Ajker Patrika

পশুচিকিৎসকের সংকট

সম্পাদকীয়
পশুচিকিৎসকের সংকট

আমাদের দেশে বর্ষা মৌসুমে গরুর খুরাসহ নানা ধরনের রোগ হয়ে থাকে। গরুর চিকিৎসা ঠিকভাবে করার জন্য গ্রামের লোকজনের কাছে আস্থার জায়গা হলো স্থানীয় সরকারি পশু হাসপাতাল। কিন্তু রংপুর জেলার ৮টি উপজেলার পশু হাসপাতালে যথেষ্ট জনবলের অভাবে স্থানীয় লোকজন গরুর চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় গত ৩০ জুন একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

নিয়মানুযায়ী প্রতিটি উপজেলায় ১১টি পদের জন্য ১ জন করে মোট ৮৮ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৫২ জন। তাঁদের মধ্যে আবার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রেষণে ঢাকায় অবস্থান করছেন। জনবলের সংকটের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক খামারি ও পশু পালনকারীরা।

৮টি উপজেলার পশু হাসপাতালে যথেষ্ট লোকবলের অভাবে কর্মরত কর্মকর্তারা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে তাঁরা প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দিতে পারছেন না। এতে করে স্থানীয় লোকজন পশুর চিকিৎসা করাতে এসে চিকিৎসকের অভাবে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। যেমন তারাগঞ্জ উপজেলার পশু হাসপাতালে চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে তিনটি পদই শূন্য রয়েছে। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পশুর চিকিৎসা।

জনবলের সংকটের কারণে ভয়াবহ সমস্যার মধ্যে পড়েছেন প্রান্তিক খামারিরা। পশুর অসুস্থতায় সময়মতো সরকারি সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে তাঁদের গ্রাম্য চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। আর এসব অসাধু চিকিৎসক অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে নকল ওষুধ দিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে পশু মেরে ফেলার অভিযোগ আছে এসব গ্রাম্য পশুচিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এতে করে খামারিরা অর্থ ও চিকিৎসায় প্রতারিত হচ্ছেন। যেমন, পীরগঞ্জের অনন্তপুর গ্রামের খামারি রফিকুল ইসলাম এবং তারাগঞ্জের রাহেলা বেগমের মতো অসংখ্য মানুষ অসুস্থ গরুর জন্য সরকারি হাসপাতালে এসে পশুর চিকিৎসা করাতে না পেরে বাধ্য হয়ে স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত পশু হাসপাতালগুলোতে সময়মতো পদগুলো পূরণ করা না হলে সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। কারণ, বর্ষা মৌসুমে গরুর রোগবালাই বেশি হয়ে থাকে। ফলে এই অঞ্চলের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অনেক খামারির

সারা বছরের আয়ের উৎস হলো পশুপালন। অনেকে গরুর দুধ বিক্রি করে সংসার চালান। আর খামারিরা সারা বছরের আয় করেন কোরবানির ঈদের সময় গরু বিক্রি করে। গ্রামের প্রান্তিক খামারিরাই বর্তমানে আমাদের দেশের দুধ ও পশুর মাংসের প্রধান জোগানদাতা। খামারিদের মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা তাই রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার মতে, মন্ত্রণালয় থেকে পদ পূরণের আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। অবিলম্বে এই জনবলের সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সরকারের উচিত দ্রুততার সঙ্গে শূন্য পদগুলো পূরণে উদ্যোগ গ্রহণ করা। নতুবা শুধু পশু নয়, মানুষের স্বপ্ন এবং টিকে থাকার সংগ্রামও ভুল চিকিৎসায় মারা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি দুই ভাই নেত্রকোনায় গ্রেপ্তার

পারটেক্স এমডি রুবেল আজিজের ১১৬ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া

‘নৌকা আউট, শাপলা ইন’, সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির চাওয়া

যশোরে কেন্দ্রের ভুলে বিজ্ঞানের ৪৮ জন ফেল, সংশোধনে জিপিএ-৫ পেল সবাই

পাওনা টাকা চাওয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধরের পর বললেন, ‘আমি যুবদলের সভাপতি, জানস?’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত