Ajker Patrika

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদের

গত ১৫ বছরে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে বেছে বেছে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার কারণে প্রশাসনে ব্যাপক দলীয়করণ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদ। 

আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার’-শীর্ষক সেমিনারে এ দাবি জানান সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গঠিত সংগঠনটির সভাপতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন। 

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পেশাদারিত্বের সঙ্গে সব দলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন একটি নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করেছিল। অন্যদিকে ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনই কম–বেশি দুর্নীতিযুক্ত ছিল। 

তিনি আরও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারি দলের প্রভাবমুক্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ, দল-নিরপেক্ষ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রয়োজন। বর্তমানে বাংলাদেশে এর কোনোটাই উপস্থিত নেই। 

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমদ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছিল। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনী জনমতের ভিত্তিতে করা হয়নি। সংবিধান জনমতের ভিত্তিতে যে কোনো সময় সংশোধন করা যায়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘গণভোটের বিধান তো এখনো বাতিল হয়নি। প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করেন। দেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় কিনা। যদি চায় তবে সেটাই দিতে হবে।’ 

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘দৃশ্যমান রাজনৈতিক সংকট ও সংঘাতের প্রেক্ষিতে সাধারণ নাগরিকদের মতো আমরাও উদ্বিগ্ন। আমরা জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিয়ে বর্তমান সংকটের নিয়মতান্ত্রিক সমাধানের প্রয়াস চাই। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রবল আন্দোলনের সুফল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আবার কুফল হচ্ছে তাদের দ্বারা বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাই বর্তমান সংকট। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিকতা প্রদান করেছে। সুতরাং ব্যবস্থাটি উভয় দলীয় প্রাতিষ্ঠানিক অর্জন। তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে সৃষ্ট জাতীয় ঐকমত্য এখনো অটুট ও অনিবার্য।’ 

সংগঠনের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ’ আমাদের বর্তমান উদ্যোগে বাংলাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অধ্যয়ন করেছেন, শুধুমাত্র তারাই শামিল নন বরং যারা রাষ্ট্র সম্পর্কে চিন্তা করেন, রাষ্ট্রের ভালো-মন্দ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকেন ও পরামর্শ দিতে চান, এমন সব লোকদের শামিল করা হয়েছে। আমাদের সংগঠনে রাষ্ট্র নিয়ে চিন্তা করেন, অংশগ্রহণ করতে চান, এমন সকলেই অংশগ্রহণ করতে পারবেন।’ 

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সলিম উল্লাহ খান, সাবেক সচিব মোতাহার হোসেন, দৈনিক নিউ নেশন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক ফজল প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত