Ajker Patrika

আহা জিলাপি

সম্পাদকীয়
আহা জিলাপি

কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওসি কি জিলাপি খেতে চেয়েই বিপদে পড়লেন? নাকি জিলাপির সঙ্গে আরও কিছু তিনি খেতে চেয়েছিলেন, যে ব্যাপারে টেলিফোনের অন্য পাশের ছাত্রনেতা বলেছিলেন, ‘বিলটিল পাই, একটা অ্যামাউন্ট দেবো নে!’

খুব যে ব্যতিক্রমী একটা ঘটনা ঘটেছে ইটনা থানার ওসি এবং ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ যিনি করছেন তাঁর মধ্যে, এমন নয়। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে থানা-পুলিশ, ঠিকাদার এবং অবাধে টাকাপয়সার যাওয়া-আসার বিষয়টি লক্ষ করে আসছেন, তাঁদের কাছে এটিকে একটি তুচ্ছ ঘটনা বলেই মনে হবে। পিআইসির এই কাজটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। তবে টেলিফোন কথোপকথনে ওসি যে কথাগুলো বলেছেন, সেটাই যেন বাংলাদেশের সরকারি কাজের একটি ধ্রুপদি প্রতীক হয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। যে সত্যের মুখোমুখি হয়ে কিংবা অনুমানের ওপর ভিত্তি করে সাধারণ মানুষ একটা ধারণায় এসে পৌঁছায়, তারই এক উলঙ্গ দৃশ্য যেন পরিষ্কার হয়েছে এই কথাবার্তায়। ওসির কথাগুলো শুনুন। তিনি বলেছেন, ‘সেফটি সিকিউরিটি দিলাম তো সারা জীবন। তোমরা যে ১৮ লক্ষ টাকার কাজ করে ১০ লক্ষ টাকা লাভ করলা, ১০ টাকার জিলাপি কিনে তো পাবলিকরে খাওয়ালে না। খাইয়া যে একটু দোয়া কইরা দেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের। তোমার জায়গায় আমি হইলে সুদের উপরে টাকা আইনা আগে জিলাপি খাওয়াইতাম!’

আহা জিলাপি! আহা মানুষের প্রতি দরদ! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কেন এই কাজটি পেলেন, তাঁদের যোগ্যতা কী ছিল, তা নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলেছে কি না, জানা যায়নি। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার, ইটনা সদর ইউনিয়নের বলদা খেয়াঘাট থেকে শেরপুর ব্রিজ পর্যন্ত ১৪৮০ মিটার ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প-২-এর ব্রিজ ক্লোজিং ও বাঁধ মেরামত প্রকল্পটির সভাপতি এবং সদস্যসচিব হিসেবে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের মধ্যে ওসির সঙ্গে কথা বলা শান্তর নাম নেই। কিন্তু বিভিন্ন অনুসন্ধানে প্রকল্পটির সভাপতি নাজমুল ঠাকুরের সঙ্গে আফজাল হোসেন শান্তর সম্পর্কটিও পরিষ্কার হয়। আমরা শুধু এ কথাই বলতে চাই, সরকারি কাজে যে অনিয়মগুলোর কারণে জনসাধারণ ভোগে, সেগুলো অবিকল আগের মতোই রয়ে গেছে। যারা ক্ষমতায় আসে কিংবা ক্ষমতার আশপাশে ঘোরাঘুরি করে, তারা কীভাবে কীভাবে যেন জেনে যায়, কোথায় সরকারি কেনাকাটা কিংবা কাজ হচ্ছে।

কোথায় দেওয়া হচ্ছে দরপত্র। এবং কোনো ধরনের প্রশ্নের সামনে না পড়েই ক্ষমতার ভারে সেই টাকাপয়সার দুয়ার তার কাছে খুলে যাচ্ছে। তাই এই নির্দিষ্ট ওসিকে কিংবা নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে কষে বকা দিয়ে দিলেই কি মুশকিল আসান হয়ে যাবে? নতুন বন্দোবস্ত বলতে কি সেই পুরোনো বোতলে নতুন মদকেই বোঝাবে? আলামত যা দেখা যাচ্ছে, তাতে রাষ্ট্রের কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং বিভিন্ন কাঠামোয় নতুনেরা তাদের ভিত পোক্ত করছে। এই জিলাপি থেরাপি থেকে বের হওয়ার আপাত কোনো রাস্তা কি কেউ দেখতে পাচ্ছেন?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষার্থীদের ‘কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে’ সপরিবারে পালিয়েছেন বিএসবির বাশার

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ২৬, ভারতে ১০

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত