Ajker Patrika

১১ বিলিয়ন বছর আগের গ্যালাক্সির দেখা মিলল হাবল টেলিস্কোপে

অনলাইন ডেস্ক
হাবল টেলিস্কোপের এই ছবিতে লুকিয়ে আছে এক অপটিক্যাল বিভ্রম। ছবি: নাসা
হাবল টেলিস্কোপের এই ছবিতে লুকিয়ে আছে এক অপটিক্যাল বিভ্রম। ছবি: নাসা

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার হাবল টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে এক ব্যতিক্রমী মহাজাগতিক দৃশ্য। একটি উপবৃত্তকার গ্যালাক্সির ছবি তোলার সময় হাবলের ফ্রেমে ধরা পড়ে লালচে আভাযুক্ত এক উজ্জ্বল, বক্ররেখা। প্রথম দর্শনে একে যান্ত্রিক ত্রুটি বলে ভুল হতে পারে। তবে বাস্তবে, এটি ১১ বিলিয়ন বছর আগের আরেকটি দূরবর্তী গ্যালাক্সি!

এই দূরবর্তী গ্যালাক্সিটির নাম ‘HerS 020941.1 + 001557’। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। আর ছবির কেন্দ্রে থাকা গ্যালাক্সি, ‘SDSS J020941.27 + 001558.4’ রয়েছে অনেক কাছাকাছি—প্রায় ২.৭ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্বে। কাছের এই গ্যালাক্সিই কাজ করছে এক বিশালাকার মহাকর্ষীয় লেন্সের মতো, যার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি অনেক দূরের এই প্রাচীন গ্যালাক্সিকে।

এই ধরনের মহাজাগতিক ঘটনাকে বলা হয় গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং বা মহাকর্ষীয় লেন্সিং। প্রায় এক শতাব্দী আগে আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বে বলেছিলেন—মহাবিশ্বে বিশাল ভরের কোনো বস্তু যেমন একটি গ্যালাক্সি বা কৃষ্ণ গহ্বর মহাকর্ষীয় বলের মাধ্যমে চারপাশের স্থান-কাল বেঁকিয়ে দিতে পারে। এ কারণে সে অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাওয়া আলোও সোজা না গিয়ে বাঁকে যায়, তৈরি হয় অপটিক্যাল বিভ্রম।

একে বোঝাতে নাসা প্রায়ই বলের মতো ভারী বস্তু ফোমের গদি রাখার উদাহরণ দিয়ে থাকে—যেখানে ফোম বেঁকে যায় এবং পাশ দিয়ে যাওয়া বস্তু তার গতিপথ পরিবর্তন করে। আলোও এমনভাবেই বাঁক নেয়।

এই ঘটনাকে বলা হয় আইনস্টাইন রিং—যখন একটি আলোরস্রোত, কোনো বিশাল গ্যালাক্সির চারপাশ দিয়ে ঘুরে গিয়ে এমনভাবে বাঁক নেয় যে সেটি একটি আংটির মতো দেখায়। হাবলের তোলা এই ছবিতেও দেখা গেছে তেমনই এক আংটির মতো আলোর রেখা।

গ্র্যাভিটেশনাল লেন্স কেবল আলো বাঁকায় না, এটি একই বস্তুকে বহুবার দেখা যায় এমন বিভ্রমও তৈরি করতে পারে। অনেকটা সার্কাসের আয়নার মতো, যেখানে একজনকে অনেক বার দেখায়। তবে এখনকার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই বিভ্রম চিহ্নিত করতে অভ্যস্ত হলেও, চার দশক আগেও এমনটি ছিল না।

১৯৮৭ সালে, অ্যাবেল ৩৭০ নামের এক গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের কাছে দেখা গিয়েছিল একটি বিশাল নীল বক্ররেখা। তখন মনে করা হচ্ছিল প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, এটি কোনো বিশাল মহাজাগতিক বস্তু। একই ধরনের আরেকটি দেখা গিয়েছিল গ্যালাক্সি ক্লাস্টার ২২৪২–০২–এর কাছেও।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাশনাল অপটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি অবজারভেটরির বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করে বলেন, এই বিশাল বক্ররেখা আসলে একরকম বিভ্রম, যা তৈরি হয়েছে অ্যাবেল ৩৭০-র মহাকর্ষীয় লেন্সিংয়ের কারণে।

এমনকি সে বছরই নিউ ইয়র্ক টাইমস শিরোনাম করেছিল, ‘বিশাল মহাজাগতিক বস্তু আসলে এক মরীচিকা’!

এখন, গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং শনাক্ত করতে বিজ্ঞানীরা অনেক বেশি দক্ষ। আর হাবল, কিংবা জেমস ওয়েবের মতো অত্যাধুনিক টেলিস্কোপের কল্যাণে মহাবিশ্বের অতীতের ঘটনাগুলোও যেন আমাদের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠছে।

তথ্যসূত্র: ম্যাশেবল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ হাসিনা যাঁকে ঢাকায় ‘হত্যা করলেন’, তিনি ময়মনসিংহে জীবিত!

চরফ্যাশন থেকে গেটিসবার্গ কলেজ

জীবিত ভাইকে জুলাই আন্দোলনে নিহত দেখিয়ে মামলায় সাক্ষীও দুই ভাই, নেপথ্যে যা জানা গেল

নগদে স্ত্রীর চাকরি, স্বার্থের সংঘাতে জড়ালেন নাহিদের সাবেক পিএ আতিক মুর্শেদ

যুক্তরাষ্ট্রে সি চিন পিংয়ের মেয়েকে বহিষ্কারের দাবি, হঠাৎ কেন এই বিতর্ক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত