Ajker Patrika

শান্তি কি আসছে

সম্পাদকীয়
শান্তি কি আসছে

গাজায় ফিরছে ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর জনস্রোত ছুটছে গাজার দিকে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। শুক্রবার সেই যুদ্ধবিরতি অনুমোদন দেয় ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। এই চুক্তি ঘোষণার পর ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের শান্তিকামী অধিবাসীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকা মৃত্যু-উপত্যকায় পরিণত হয়েছিল। এখন সবাই শান্তির ঠিকানার সন্ধান করছে।

যে ফিলিস্তিনিরা ফিরে আসছে গাজায়, তারা একরকম নিঃস্ব অবস্থায়ই ফিরে আসছে। সমুদ্রতীরবর্তী রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া এই মানুষের ঢল এখনো জানে না, কী অপেক্ষা করছে তাদের আবাসভূমিতে। কিন্তু মনে তাদের আশা, অবরোধ আর অস্ত্রের ঝনঝনানিতে যে দুর্বিষহ জীবনের মুখোমুখি হতে হয়েছে, তা থেকে রেহাই পাওয়ার প্রথম ধাপ এই যুদ্ধবিরতি।

এই নিঃস্ব গাজাবাসীর সাহায্যার্থে এগিয়ে আসতে হবে মানবতাবাদী সংগঠনগুলোকে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ গাজার বিভিন্ন জায়গা থেকে সরে যাওয়ার পর সেসব এলাকায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। উদ্ধার অভিযানে পাওয়া গেছে ৩৩টি লাশ। এই যুদ্ধের ক্ষত শুকাতে লাগবে অনেক দিন। তারপরও এই এলাকায় শান্তি ফিরে আসুক। নতুন করে কোনো পক্ষের কোনো উসকানিতে আবার যেন যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি না হয়, সেদিকে বিচক্ষণ দৃষ্টি রাখতে হবে উভয় পক্ষের শান্তিকামী মানুষের।

চুক্তির শর্তগুলো ঠিকভাবে পালন করা হলে আমরা দেখতে পাব ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গাজার নির্দিষ্ট করা এলাকা থেকে সরে গেছে, সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করা, তারই সমান্তরে ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি, উপদ্রুত অঞ্চলে মানবিক সহায়তা ঢোকার অনুমতি দানের ঘটনাগুলো। এরই মধ্যে তার কিছু কিছু শুরু হয়েছে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই চুক্তি কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মহল কৃতিত্ব দাবি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রও এই চুক্তি কার্যকর করার ব্যাপারে বড় ভূমিকা রেখেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এই অঞ্চলে ঘটে যাওয়া বিয়োগান্ত ঘটনাগুলোর দিকে চোখ রাখলে শুধু হাজার হাজার নিরীহ মানুষের অকারণ মৃত্যুর মিছিল দেখা যায়। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে যে প্রশ্নগুলো অমীমাংসিত, সে প্রশ্নগুলোর সমাধান করতে হলে উভয় পক্ষকেই আলোচনায় বসতে হবে খোলা মন নিয়ে। বিশ্বের অনেক দেশ এরই মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলে সংকট সমাধানের পথ একটু হলেও প্রশস্ত হয়েছে। এখন ঠান্ডা মাথায় সংকটটি বিশ্লেষণ করে সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানের জন্য কতটা আন্তরিক, সেটা তাদের কাজ দিয়েই প্রমাণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলকেও এগিয়ে আসতে হবে যেন নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডগুলো না ঘটে।

ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার পরও গাজা অভিমুখে প্রত্যাবর্তনকারীদের কাফেলা স্মরণ করিয়ে দেয়, নিজ বাসভূমের প্রতি মানুষের ভালোবাসা কতটা প্রগাঢ় হতে পারে। গাজা তথা ফিলিস্তিনের সংকট দ্রুত কেটে যাক, এই কামনাই করি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত