Ajker Patrika

রাজনৈতিক শূন্যতায় উত্থান হতে পারে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর, ঘটতে পারে বিপর্যয়: আলী ইমাম মজুমদার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০: ৪৬
রাজনৈতিক শূন্যতায় উত্থান হতে পারে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর, ঘটতে পারে বিপর্যয়: আলী ইমাম মজুমদার

দেশের রাজনীতির মূল খেলোয়াড়গুলোর মধ্যে প্রধান দুই খেলোয়াড়ের একটি আওয়ামী লীগ, অপরটি বিএনপি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর উত্থানের মাধ্যমে দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।

আজ বুধবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ-নির্বাচন, অর্থনীতি ও বহিঃসর্ম্পক’ শীর্ষক আলোচনায় আলী ইমাম মজুমদার এই আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিজিএসের চেয়ারম্যান মঞ্জুর এ চৌধুরী, সঞ্চালনা করেন নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আমরা আবারও একটা একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি। একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি এ কারণে যে, প্রধান রাজনৈতিক দল (বিএনপি) এই নির্বাচন বর্জন করেছে। সুতরাং আগামী ভোটের ফলাফল কী হবে, ইতিমধ্যেই আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে তা মোটামুটি নির্ধারিত হয়ে আছে। এই নির্বাচনের ফলাফলটা আমাদের জন্য তেমন আকর্ষণীয় বিষয় নয়।’

সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘যে রাজনৈতিক শক্তিগুলো এখানে (দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন) অংশগ্রহণ করছে, তাদের দাবি ছিল নৌকা প্রতীক দেওয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরিয়ে দেওয়া। এটাকে ভিক্ষা করার রাজনীতি বলা হচ্ছে। এটা কি নতুন চালু হলো? আগেও দুবার এমন হয়েছে। এটা জাতির জন্য দুঃখজনক।’
 
দেশে রাজনৈতিক শূন্যতায় ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর উত্থান হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের রাজনীতির মাঠে মূল খেলোয়াড়দের একটি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল, অন্যটি বিএনপি, যারা নির্বাচনের বাইরে আছে। তাদের নিঃশেষ করার জন্য সব ধরনের রাজনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো আছে। এর ফলে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। এই জায়গাটা ধর্মান্ধরা দখল করে নিতে পারে। এটা আমাদের দেশের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে।’

সিজিএসের আলোচনা সভায় বক্তারা।সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমার হিসাব বলছে, ২৬ থেকে ৩২টি আসন ইতিমধ্যে ভাগাভাগি হয়ে গেছে। আরও ৩০ আসন অন্যদের দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৪০ আসন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল নিশ্চিত করেছে। ফলে বলা যায়, নির্বাচন ইতিমধ্যে হয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা শেষ করে দেবে। এর ফলে মাল্টি পার্টি বলে যা আমরা বুঝি, তা আর থাকবে না। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের ভাষায় বলতে হয়, “যারা অংশগ্রহণ করছে, তারা আসন ভিক্ষার রাজনীতি করছে”।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনকে আমি নির্বাচন বলতে চাই না। আমি বলি, এটা বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা। গত দুটি বড় নির্বাচনেও সাংবিধানিক বৈধতা রক্ষা করা হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক বৈধতা রাখতে পারি নাই।’

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘যখনই আপনার ভোটের জন্য মানুষের কাছে যেতে হয় না, তখনই আর জবাবদিহি থাকে না। আমাদের মতো দেশে হস্তক্ষেপ পশ্চিমারাও করে, অপশ্চিমরাও করে। যখন যে যেখানে সুযোগ পায়, তখন সে সেখানে করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে যে ভাষ্য আসছে, তাতে পশ্চিমের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক করার কোনো লক্ষণ বা প্রমাণ দেখা যাচ্ছে না। তাদের বাদ দিয়ে কি আমরা চলতে পারব? যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা আসে, তাহলে তো আমাদের ক্রয়ক্ষমতা থাকবে না। কোনোভাবেই দুর্ভিক্ষ ঠেকানো যাবে না।’

ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, ‘এই মুহূর্তে যে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা হচ্ছে, এটাকে নির্বাচন বলে আলাপ করার কিছু নাই। নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সরকারি দল ও বিরোধী দলের কারও না কারও হারার সম্ভাবনা থাকে। এখানে কারও হারার সম্ভাবনা বা সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে যে নির্বাচন হচ্ছে, সেটা একদলীয় নির্বাচন।’ তিনি আরও বলেন, ‘৫২ বছরে আমাদের রাজনৈতিক শ্রেণি সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখানে সাধারণ মানুষের ভূমিকা নাই। এর জন্য রাজনৈতিক শ্রেণির পাশাপাশি নাগরিক সমাজও দায়ী।’

আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত