Ajker Patrika

প্রাইমেটদের মধ্যে ‘আলফা মেইল’ বিরল, অধিকাংশ প্রজাতিতে স্ত্রী-পুরুষ সমান আধিপত্য:  গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৭: ২৮
অধিকাংশ প্রজাতিতেই কোনো একটি লিঙ্গ স্পষ্টভাবে অপর লিঙ্গের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে না। ছবি: এএফপি
অধিকাংশ প্রজাতিতেই কোনো একটি লিঙ্গ স্পষ্টভাবে অপর লিঙ্গের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে না। ছবি: এএফপি

প্রাইমেট শ্রেণির প্রাণিজগতে দীর্ঘদিন ধরে পুরুষদের আধিপত্য নিয়ে যে ধারণা ছিল, তা ভেঙে দিয়েছে এক নতুন বৈজ্ঞানিক গবেষণা। ১০০টির বেশি প্রজাতির প্রাইমেটের মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রীর মধ্যকার ক্ষমতার ভারসাম্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ প্রজাতিতেই কোনো একটি লিঙ্গ স্পষ্টভাবে অপর লিঙ্গের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে না। এমনকি নারী-পুরুষের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ে জয়ের পরিসংখ্যানও প্রায় সমান।

এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ৭ জুলাই প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস (পিএনএএস) সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এতে ইঙ্গিত মিলেছে, স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই একে অপরের বিরুদ্ধে আগ্রাসী প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে পারে এবং এমন লড়াই প্রায়ই দুই পক্ষের মধ্যে ঘটে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রজাতিতে স্ত্রী বা পুরুষদের একে অপরের ওপর স্পষ্ট আধিপত্য রয়েছে, সেখানেও উভয় লিঙ্গ আলাদা কৌশল অবলম্বন করে আধিপত্য অর্জন করে। পুরুষ প্রাইমেটরা যেখানে শারীরিক শক্তি ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করে, সেখানে স্ত্রীরা প্রজনন কৌশলের মাধ্যমে সঙ্গমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজেদের ক্ষমতাশালী করে তোলে।

গবেষণার প্রধান লেখক, ফ্রান্সের মন্টপেলিয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তন্যপায়ী প্রাণীর আচরণবিদ এলিজ হুশার্দ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পুরুষ প্রাইমেটরা শারীরিক বল প্রয়োগের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করে, কিন্তু স্ত্রী প্রাইমেটরা প্রজনন নিয়ন্ত্রণের মতো বিকল্প পথে ক্ষমতা অর্জন করে।’

ঐতিহাসিকভাবে, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে নেওয়া হতো। তবে সাম্প্রতিক দশকে এই ধারণা প্রশ্নের মুখে পড়ে। অনেক প্রজাতিতেই স্ত্রী প্রাণীর আধিপত্য লক্ষ করা গেছে। যেমন: অর্কা তিমির (Orcinus orca) সমাজ মাতৃতান্ত্রিক, আর আফ্রিকার মিরক্যাট (Suricata suricatta) প্রজাতিতে স্ত্রী প্রজাতির আক্রমণাত্মক আচরণ ও পুরুষদের প্রতি প্রাধান্য স্পষ্ট।

প্রাইমেটদের মধ্যেও এমন নারীপ্রধান প্রজাতি পাওয়া গেছে। যেমন: বনোবো (Pan paniscus) ও রিং-টেইলড লেমুর (Lemur catta) প্রজাতিতে নারীদের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। এমনকি একই প্রজাতির মধ্যেও একেকটি গোষ্ঠীতে স্ত্রী ও পুরুষের জয়লাভের হার আলাদা হতে পারে। যেমন: বনোবোদের বিভিন্ন গোষ্ঠীতে স্ত্রীরা ৪৮ শতাংশ থেকে ৭৯ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়। আবার পাতাস বানরদের (Erythrocebus patas) মধ্যে এই হার শূন্য থেকে ৬১ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, আঙ্গোলান তালাপোইন (Miopithecus talapoin) প্রজাতির মধ্যে কিছু গোষ্ঠীতে স্পষ্ট পুরুষ আধিপত্য, আবার কিছু গোষ্ঠীতে স্ত্রী প্রাণীদের স্পষ্ট আধিপত্য দেখা গেছে। কোথাও কোথাও লৈঙ্গিকভিত্তিক কোনো প্রাধান্যই দেখা যায়নি।

গবেষকেরা ব্যাখ্যা করেছেন, এই প্রভেদ শুধু শারীরিক গঠন নয়, বাসস্থান ও সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। স্ত্রী প্রাণীদের আধিপত্য মূলত সেখানে দেখা গেছে, যেখানে নারীদের প্রজননে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। যেমন: গাছে বসবাসকারী ও একগামী প্রজাতিগুলোতে, যেখানে স্ত্রীরা সহজে পুরুষদের এড়িয়ে চলতে পারে এবং সংঘর্ষে ভ্রূণের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

অন্যদিকে, পুরুষদের আধিপত্য বেশি দেখা গেছে মাটিতে বসবাসকারী প্রজাতিতে, যেখানে পুরুষেরা অপেক্ষাকৃত বড় আকৃতির এবং একাধিক স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমের নিয়ন্ত্রণ রাখে।

গবেষণা প্রতিবেদনের সহলেখক, জার্মান প্রাইমেট সেন্টারের আচরণগত পরিবেশবিদ পিটার ক্যাপেলার বলেন, ‘পুরুষদের আধিপত্যকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়ার ধারা অনেক আগে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আমাদের গবেষণায় সেই ধারণাকে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে—লৈঙ্গিকভিত্তিক ক্ষমতার সম্পর্ক কতটা বৈচিত্র্যময়।’

গবেষণায় ২৫৩টি প্রাইমেট সম্পর্কিত আগের গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যে আগ্রাসী সংঘর্ষ প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রে ঘটে এবং এগুলো সাধারণত একতরফা নয়।

৮৪টি প্রজাতির মোট ১৫১টি প্রাইমেট গ্রুপের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২৫টি গ্রুপে (১৬টি প্রজাতি) সব সময় পুরুষেরা জয়ী হয়েছে, অন্যদিকে ২০টি জনগোষ্ঠীতে (১৬টি প্রজাতি) স্ত্রীরাই সব সময় জয়ী হয়েছে। বাকি ১০৬টি গ্রুপে (৬৯টি প্রজাতি) ফলাফল ছিল মিশ্র ও মাঝারি মাত্রার পক্ষপাতদুষ্ট।

তথ্যসূত্র: লাইফ সায়েন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত