Ajker Patrika

পানাহি ও শিল্পের স্বাধীনতা

সম্পাদকীয়
পানাহি ও শিল্পের স্বাধীনতা

স্বনামধন্য ইরানি চলচ্চিত্রকার জাফর পানাহি অবশেষে কান চলচ্চিত্র উৎসবে উপস্থিত হয়েছেন। ২০০৩ সালে শেষবারের মতো তিনি কানে উপস্থিত হতে পেরেছিলেন। এবার ২০ মে পানাহি পরিচালিত ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাকসিডেন্ট’ সিনেমাটি প্রদর্শনীর পর টানা ৮ মিনিট তিনি ডুবেছিলেন দর্শকদের করতালিতে। একজন কীর্তিমান মানুষের প্রতি এটা ছিল শিল্পের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি শিল্পের শক্তিকে ভয় পায়। কোনো ঘটনার শৈল্পিক পরিবেশনা অনেক তীব্র হয়ে প্রবেশ করতে পারে মানুষের মনে। এ জন্যই সরকারপক্ষের এই ভয়। ইরান সরকার এই ভয়ের কারণেই পানাহির মতো চলচ্চিত্রকারকে নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পানাহিকে ২০০৯ সালে প্রথম গ্রেপ্তার করেছিল ইরানি সরকার। এ সময় তারা পানাহিকে ২০ বছরের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, চিত্রনাট্য লেখার স্বাধীনতাও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল তিনি যেন কোনো সাক্ষাৎকার না দেন এবং দেশ থেকে বের না হন। এর কোনো একটি যদি তিনি অমান্য করেন, তাহলে ছয় বছরের জেল ছিল তাঁর ললাটলিখন।

কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞা পানাহিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ থেকে দূরে রাখতে পারেনি। ২০১১, ২০১৩, ২০১৫ সালে কানে প্রদর্শিত হয়েছিল তাঁর নতুন নতুন চলচ্চিত্র। ২০১৫ সালে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর ‘ট্যাক্সি’ চলচ্চিত্রটি পায় গোল্ডেন বিয়ার পুরস্কার।

২০২২ সালের ১১ জুলাই পানাহিকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি জেল খাটেন। এরপর তিনি দেশ ছাড়েন। কোনো সন্দেহ নেই, ইরানে যে ধরনের অসাধারণ সব চলচ্চিত্র তৈরি হয়, তার পেছনে জাফর পানাহির অবদান আছে।

পানাহি খুবই সাদামাটা বিষয় নিয়ে ছবি তৈরি করে থাকেন। কিন্তু সেসব ছবিতে যে সামাজিক বার্তা থাকে, তা শাসকশ্রেণির জন্য হজম করা কঠিন। এ কথা সত্য, কোনো শাসকই তাদের সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। ইরানি সরকারও পানাহির এই শক্তিশালী চলচ্চিত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যুগে যুগে, কালে কালে শিল্প ও সাহিত্যের প্রতি সরকারি আঘাত এসেছে এবং নানাভাবে শিল্পী অথবা লেখককে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। কিন্তু তাতে যে কোনো লাভ হয়নি তার প্রমাণ সেই শিল্পী অথবা লেখকেরা পরবর্তীকালে আরও বেশি করে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। শিল্পের স্বাধীনতা প্রচলিত আইনের সীমা দিয়ে

বিচার করা হলে তা আর স্বাধীনভাবে পাখা মেলে দিতে পারে না। যেখানেই শিল্পের টুঁটি টিপে ধরা হয়েছে, সেখানেই তা নানাভাবে বিচ্ছুরিত হয়ে আরও প্রবলভাবে ছড়িয়ে

গেছে, জনপ্রিয় হয়েছে।

জাফর পানাহি শুধু একটা উদাহরণ মাত্র। সৃজনশীল সৃষ্টিশীলতা যে শৈল্পিক বলয় সৃষ্টি করে, তা মেনে নিতে পারলেই কেবল শিল্পের স্বাধীনতা বজায় থাকে। এ কথা শাসকশ্রেণি যদি বুঝতে পারত, তাহলে বহু অযাচিত সংকট থেকে রেহাই পেত শিল্প। প্রবহমান হতো একটি দেশের রুচিশীল অগ্রযাত্রা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রামে নারীকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া ‘শিবিরের লোক’ আকাশ চৌধুরীকে ধরছে না পুলিশ

প্রফেসর আনোয়ারা আ.লীগের লোক হলে এত অপমান নিয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হত না: ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময়

আলিপুরদুয়ার থেকে মোদির ‘মিশন বেঙ্গল’, নজর বাংলাদেশে

বৈষম্যবিরোধীদের মিছিল থেকে জি এম কাদেরের বাড়ি ভাঙচুর, মোটরসাইকেলে আগুন

পরিচালক পদ বাতিল, বিসিবি সভাপতির পদ থেকে ফারুককে অপসারণ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত