Ajker Patrika

মানুষের উন্নত মস্তিষ্ক ও বড় দেহ গঠনে অবদান রেখেছে ভাইরাস: গবেষণা 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ৪৬
Thumbnail image

আজ থেকে লাখো কোটি বছর আগে এক ক্ষুদ্র ভাইরাস মেরুদণ্ডবিশিষ্ট অনেক প্রাণীকেই সংক্রমিত করেছিল। সেই ভাইরাসের কারণে বিবর্তনের ফলে প্রাণীদের মধ্যে বিশেষ করে মানুষের উন্নত মস্তিষ্ক ও বড় শরীর গঠনের বিষয়টি অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল। গত মঙ্গলবার বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল সেলে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। 

বিজ্ঞানবিষয়ক সংবাদমাধ্যম সায়েন্স অ্যালার্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষকেরা মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের নিউরনের আবরণ মায়েলিনের সৃষ্টিরহস্য উদ্ঘাটনের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। মায়েলিন মূলত ফ্যাটি টিস্যু দিয়ে তৈরি একধরনের আবরক, যা নিউরনকে আবৃত করে রাখে এবং এর মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক সংকেত অতি দ্রুত চলাচল করতে পারে। 
 
গবেষকেরা বলছেন, একধরনের রেট্রোভাইরাসই মূলত এই মায়েলিন গঠনের জিনগত সিকোয়েন্স তৈরি করে দিয়েছিল। রেট্রোভাইরাস মূলত এমন একধরনের ভাইরাস, যা এটির পোষকের দেহের ডিএনএকে আক্রমণ করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমান সময়ে স্তন্যপায়ী, উভচর ও মাছের মধ্যে সেই রেট্রোভাইরাসের জেনেটিক সিকোয়েন্সের প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

এই গবেষণা নিবন্ধের অন্যতম জ্যেষ্ঠ লেখক ও স্নায়ুবিজ্ঞানী অল্টোস ল্যাবস-কেমব্রিজ ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের গবেষক রবিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জিনিসটি হলো, আধুনিক মেরুদণ্ডী প্রাণীর—হাতি, জিরাফ, অ্যানাকোন্ডা, বুলফ্রগ, কন্ডোর—যেসব বৈচিত্র্য এবং আকার অর্জন করেছে তা ঘটত না।’ 

জেনেটিক বিশ্লেষক ও কম্পিউটেশনাল বায়োলজিস্ট তনয় ঘোষের নেতৃত্বে একটি দল জিনোম ডেটাবেইস বিশ্লেষণ করে মায়েলিন কোষের উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত জেনেটিক কোড আবিষ্কারের চেষ্টা চালান। বিশেষ করে তাঁরা জিনোমের রহস্যময় ‘নন কোডিং অঞ্চল’ বিষয়ে জানতে আগ্রহী ছিলেন। 

এই নন কোডিং অঞ্চলের সুস্পষ্ট কোনো কার্যকারিতা নেই। এমনকি একটা সময় এগুলোকে অহেতুক বিবেচনায় আবর্জনা হিসেবে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বিবর্তনীয় ধারার বোঝার জন্য এই নন কোডিং অঞ্চলটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

তনয় ঘোষ ও তাঁর দল দেখতে পেয়েছেন, আদিকালের সেই রেট্রোভাইরাসটির একটি জেনেটিক সিকোয়েন্স আমাদের জিনের ভেতরে দীর্ঘ সময় ধরেই বিরাজ করছে। এই জিনটিকে বিজ্ঞানীরা ‘রেট্রোমায়েলিন’ নামে নামকরণ করেছেন। 

এর পর বিজ্ঞানীরা মেরুদণ্ডী প্রাণী ছাড়াও অন্যান্য প্রজাতির জিনোমে ‘রেট্রোমায়েলিনের’ প্রমাণ অনুসন্ধান করেছিল। তবে তাঁরা চোয়ালযুক্ত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে অনুরূপ কোড খুঁজে পেলেও চোয়ালবিহীন মেরুদণ্ডী বা অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে এটি খুঁজে পাননি। তবে এই গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন, আজ থেকে ৩৬ কোটি বছর আগে ডেভোনিয়ান যুগে যখন মাছের বিকাশ ঘটে, তখনই এই চোয়ালের উদ্ভব হয়। 

চোয়াল নাড়ানোর জন্য স্নায়ুতন্ত্রের দ্রুত সাড়া দেওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে রবিন ফ্রাঙ্কলিন বলেন, ‘স্নায়ুতন্তুগুলোতে দ্রুত বৈদ্যুতিক সংকেত পরিচালনা করার জন্য সব সময় একটি বিবর্তনীয় চাপ রয়েছে। যদি স্নায়ুতন্তু এটি দ্রুত করে, তবে আপনিও দ্রুত কাজ করতে পারেন, যা শিকারি ও পালানোর চেষ্টাকারী শিকার উভয়ের জন্যই কার্যকর।’ 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মায়েলিন স্নায়ুকোষকে প্রশস্ত না করেই দ্রুত অনুভূতি সঞ্চালনকে সক্ষম করে তাদের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে পরিবাহিত হওয়ার সুযোগ দেয়। একই সঙ্গে এটি স্নায়ুতন্তুকে কাঠামোগত সহায়তাও প্রদান করে, যার ফলে নিউরনগুলো দীর্ঘ হতে পারে এবং শরীরের দীর্ঘ অঙ্গগুলোতে স্নায়ুতন্ত্রের কাজ করা সুবিধা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত