Ajker Patrika

নতুন সন্ধিক্ষণে রাজনীতি

সম্পাদকীয়
নতুন সন্ধিক্ষণে রাজনীতি

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গত কয়েক দিনে কিছু নাটকীয় পরিবর্তনের দিকে এগিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ৯ মাসের মাথায় সরকারপ্রধানের পদত্যাগের অভিপ্রায় অনাকাঙ্ক্ষিত এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। দেশের রাজনীতি সংকট ও সংঘাতময় হয়ে উঠুক—এটা যেমন কারও কাম্য নয়, তেমনি কোনো অজুহাতেই নির্বাচন ঝুলিয়ে রাখাও যথাযথ নয়। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই এই নাজুক সময়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশুতোষ আবেগ কিংবা একগুঁয়েমি মনোভাব সমস্যা সমাধানের পথ দেখাবে না। শুধু নির্বাচন যেমন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়, তেমনি সংস্কার ও বিচারের যৌক্তিক সময় নির্ধারণের বিষয়টিও অনির্দিষ্টকাল ঝুলিয়ে রাখার মতো নয়। মানুষের আস্থার মর্যাদা রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস যেমন সংগ্রামের, তেমনি হতাশারও। গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন হয়েছে, মানুষের অধিকার রক্ষায় বহু রক্ত ঝরেছে। কিন্তু সেই অর্জনের পূর্ণ ফল আজও সাধারণ মানুষের জীবনে প্রতিফলিত হয়নি। ক্ষমতার পালাবদলে রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু মানুষের মৌলিক চাহিদা, নিরাপত্তা ও সম্মানজনক জীবনের নিশ্চয়তা এখনো অনেকখানি অধরা।

তাই বলতেই হবে যে দেশের রাজনীতি আজ নতুন এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে, তা নির্ধারিত হবে এখনকার নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস, প্রতিহিংসা এবং বিভাজনের সংস্কৃতি এতটাই গভীরে গেঁথে গেছে যে, সমঝোতা বা যৌথ পথ খোঁজার চেষ্টাগুলোও নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে।

রাজনীতির প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানুষের কল্যাণ, কিন্তু তা এখন অনেকটা ক্ষমতা দখল ও টিকে থাকার প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। যে যেভাবে পারছে, সেইভাবে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। এতে সমাজে যে অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে, তা দেশকে শুধু পিছিয়েই দিচ্ছে না, ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তৈরি করছে। অর্থনীতি থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা—সবখানে এর প্রভাব পড়ছে। তরুণেরা বিভ্রান্ত, পেশাজীবীরা হতাশ, আর সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

এই পরিস্থিতির পরিবর্তন দরকার। দরকার রাজনৈতিক পরিণতির বোধ। যাঁরা নেতৃত্বে আছেন, তাঁরা শুধু দল বা গোষ্ঠীর কাছে নয়, পুরো জাতির কাছে দায়বদ্ধ। গণতন্ত্র মানে শুধু নির্বাচন নয়; গণতন্ত্র মানে হলো সহমত, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা। রাজনীতির ভাষা হোক আস্থা ও আলোচনার, হিংসা ও প্রতিশোধের নয়।

আমরা চাই, বাংলাদেশ এমন একটি দেশে পরিণত হোক, যেখানে মানুষ তার মত প্রকাশ করতে পারবে নির্ভয়ে, যেখানে ভোট দিতে পারবে প্রতিশোধের আশঙ্কা ছাড়াই এবং যেখানে রাজনীতির লক্ষ্য হবে মানুষকে সম্মানজনক জীবন দেওয়া। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে, নেতৃত্বে থাকা সবারই দায়িত্ব নিতে হবে—নিজেদের অতীতের ভুল স্বীকার করে সামনে সৎ পথে হাঁটার। ইতিহাস কাউকে ছাড় দেয় না; আর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে না। তাই এখনই সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্বে ১৮৬ দেশের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ মাত্র একটি: গবেষণা

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধান বিচারপতি

শুধু নোটিশে চাকরি হারাবেন সরকারি কর্মচারীরা, আপিলের সুযোগ নেই

সদরপুরে অসহায় পরিবারের ভিটেমাটি দখলের চেষ্টা, যুবক গ্রেপ্তার

ভারতে অর্থ পাচার মামলায় খুলনায় ব্যবসায়ীর ১০ বছরের কারাদণ্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত