Ajker Patrika

এসএসসির ফল নিয়ে ভাবতে হবে

সম্পাদকীয়
এসএসসির ফল নিয়ে ভাবতে হবে

২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে ১০ জুলাই। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে শুধু শিক্ষার্থী নয়, অভিভাবকদেরও থাকে ব্যাপক কৌতূহল। এবারের ফলাফল সবাইকে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। পাসের হার নেমে এসেছে ৬৮.৪৫ শতাংশে, গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কম। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন, যা আগের বছরের তুলনায় কমেছে প্রায় ৪৩ হাজার। সংখ্যাগুলোই স্পষ্ট করছে, সাফল্যের মুখোশ ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে এক গভীর কাঠামোগত সংকট।

ফলাফল বিশ্লেষণে বোর্ডভিত্তিক বৈষম্য আরও স্পষ্ট। রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৭৭.৬৩ শতাংশ, অথচ বরিশালে তা ৫৬.৩৮ শতাংশ। এমনকি রাজধানী ঢাকায়ও তা ৬৭.৫১ শতাংশে ঠেকেছে, যা জাতীয় গড়ের নিচে। শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গত বছরের ৫১ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৪-এ, আর শতভাগ পাস করা স্কুলের সংখ্যা নেমে এসেছে ৯৮৪-তে। এসব পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যা নয়, বরং এক একটি ব্যর্থতা, এক একটি অবহেলার চিহ্ন।

পাসের হারের এই পতনকে আমরা যদি ‘সতর্কসংকেত’ হিসেবে না নিই, বরং রাজনৈতিক চাপ বা প্রশাসনিক অস্বস্তির চোখে দেখি, তবে শিক্ষার ভবিষ্যৎ আরও ঝুঁকিতে পড়বে। প্রশ্ন হলো, আমরা কি ফলাফলকে মুখস্থনির্ভরতার ফসল হিসেবে দেখে আত্মতুষ্ট, নাকি শিক্ষার মৌলিক সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবার গরজ বোধ করব?

শিক্ষা মানে কেবল সনদ নয়; এটা চিন্তা, ভাষা, নৈতিকতা ও যুক্তির চর্চা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রশ্নপত্র মুখস্থ করে, গাইড বই ঘেঁটে, কোচিং সেন্টারের নোট মুখে গুঁজে এখনো আমাদের বড় একটি অংশ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে তৈরি একজন শিক্ষার্থীর ভিত কতটা মজবুত, সেই প্রশ্ন আজ আরও বড় হয়ে উঠেছে।

আরও বড় দুশ্চিন্তার জায়গা হলো, প্রায় ৬ লাখ শিক্ষার্থীর ফেল করা। এদের অনেকেই মাধ্যমিক শিক্ষা থেকেই ঝরে পড়বে, আর ফিরে আসবে না কোনো দিন। এই বিপুল তরুণ জনগোষ্ঠীকে আমরা কোনো দিকনির্দেশনা দিতে পারছি? তারা কি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা পাবে, নাকি অদক্ষ বেকার হিসেবে সমাজে যুক্ত হবে?

অন্যদিকে মেয়েদের পাসের হার ছেলেদের চেয়ে বেশি, জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যায়ও এগিয়ে। এটা ইতিবাচক হলেও এর পেছনের সামাজিক বাস্তবতা সহজ নয়। কারণ, পরীক্ষার আগেই বহু মেয়ে ঝরে পড়ে বাল্যবিবাহ, দারিদ্র্য কিংবা পরিবারের চাপের কারণে। যারা রয়ে গেছে, তারাই ফলাফলে স্থান পেয়েছে।

এই ফল আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, শিক্ষার নামে আমরা যা কিছু করছি, তার অনেকটাই মুখস্থনির্ভর, পরীক্ষাকেন্দ্রিক এবং গুণগত দিক থেকে সংকটময়। আমরা এখনো বোঝাতে পারিনি যে শিক্ষা মানে কেবল নম্বর নয়, বরং মানসিক গঠন, মানবিকতা ও দক্ষতার সঞ্চার।

প্রয়োজন শিক্ষাকে নতুনভাবে বোঝা। প্রয়োজন বোর্ডভিত্তিক সমতা, দুর্বল প্রতিষ্ঠানে বিশেষ সহায়তা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে মূল্যায়ন পদ্ধতির সংস্কার। আর সবচেয়ে আগে দরকার, ফলাফলকে মুখ্য না করে শিক্ষার মানকে মুখ্য করে তোলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি দুই ভাই নেত্রকোনায় গ্রেপ্তার

পারটেক্স এমডি রুবেল আজিজের ১১৬ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া

‘নৌকা আউট, শাপলা ইন’, সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির চাওয়া

যশোরে কেন্দ্রের ভুলে বিজ্ঞানের ৪৮ জন ফেল, সংশোধনে জিপিএ-৫ পেল সবাই

পাওনা টাকা চাওয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধরের পর বললেন, ‘আমি যুবদলের সভাপতি, জানস?’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত