Ajker Patrika

ফিরোজায় ফিরলেন খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২১: ৫২
ফিরোজায় ফিরলেন খালেদা জিয়া

প্রায় তিন মাস হাসপাতালে থাকার পরে বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় আনা হয় তাঁকে।

দেশজুড়ে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে বাসায় নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসকেরা। খালেদা জিয়ার জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়া গত ১৩ নভেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) দীর্ঘ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত ৯ জানুয়ারি তাঁকে কেবিনে আনা হয়। সেখান থেকেই বাড়ি ফিরলেন তিনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেন খালেদা জিয়া। রাত সাড়ে ৮টায় গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় পৌঁছান তিনি।

হাসপাতাল ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা জানান তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। তাঁরা জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল হলেও তিনি ঝুঁকিমুক্ত নন। পুনরায় তাঁর রক্তক্ষরণ হবে না এমন নিশ্চয়তা নেই।

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ (এফএম) সিদ্দিকী বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রায় ৩৮০ এর বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে তাঁর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার অবস্থা একটু স্থিতিশীল তাই তাকে বাসায় রেখে আমাদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

অধ্যাপক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে যদি তাঁর আবার স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি হয় তাহলে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা আরও কঠিন হবে। সে জন্য তাঁকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী বলেন, ভবিষ্যতে তার লিভার আবার আক্রান্ত হতে পারে। তবে আমরা মনে করি না এখনো সে পর্যায় আছে। তাঁর রক্তক্ষরণের সম্ভাবনাটা সব সময়ই থাকবে। এখনো একটু একটু রক্তক্ষরণ হয়। খুব ছোট আকারে এখনো রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তিনি আপাতদৃষ্টিতে স্থিতিশীল আছেন। তবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই যে তিনি অদূর ভবিষ্যতে রক্তক্ষরণে ভুগবেন না।

অধ্যাপক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী জানান, খালেদা জিয়ার মূল যে অসুখ, সেই অসুখের যে কনসিকোয়েন্স তা হলো হাই প্রেশার পোর্টাল সার্কুলেশন। সেটার জন্য যে বাইপাস ড্রেন তৈরি করে দেওয়া, সেটা করা যায়নি। দৃশ্যমান বড় যে ভেসেলগুলো (শিরা) ফেটে যাচ্ছিল সেগুলোর কিছু ব্লক করা হয়েছে।

বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়াচিকিৎসকেরা জানান, খালেদা অক্টোবর মাসে দ্বিতীয়বারের মতো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সে সময় তার শরীর স্ক্যান এবং পরীক্ষা করে রিপোর্টে সেটি টিউমার হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। এই টিউমার আর্লি স্টেজে থাকাতে তাঁকে একটা মেডিকেল বোর্ডের অধীনে রেখে সার্জারি করে টিউমারটা রিমুভ করা হয়েছে।

অধ্যাপক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী বলেন, সেই টিউমারটা রিমুভ করার পর আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জেনেটিক স্টাডি করে টিউমারটি যাতে না হয় সে অনুপাতে আধুনিক চিকিৎসা দেওয়া দরকার হয়। তখন তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নিয়ে আমরা এতটাই উদ্বিগ্ন ছিলাম, যে সেই ব্যাপারটি আপনাদের (সাংবাদিকদের) জানানো হয়নি। কিন্তু সেই চিকিৎসাটা এখন যেভাবে হওয়া দরকার সেটা আর হচ্ছে না।

খালেদা জিয়া সুস্থ নন উল্লেখ করে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক শামসুল আরেফিন বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল, তবে তিনি সুস্থ নন। হাসপাতালে করোনা পরিস্থিতির কারণে তিনি বেশ ঝুঁকিতে। সে জন্য আপাতত তাঁকে বাসায় পাঠানো হচ্ছে। তিনি রোগমুক্ত নন। 

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শামসুল আরেফিন বলেন, দেশের প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়াকে যত দূর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক, দেশের বাইরের চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। সবার একই মত, তাঁকে ভবিষ্যতের চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো প্রয়োজন।

মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এ কিউ এম মোহসীন সাংবাদিকদের জানান, আমরা যেটা করেছি, যেখান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, সেটা টার্গেট করে আমরা বন্ধ করেছি। কিন্তু তাঁর লিভারে যে প্রাইমারি হাইপারটেনশন এটাকে ডাইভার্ড করে দিলে প্রেশার কমে যাবে। প্রাইমারি প্রেশারটা কমানোর জন্য তাঁর বাইরে যাওয়া উচিত।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা মেডিকেল টিমের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রমুখ।

এদিকে খালেদা জিয়াকে বাসায় নেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে বাসভবনে কর্মরত সবার করোনা টেস্ট করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর তাঁর দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেয় সরকার। এরপর বাসায় থাকতে গত বছর করোনায় আক্রান্ত হন তিনি। ২৭ এপ্রিল তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময় ৫৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ১৯ জুন বাসায় ফেরেন তিনি। বাসায় ফিরে করোনার টিকা নেন। গুরুতর অসুস্থ হলে ১২ অক্টোবর আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। ৭ নভেম্বর বাসায় ফেরার পরে সপ্তাহ না পেরোতেই ১৩ নভেম্বর আবারও হাসপাতালে নিতে হয় তাঁকে। এরপর থেকে ৮১ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। চিকিৎসকদের পরামর্শে এরই মধ্যে বিদেশে পাঠানোর জন্য অনুমতি চেয়ে কয়েক দফায় তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। তবে সরকার সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি।

অন্যদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁর বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। বর্তমানে করোনাকালীন বিধিনিষেধে সেই কর্মসূচিতে ছেদ পড়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা, রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এবি ব্যাংক

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত