Ajker Patrika

বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ বর্তমানে ১৯৪৮ সালের মুসলিম লীগের দিকে ধাবমান

আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২১, ০২: ০৪
বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ বর্তমানে ১৯৪৮ সালের মুসলিম লীগের দিকে ধাবমান

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম আদর্শ হলো একটি সহনশীল অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা। অথচ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোকে বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক হামলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রেরণা ছিল একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা। এই আদর্শ ও স্বপ্ন মাথায় রেখে বাংলাদেশের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’কে মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র মূলনীতি হলো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অধিকার ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। এর মানে ব্যক্তিকে ধর্মহীন করা নয়। ধর্মকে কেবল ব্যক্তি পরিসরে লালন করা, আর রাষ্ট্রকে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি সমান ভূমিকা পালন করে সেভাবে গড়ে তোলার নামই ধর্মনিরপেক্ষতা। ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জুম অনলাইনে অনুষ্ঠিত জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের “সাম্প্রদায়িকতা: কী, এখনো কেন” শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে আলোচকবৃন্দ এসব মন্তব্য করেন। 

আলোচনায় মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে, যা আমাদের জন্য দুঃখজনক। ধর্মভিত্তিক একটি রাষ্ট্রকে প্রত্যাখ্যান করে আমরা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছি। ১৯৪৭-এর পর থেকে মানুষ বুঝেছে পাকিস্তানের সঙ্গে বসবাস করা সম্ভব নয়, যেখানে শুরু থেকে বঞ্চনার প্রক্রিয়া কার্যকর ছিল। এ দেশের মানুষ একটি স্বাধীন দেশ চেয়েছে আর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা তা অর্জন করেছি।’ আলোচনায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে রাজনীতির সূচনা হয়েছিল তা আজ ব্যর্থ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর যে আওয়ামী লীগ ছিল, তা বর্তমানে ১৯৪৮ সালের মুসলিম লীগের দিকে ধাবমান। আজকের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমরা রাজনীতি করিনি। এমনকি পাকিস্তান আমলেও যে সম্প্রীতি দেখেছি এই বাংলাদেশেও এই সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে, আজ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হামলা সম্পৃক্ত কোনো মামলার বিচার হয় নাই। এই দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু রাখছে কারা? 

 ১৯৫০-এর দশকে প্রগতিশীল রাজনীতির দিকে হেঁটেছে। ১৯৭২ সালেও পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে। যদিও তা প্রতিপক্ষের হামলা বলে চিহ্নিত হয়েছে, যার সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করা হয়নি। এই প্রশ্নগুলো আসা দরকার। সমাজে নতুন চিন্তা গ্রহণের কোনো উন্মুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়নি। আমরা রাষ্ট্র গঠন করেছি কিন্তু সমাজের রূপান্তর ঘটাতে পারিনি। পুরোনো অচলায়তন ভাঙার জন্য জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন প্রাবন্ধিক ও লেখক আবুল মোমেন। রাষ্ট্র একটি ভয়াবহ জিনিস বলে মন্তব্য করেন আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিসটিংগুইসড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ। সমাজে এরই মধ্যে একটি অসহিষ্ণু পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো মূলত ক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ক্ষেত্রে প্রধানত দরিদ্র মানুষই হামলার শিকার হয়। সাম্প্রদায়িকতা কিংবা এ ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের সমান অধিকার নিশ্চিতকরণের দিকে রাষ্ট্রকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং সহনশীল রাষ্ট্র লাভের জন্য সকল সম্প্রদায়ের বক্তব্য শোনা জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

নারীপক্ষের নির্বাহী সদস্য রীনা রায় বলেন, দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা না হলে সাম্প্রদায়িক হামলা হবে। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকা ক্যাথলিক মহা ধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ দ্য মোস্ট রেভারেন্ড বিজয় এন. ডি’ক্রুজ, ওএমআই সকল সম্প্রদায়কে ধর্মীয় সম্প্রীতির আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. মো. মিজানুর রহমান রাষ্ট্রের নৈতিক মানদণ্ডের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক হামলার কারণ আমরা নৈতিক মানদণ্ড থেকে পতিত হয়েছি। যে মূল্যবোধের ওপর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই বোধ থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি। ‘পিওপলসসেন্ট্রিক গভর্নমেন্ট থেকে আমরা ইনফ্রাস্ট্রকাচারসেনট্রিক গভর্নমেন্টের দিকে চলে গেছি।’ 

স্বাগত বক্তৃতায় জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাক হিলস স্টেট ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আহরার আহমদ আলোচকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করেন এবং শ্রোতা ও পাঠকদের বিদ্যাপীঠে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফাউন্ডেশনের গবেষণা প্রশাসন বিভাগের নির্বাহী ইফতেখারুল ইসলাম। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআইপ্রধান

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত