Ajker Patrika

এক কিডনির গ্রাম

সম্পাদকীয়
এক কিডনির গ্রাম

জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার একটি গ্রাম বৈগুনি। নামের চেয়ে গ্রামটি বরং বেশি পরিচিতি পেয়েছে ‘এক কিডনির গ্রাম’ নামে! কারণ, এখানকার অনেকেই একটি করে কিডনি বিক্রি করে দিয়েছেন, তা-ও আবার প্রতিবেশী দেশ ভারতে গিয়ে। এ নিয়ে ৮ জুলাই আজকের পত্রিকার শেষের পাতায় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে।

কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আজকের পত্রিকায় যে সংবাদটি ছাপা হয়েছে, তাতে বৈগুনি গ্রামের বাসিন্দাদের অসতর্কতার চিত্রই ফুটে উঠেছে। কিডনি পাচারকারী দালালদের প্ররোচনায় শুধু যে স্বেচ্ছায় অনেকে কিডনি বিক্রি করেছেন তা নয়, কেউ কেউ অনিচ্ছায়ও কিডনি খুইয়েছেন।

কেউ ঋণ পরিশোধ করতে, কেউবা মাদক-জুয়ার আসক্তির কারণে কিডনি বিক্রি করেছেন। কেউ চাকরির প্রলোভনে পা দিয়ে ভারতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন, কাজের নাম করে জোর করে তাঁদের কিডনি নিয়ে নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কিডনির দাম যেখানে ২২ থেকে ২৬ হাজার ডলার, অর্থাৎ ২৭ থেকে ৩২ লাখ টাকা, সেখানে এই বিক্রেতারা পান মাত্র ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা।

কালাইয়ের বিনাই গ্রামেও পাওয়া যায় কিডনি বিক্রেতাদের। কালাই বাংলাদেশের অন্যতম দরিদ্র উপজেলা হওয়ায় কিডনি বেচাকেনার দালাল চক্রের জন্য এই এলাকা হটস্পট বলে বিবেচিত। দালালেরা বিভিন্নভাবে এই এলাকার মানুষদের প্ররোচিত করে ভুয়া পরিচয় দিয়ে কাগজপত্র তৈরি করে ভারতে নিয়ে যায় এবং সেখানে কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য করে। অনেকে কিডনি বিক্রির পর নিজেরাই দালালের তালিকায় নাম লেখান।

মানুষ একটি কিডনি নিয়ে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারলেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। একটি কিডনি হলে এর ওপর বেশি চাপ পড়তে পারে এবং সেটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া, শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমা হওয়া, ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা, রক্তচাপ

বৃদ্ধি, ক্লান্তি ও দুর্বলতার মতো সমস্যাগুলোও দেখা দিতে পারে। তাই যাঁদের একটি কিডনি থাকে তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা প্রয়োজন।

নিশ্চয়ই এই কথাগুলো কালাই উপজেলার কিডনিদাতারা জানেন না বলেই কিডনি বিক্রি করতে সম্মত হন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভোগেন।

দুই দেশের হাসপাতাল, চিকিৎসক ও দালাল মিলেই কিডনি পাচারের চক্র কাজ করে বলে জানা যায়। নানা সময়ে অনেক অপরাধী ধরাও পড়েছে। দুই দেশের আইন-আদালত এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

কিডনি পাচারের মতো এ রকম অবৈধ কাজের জন্য নিশ্চয়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সংশ্লিষ্টদের মনে করিয়ে দিতে হবে না তারা কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি জরুরি—শুধু এক কিডনির গ্রাম বা কালাই উপজেলা নয়, বাংলাদেশের সবখানেই কিডনি পাচারকারী দালালদের বিরুদ্ধে এবং এক কিডনি নিয়ে কী কী শারীরিক জটিলতায় ভুগতে হয়, সেই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা। সেটা সরকারি ও বেসরকারি—দুই উদ্যোগে সহজ হয়ে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি দুই ভাই নেত্রকোনায় গ্রেপ্তার

পারটেক্স এমডি রুবেল আজিজের ১১৬ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া

‘নৌকা আউট, শাপলা ইন’, সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির চাওয়া

যশোরে কেন্দ্রের ভুলে বিজ্ঞানের ৪৮ জন ফেল, সংশোধনে জিপিএ-৫ পেল সবাই

পাওনা টাকা চাওয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধরের পর বললেন, ‘আমি যুবদলের সভাপতি, জানস?’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত