হয়নি। একই সঙ্গে আমরা ফারজানা হক পিংকিকে মিস করেছি, জাহানার আপুর মতো খেলোয়াড় চোটে ছিল, ফাহিমা খাতুন ছিল না। কিন্তু এটাও সত্যি, যারা ছিল, তারা চেষ্টা করেছে। টি-টোয়েন্টিতে কিন্তু সবার খেলা লাগে না। তিন-চারজন ব্যাটার আর দু-তিনজন বোলার ভালো বোলিং করলে হয়ে যায়, আর পুরো দল যদি ভালো ফিল্ডিং করে। আমার কাছে মনে হয়, ভালোর কোনো শেষ নেই আসলে। বাছাইয়ে আমরা যে পারফর্ম করেছি, সেটা থেকে যদি আমরা আর ১০-২০ শতাংশ ভালো ক্রিকেট এশিয়া কাপে খেলতে পারি, সব ম্যাচে আমাদের ভালো সুযোগ তৈরি করে দেবে। 

প্রশ্ন: নির্দিষ্ট করে কোনো দলকে মনে হচ্ছে হারানো কঠিন?

জ্যোতি: না। প্রতিপক্ষকে আগে থেকে এ রকম ভেবে ফেললে তো আগেই হেরে গেলেন।

প্রশ্ন: এফটিপিতে অনেক ম্যাচ আছে। সামনে অনেক ব্যস্ত সময় পার করতে হবে। এটা নিশ্চয়ই অনেক সহায়তা করবে উন্নতি করতে?

জ্যোতি: অবশ্যই। আমরা যখন (গত বছর) ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলতে যাই, তখন আমাদের উদ্দেশ্য ছিল মূল পর্বে ওঠা। কারণ, বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলা মানেই আইসিসি এফটিপিতে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করা। জানতাম, সেটা করতে পারলে ভবিষ্যতে আমরা অনেক ম্যাচ-সিরিজ পাব। এটা আমাদের ক্রিকেটীয় দক্ষতা যেমন বাড়াবে, দলের সবার মনোবল চাঙা করবে ও ড্রেসিংরুমের পরিবেশ বদলে দেবে। আপনি যত বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবেন, আপনার উন্নতিও (অবস্থানও) তত বেশি বুঝতে পারবেন। আর খেলোয়াড় হিসেবে যদি বলি, তাহলে কারও সামর্থ্য কিন্তু তিন ম্যাচেই বুঝতে পারবেন না। দেখা যাচ্ছে, তিন ম্যাচের দুটিতেই ক্লিক করছে না। হয়তো শেষ ম্যাচে গিয়ে ভালো করছে। এরপর আবার বিরতি। লম্বা সময় খেলা নেই। এতে করে কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেই খেলোয়াড়ের নিজেকে মেলে ধরতে অনেক বেশি সময় লাগে। এখন বেশি ম্যাচ থাকায় সবাই আরও বেশি সুযোগ পাবে। এটা আমাদের জন্য দারুণ ব্যাপার। আমাদের দলে অনেক বিশ্বমানের খেলোয়াড় আছে, যারা যেকোনো পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারে; বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে পারফর্ম করতে পারে। কিন্তু শুধু আন্তর্জাতিক ম্যাচ কম খেলার জন্য আমরা আড়ালে পড়ে যাই এবং সুযোগ কম পাই। সব মিলিয়ে এটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। 

প্রশ্ন: আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর দলের মধ্যে মানসিকতার বেশ একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। অধিনায়ক হিসেবে আপনি দলে কেমন পরিবর্তন লক্ষ করছেন?

জ্যোতি: আমার সবচেয়ে বড় ভালো লাগার ব্যাপার হচ্ছে, দলে সবাই পারফর্ম করতে চায়। সবাই সুযোগের সদ্ব্যবহারের অপেক্ষায় থাকে যে কখন দলের জন্য পারফর্ম করব। আরেকটা বিষয়, প্রতিদিন কিন্তু একজন ভালো করবে না। চেষ্টা করি সবাইকে মানসিকভাবে চাঙা রাখার। চেষ্টা করি যে আজ আমার দিন নয়, তোমার দিন। তুমি ভালো খেলবা। যখন আপনার দলের কেউ এসে পিঠে হাত দিয়ে বলবে, এই আত্মবিশ্বাসের হাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত