অরুণাভ পোদ্দার
একটি জাতির গর্বের বিশেষ কিছু দিন থাকে। তেমনি আমাদেরও কিছু বিশেষ দিন আছে যেগুলো নিয়ে আমরা গর্বিত। যেমন একুশে ফেব্রুয়ারি, ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর। বেদনার দিন আছে, যেমন বুদ্ধিজীবী দিবস ১৪ ডিসেম্বর।
এই দিনগুলো কোনো বিশেষ দলের না। একমাত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়, এমন কিছু গোষ্ঠী ছাড়া আপামর জাতি এই দিনগুলোকে মর্যাদার চোখে দেখে। ইতিহাসকে উপেক্ষা করে কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু এই দিনগুলোকে বিশেষ উদ্দেশ্যে কেউ যদি কুক্ষিগত করতে চায়, তার পরিণতি সুখকর হয় না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এই কথাগুলো শোনেনি বরং এ ব্যাপারে কেউ যদি সামান্যতম প্রতিবাদ করতেন, তাঁকে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকায় ট্যাগ করা হতো। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আগের সরকারগুলোও কিন্তু এই বিশেষ দিনগুলো ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ ভাবে পালন করত। আমার মনে আছে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু একপ্রকার অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার আড়ালে ছিলেন। জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের ৫৩ বছর পরেও আমরা যদি ন্যূনতম ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি, তবে এই একবিংশ শতকেও যুগের চাহিদার কাছে পিছিয়ে থাকব।
এবার বিজয়ের মাস ডিসেম্বর অত্যন্ত ম্রিয়মাণ। সরকারিভাবে নেই তেমন কোনো আয়োজন। অনেকটা দায়সারা গোছের সেই আয়োজন। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এগিয়ে আসতে পারছে না বা তাদের বিভিন্নভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বিজয় দিবস উদ্যাপনে। কিন্তু কথা হলো, এই বিজয় তো সমস্ত বাঙালি জাতির, মুষ্টিমেয় কিছু স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া সবাই তো এই বিজয়ের অংশীদার। তাহলে কাদের খুশি করতে এই অলিখিত বিধিনিষেধ? আগেও বলেছি, আবারও বলছি, ১৯৭১ সালে এই বিজয় না হলে আজকের এই বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো না। আমরা কথায় কথায় জাতীয় ঐক্যের কথা বলি, কিন্তু এই দ্বিধাবিভক্ত সমাজে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য ন্যূনতম যে ভিত্তি থাকা দরকার, তা কি আমরা মেনে চলি? বুঝলাম আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে জাতীয় অর্জনের সবকিছুতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। তাই বলে কি জাতীয় দিনগুলোকেও আমরা অস্বীকার করব? তা তো হবে চোরের ওপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়ার মতো অবস্থা। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টামণ্ডলীর সামনে জাতীয় ঐক্যের সুযোগ এসেছে। এখনো জাতি-ধর্ম-দল-মতনির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে সেই ঐক্য গড়ে তোলা যায়। স্বৈরাচারী একনায়ক ও তাদের দুর্নীতিবাজ দোসরদের বাদ দিয়ে সবাইকে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, দক্ষিণ আফ্রিকা তথা বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা কিন্তু বহু বছরের বর্ণবৈষম্যে জর্জরিত সমাজে শান্তি এনেছিলেন ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন’-এর মাধ্যমে। তিনিও ১৯৯৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য—১৯৭১, ১৯৯১, ২০০৮ সালেও সেই জাতীয় ঐক্যকে হেলায় পদদলিত করেছি। ২০২৪-এ এসে এত ত্যাগের বিনিময়ে যে গণতন্ত্রের জন্য আমাদের অগ্রযাত্রা, তা-ও বিঘ্নিত হয় কি না, সেটাই প্রশ্ন। সেই দ্বিধাবিভক্তির দিকেই আমরা এগিয়ে চলছি না তো?
মনে রাখতে হবে, ন্যূনতম জাতীয় ঐক্য গড়ে একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জগুলো যদি আমরা পার হতে না পারি, তবে বহিঃশক্তি বিভিন্নভাবে আমাদের পদানত করার চেষ্টা চালাবে। আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো ছাড়া এই বিশ্বে টিকে থাকা কঠিন। অধ্যাপক ইউনূস ক্ষমতায় আরোহণের পূর্বের ভাষণগুলোয় আমরা কিন্তু তাঁকে দারিদ্র্য, অসাম্য এগুলোর ব্যাপারে সোচ্চার হতে দেখেছি। তাঁর একটি জনপ্রিয় থিয়োরি ‘থ্রি জিরো’। এই থ্রি জিরো তত্ত্বে আমরা দেখি দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি। এই প্রতিশ্রুতি সময়ের দাবি। সময়ের প্রয়োজনে তাই পেছনের দিকে না তাকিয়ে দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে চাইলে ন্যূনতম জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে এগিয়ে যাওয়াই সমীচীন। সেই ন্যূনতম ঐক্যের প্রধান উপাদান হোক বাংলাদেশ ও তার গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ। এটাই হোক এই বিজয়ের মাসের অঙ্গীকার।
একটি জাতির গর্বের বিশেষ কিছু দিন থাকে। তেমনি আমাদেরও কিছু বিশেষ দিন আছে যেগুলো নিয়ে আমরা গর্বিত। যেমন একুশে ফেব্রুয়ারি, ৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর। বেদনার দিন আছে, যেমন বুদ্ধিজীবী দিবস ১৪ ডিসেম্বর।
এই দিনগুলো কোনো বিশেষ দলের না। একমাত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়, এমন কিছু গোষ্ঠী ছাড়া আপামর জাতি এই দিনগুলোকে মর্যাদার চোখে দেখে। ইতিহাসকে উপেক্ষা করে কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু এই দিনগুলোকে বিশেষ উদ্দেশ্যে কেউ যদি কুক্ষিগত করতে চায়, তার পরিণতি সুখকর হয় না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এই কথাগুলো শোনেনি বরং এ ব্যাপারে কেউ যদি সামান্যতম প্রতিবাদ করতেন, তাঁকে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকায় ট্যাগ করা হতো। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আগের সরকারগুলোও কিন্তু এই বিশেষ দিনগুলো ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ ভাবে পালন করত। আমার মনে আছে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু একপ্রকার অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার আড়ালে ছিলেন। জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের ৫৩ বছর পরেও আমরা যদি ন্যূনতম ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি, তবে এই একবিংশ শতকেও যুগের চাহিদার কাছে পিছিয়ে থাকব।
এবার বিজয়ের মাস ডিসেম্বর অত্যন্ত ম্রিয়মাণ। সরকারিভাবে নেই তেমন কোনো আয়োজন। অনেকটা দায়সারা গোছের সেই আয়োজন। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এগিয়ে আসতে পারছে না বা তাদের বিভিন্নভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বিজয় দিবস উদ্যাপনে। কিন্তু কথা হলো, এই বিজয় তো সমস্ত বাঙালি জাতির, মুষ্টিমেয় কিছু স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া সবাই তো এই বিজয়ের অংশীদার। তাহলে কাদের খুশি করতে এই অলিখিত বিধিনিষেধ? আগেও বলেছি, আবারও বলছি, ১৯৭১ সালে এই বিজয় না হলে আজকের এই বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো না। আমরা কথায় কথায় জাতীয় ঐক্যের কথা বলি, কিন্তু এই দ্বিধাবিভক্ত সমাজে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য ন্যূনতম যে ভিত্তি থাকা দরকার, তা কি আমরা মেনে চলি? বুঝলাম আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে জাতীয় অর্জনের সবকিছুতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। তাই বলে কি জাতীয় দিনগুলোকেও আমরা অস্বীকার করব? তা তো হবে চোরের ওপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়ার মতো অবস্থা। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টামণ্ডলীর সামনে জাতীয় ঐক্যের সুযোগ এসেছে। এখনো জাতি-ধর্ম-দল-মতনির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে সেই ঐক্য গড়ে তোলা যায়। স্বৈরাচারী একনায়ক ও তাদের দুর্নীতিবাজ দোসরদের বাদ দিয়ে সবাইকে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, দক্ষিণ আফ্রিকা তথা বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা কিন্তু বহু বছরের বর্ণবৈষম্যে জর্জরিত সমাজে শান্তি এনেছিলেন ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন’-এর মাধ্যমে। তিনিও ১৯৯৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য—১৯৭১, ১৯৯১, ২০০৮ সালেও সেই জাতীয় ঐক্যকে হেলায় পদদলিত করেছি। ২০২৪-এ এসে এত ত্যাগের বিনিময়ে যে গণতন্ত্রের জন্য আমাদের অগ্রযাত্রা, তা-ও বিঘ্নিত হয় কি না, সেটাই প্রশ্ন। সেই দ্বিধাবিভক্তির দিকেই আমরা এগিয়ে চলছি না তো?
মনে রাখতে হবে, ন্যূনতম জাতীয় ঐক্য গড়ে একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জগুলো যদি আমরা পার হতে না পারি, তবে বহিঃশক্তি বিভিন্নভাবে আমাদের পদানত করার চেষ্টা চালাবে। আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো ছাড়া এই বিশ্বে টিকে থাকা কঠিন। অধ্যাপক ইউনূস ক্ষমতায় আরোহণের পূর্বের ভাষণগুলোয় আমরা কিন্তু তাঁকে দারিদ্র্য, অসাম্য এগুলোর ব্যাপারে সোচ্চার হতে দেখেছি। তাঁর একটি জনপ্রিয় থিয়োরি ‘থ্রি জিরো’। এই থ্রি জিরো তত্ত্বে আমরা দেখি দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি। এই প্রতিশ্রুতি সময়ের দাবি। সময়ের প্রয়োজনে তাই পেছনের দিকে না তাকিয়ে দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে চাইলে ন্যূনতম জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে এগিয়ে যাওয়াই সমীচীন। সেই ন্যূনতম ঐক্যের প্রধান উপাদান হোক বাংলাদেশ ও তার গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ। এটাই হোক এই বিজয়ের মাসের অঙ্গীকার।
রুমিন ফারহানা বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও রাজনীতি বিশ্লেষক। তিনি সংরক্ষিত নারী আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
৩ ঘণ্টা আগেদেশে প্রতিবছর বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। বাস্তবায়নের সময় মাঝে মাঝে সংবাদ চোখে পড়ে যে প্রকল্পের ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে গাছ কাটা পড়ছে, বনভূমি উজাড় হচ্ছে, খাল ও জলাভূমি ভরাট হচ্ছে, নির্মাণস্থলে নির্মাণকাজের ফলে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, এমনকি কোনো কোনো প্রকল্প গ্রহণের ফলে পরিবেশের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব...
৩ ঘণ্টা আগেপাহাড় রক্ষা করা যখন খুবই জরুরি, তখন সে পাহাড় কেটে গোটা অঞ্চলের জন্য বিপদ ডেকে আনছে একদল দুর্বৃত্ত। খাগড়াছড়ির পানছড়ি এলাকায় অবাধে পাহাড় কাটা হচ্ছে, অথচ সরকারি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্টা করছেন।
৩ ঘণ্টা আগে১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মওলানা ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন শেখ মুজিবুর রহমান জেলে ছিলেন, তাঁকে করা হয়েছিল দলের যুগ্ম সম্পাদক। পরবর্তী সময়ে শামসুল হক অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানকে দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
১ দিন আগে