Ajker Patrika

কথায় বড় হওয়ার প্রতিযোগিতা

সম্পাদকীয়
কথায় বড় হওয়ার প্রতিযোগিতা

দেশের উন্নয়নের প্রধান সোপান হলো সুষ্ঠু নির্বাচন, যেখানে গণতন্ত্রের মজবুত ভিত্তি রচিত হয়। তবে শুধু নির্বাচনই যথেষ্ট নয়; নির্বাচন-পূর্ববর্তী সংস্কার ও রাজনৈতিক ঐক্য তার সহায়ক হাতিয়ার। সম্প্রতি রাজধানীতে আয়োজিত এক জাতীয় সংলাপে বিভিন্ন বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যে বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়েছে যে, সংস্কারবিহীন ভোট বা ঐক্যবিহীন নির্বাচন কখনোই টেকসই অগ্রগতির পথ দেখাতে পারবে না।

২৮ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় ‘সংস্কারবিহীন ভোট দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বক্তব্যে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, সংস্কার, ঐক্য এবং নির্বাচন—এই তিন উপাদান পরস্পরের পরিপূরক। এর কোনো একটির অভাব মানে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেওয়া। তাঁর কথায় উঠে এসেছে যে, জাতীয় ঐক্য ছাড়া কোনো সংস্কার কার্যকর হয় না এবং সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন দেশের ভবিষ্যৎ গঠন করতে পারে না।

প্রধান উপদেষ্টার মতে, দেশের বেশির ভাগ মানুষের পছন্দই হওয়া উচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল মানদণ্ড। তিনি ভোটারের বয়স কমানোর (১৭) মতো প্রসঙ্গ তুলেছেন, যা তরুণদের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। কিন্তু বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক দিন পরই বলেছেন, ‘ভোটারের বয়স কমানোর প্রস্তাব দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার কাজ নয়, এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। তাঁর কাছ থেকে প্রস্তাব আসার অর্থ হলো, চাপ সৃষ্টি করা।’

তাহলে বিষয়টি কী দাঁড়াল? ঐকমত্যের জায়গায় মতানৈক্যই প্রবল হলো। এটাই আমাদের রাজনীতির বড় সমস্যা।

বিভেদের রাজনীতি নিয়ে জাতীয় ঐক্য কখনো অর্জিত হতে পারে না—এটা কোনো নতুন কথা নয়। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ঐক্য কেন হচ্ছে না বা কীভাবে হবে, সেটা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলছেন কি? দেশের শাসনব্যবস্থা, সংবিধান ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে একমত হওয়া জরুরি। অথচ এই জরুরি বিষয়টি শুধু কথায় আছে, কাজে নেই।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু তেমন নির্বাচন কবে, কীভাবে হবে?

মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলা হয়, আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে ঐতিহাসিক সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। কিন্তু মঞ্চ থেকে নেমে সুযোগ হাতছাড়া করার চর্চাই হয়।

সংস্কার, ঐক্য এবং নির্বাচনকে পৃথক কোনো বিষয় হিসেবে না দেখে একটি সমন্বিত কাঠামো হিসেবে বিবেচনা করে যদি দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে তা প্রয়োগ করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই এগিয়ে যাবে। এখন সময় এসেছে কাজ করার, বিভাজনের রাজনীতি ছাপিয়ে দেশের জন্য একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু এখানে বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হলো: একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার ন্যূনতম ভিত্তি কী হবে এবং কারা সেটা ঠিক করবে? কথায় বড় হওয়ার প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে কবে এবং কীভাবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

এনআইডির নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের দায়িত্বে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা

পদত্যাগ করব না, আলোচনা করে সমাধান করব: কুয়েট উপাচার্য

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত