Ajker Patrika

ম্যাজিক কারবার

সম্পাদকীয়
ম্যাজিক কারবার

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিআইএতে নিয়োগ নিয়ে যা হয়ে গেল, তাকে ‘ম্যাজিক কারবার’ বলা হলে ভুল বলা হবে না। সকালে পরীক্ষা নিয়ে রাতেই ফল প্রকাশ করার এক অতি মানবীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ডিআইএ। তারাই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেছে, তারাই খাতা মূল্যায়নের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সুতরাং এই ম্যাজিকের জন্মদাতা কে—তা নিয়ে প্রশ্ন থাকা উচিত নয়।

শুরুতেই ‘ম্যাজিক কারবার’ বলার কারণ আর কিছুই নয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত প্রচার করা হতো ‘চরমপত্র’ নামে কথিকা। এর রচয়িতা এবং উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক এম আর আখতার মুকুল। তিনি তাঁর একটি কথিকায় এই ‘ম্যাজিক কারবার’ শব্দ দুটি ব্যবহার করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে তটস্থ পাকিস্তানি বাহিনীর চেহারা উন্মোচন করেছিলেন তিনি এই শব্দ দুটির মাধ্যমে। আমরা যে ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করছি, তাতে পাকিস্তানি বাহিনী নেই, মুক্তিযোদ্ধা চেনার বিষয় নেই, কিন্তু আছে একই রকম গাদ্দারির আভাস। ইয়াহিয়ার সাঙ্গাতরা যেমন মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের হিংস্র আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল, এই ডিআইএর ঘটনাটিও তেমনি দেশের মেধাকে হিংস্র আক্রমণ করেছে। কারা পরীক্ষায় ভালো করল আর কারা করল না, এক দিনের এই পরীক্ষা ও ফলাফলে তার কোনো চিহ্ন থাকবে, এ রকম আশা করা বোকামি। তাই এটাকে ম্যাজিক কারবার বলাই সংগত।

৯ মে এই কাণ্ডটি ঘটেছে। সকালে পরীক্ষা নিয়ে ৩১০৫ জন প্রার্থীর খাতা দেখা হয়ে গেছে রাতে! সে রাতেই ঘোষিত হয়েছে ফল! প্রশ্ন হলো, এই তাড়াহুড়োর কারণ কী? কোনো ব্যাখ্যাই কি ভুক্তভোগীদের আশ্বস্ত করতে পারবে? ‘ডাল মে কুছ কালা’ না হলে এই তড়িঘড়ি করার রহস্য বোঝা যাবে না।

সরকারি নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি ইত্যাদির ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপের খবর নতুন নয়। সুদূর অতীতে না গিয়ে এই তো পটপরিবর্তনের পর ওয়াসার নিয়োগ বিষয়ে যে কাণ্ডগুলো ঘটল, সে কথা মনে করলেই বোঝা যাবে, সুযোগ পেলেই তদবির-বাণিজ্যের পাশাপাশি একেবারে পরীক্ষার ফল হাতিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক মুনশিয়ানার পরিচয় দিতে পারে। সেখানে মেধা না তদবির জিতে যায়, সে বিচার জনগণের বিবেকের ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো।

যারা রকেটের গতিতে পরীক্ষা নিল এবং ফল প্রকাশ করল, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল, তা জানার জন্য একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা দরকার। আজকের পত্রিকার ১৫ মে সংখ্যায় এই প্রশ্নের উত্তরও প্রচ্ছন্নভাবে রয়ে গেছে। ডিআইএর বর্তমান পরিচালকের চাকরির মেয়াদ আর মাত্র তিন মাস আছে বলেই কি এই ত্বরিতগতির খাতা মূল্যায়ন? কে দেবে উত্তর?

প্রশাসনে নানা ধরনের অস্থিরতা চলছে। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে প্রশাসনে শৃঙ্খলা মেনে চলা বা না চলার পথ সুগম হয়ে উঠবে—এ রকম আশা এখন দোদুল্যমান। এইসব বিষয় যুক্তিসংগতভাবে শক্ত হাতে দমন করার মতো সক্রিয় কি হয়ে উঠতে পারবে সরকার? তদন্তের পর শাস্তি—কথাটাও কি ম্যাজিক কারবারের মতো মনে হয় না?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত