Ajker Patrika

তাঁরা কেউ চোর নন

সম্পাদকীয়
তাঁরা কেউ চোর নন

খুব বেশি দিন আগের ঘটনা নয়, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্রদের ছয়টি মুঠোফোন ও মানিব্যাগ চুরি হয়। রাতে তোফাজ্জল হোসেনকে ওই হলে ঘোরাফেরা করতে দেখে কিছু শিক্ষার্থী তাঁকে চোর সন্দেহে আটক করেন এবং নির্মমভাবে মারধর করেন। মারের বর্বরতা এতটাই বেশি ছিল যে তোফাজ্জল মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে বেশি সময় নেননি। কিন্তু তোফাজ্জল চোর ছিলেন না, ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। শিক্ষার্থীরা তোফাজ্জলের পরিচয় পাওয়ার পরও তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেছিলেন।

সম্প্রতি প্রায় একই ঘটনা ঘটেছে লালমনিরহাটের আদিতমারীতে। সেখানকার বাজারে ফেরি করে বাদাম বিক্রি করেন নাজিম উদ্দিন। স্থানীয়রা তাঁকে ‘পাগলা বাদাম বিক্রেতা’ নামে চেনেন। কারণ, তিনি বাক্‌ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। ২৮ জুন সারা দিন স্থানীয় বাজারে বাদাম বিক্রি করে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে প্রাকৃতিক কাজে সাড়া দিতে এক বাঁশবাগানে যান। কিন্তু প্রতিবেশী নাজমুলসহ কয়েকজন তাঁকে চোর সন্দেহে ধাওয়া দেন এবং আটক করেন। পরে নাজিমকে চোর অপবাদ দিয়ে বেধড়ক গণপিটুনি দেওয়া হয়। রড দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় তাঁর দুই পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ।

তবে নাজিমের ভাগ্য তোফাজ্জলের চেয়ে ভালো! তিনি মারা যাননি। খবর পেয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। এখন তিনি ভর্তি আছেন আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অথচ তোফাজ্জলের ভাগ্য তাঁর সঙ্গে নির্মম পরিহাসই করেছিল। পরিবারে জীবিত কেউ ছিল না, আত্মীয়-পরিজন যথাসময়ে এসে পারেননি উদ্ধার করতে।

নাজিমকে মারধরের ঘটনায় তাঁর বাবা বাদী হয়ে আদিতমারী থানায় অভিযোগ করেছেন। আমরা আশা করব এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হবে। যদিও তোফাজ্জলের ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের মামলা হয়েছে, কয়েকজন অভিযুক্ত এখনো পলাতক রয়েছেন এবং বিচারপ্রক্রিয়া চলমান। খুব দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে বলে মনে হয় না। মামলা যতই শক্ত হোক, অভিযুক্তদের পরিকল্পনা পোক্ত হলে সুবিচার পাওয়া নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।

এখন তোফাজ্জলের ঘটনা থেকে চাইলে শিক্ষা নেওয়া যায়। নাজিমের ঘটনায় যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সচেতন হয় এবং সঠিক সময়ে আদালত বিচার করতে পারেন, তাহলে তা একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থাপিত হবে।

আসলে এই ধরনের ঘটনার সূত্রপাত হওয়া কাম্য নয়। একজনকে চোর সন্দেহে আটক করা যায়, কিন্তু তাঁকে শাস্তি প্রদান করা কোনোভাবেই সাধারণ জনগণের কাজ নয়। আটক করার পর থানায় সোপর্দ করা সুনাগরিকের কর্তব্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার তদন্ত করা, আদালতের কাজ সুষ্ঠু বিচার করা। প্রতিবন্ধী নাজিম উদ্দিনকে গণপিটুনি না দিয়ে যদি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হতো, তাহলে তাঁর পা দুটো অন্তত অক্ষত থাকত।

কোনো ঘটনায় গণপিটুনিতে কারও মৃত্যু কিংবা আহত হওয়ার পর যদি জানা যায় তিনি অপরাধী নন, তাহলে আক্রমণকারীরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন তো?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি দুই ভাই নেত্রকোনায় গ্রেপ্তার

পারটেক্স এমডি রুবেল আজিজের ১১৬ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া

‘নৌকা আউট, শাপলা ইন’, সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির চাওয়া

যশোরে কেন্দ্রের ভুলে বিজ্ঞানের ৪৮ জন ফেল, সংশোধনে জিপিএ-৫ পেল সবাই

পাওনা টাকা চাওয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধরের পর বললেন, ‘আমি যুবদলের সভাপতি, জানস?’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত