মামুনুর রশীদ
একাত্তরের ডিসেম্বরের শীত এখনো যেন গায়ে লেগে আছে। আবার একই সঙ্গে শীতের মধ্যে উষ্ণতার কথাটাও মনে পড়ে—ঢাকার পতন হচ্ছে, বিজাতীয় পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের, নৃশংসতার অবসান হচ্ছে। অন্যদিকে, আমাদের পতাকা যে শকুনেরা খামচে ধরেছিল, তা-ও মুক্ত হচ্ছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ছিলাম। বিজয়ের সংবাদ আসছে। সেই সঙ্গে স্বজন হারানোর সংবাদও আসছে।
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পার হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক ঘনিষ্ঠ পরিচিতজনের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাই। আমি সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিলাম শহীদুল্লা কায়সারের সঙ্গে। প্রায় তিন বছর ধরে তাঁর সংশপ্তক উপন্যাসের নাট্যরূপ দিচ্ছিলাম। প্রায়ই সকালবেলা যেতাম তাঁর কায়েতটুলীর বাড়িতে। আমি যেতেই দেখতাম কায়সার ভাই স্যুট-টাই পরে প্রস্তুত। নাশতা শেষ পর্যায়ে। কোলে তাঁর কন্যাসন্তান। দুধ খাওয়াচ্ছেন। ভাবি আমাকে নাশতার জন্য আমন্ত্রণ জানাতেন। আমি নাশতা খাব না, তবে ছানা খাব। প্রত্যহই প্রাতরাশের সময় কায়সার ভাই ছানা খেতেন। ওটাতে আমার আগ্রহ। ছানা খেয়ে আমি নাট্যরূপের পাণ্ডুলিপি নিয়ে প্রস্তুত। কিন্তু কায়সার ভাই প্রায়ই বলতেন, ‘চল, অফিসে যাই। অনেক ঝামেলা আছে।’ তাঁর একটা ফক্সওয়াগন গাড়ি ছিল। তিনি নিজেই চালাতেন। তাঁর পাশে বসেই বংশালের সংবাদ অফিসে যেতাম। দোতলায় তাঁর অফিসকক্ষ। জনাকীর্ণ অফিস। প্রচুর সমস্যা। এর মধ্যেই তিনি বলতেন, ‘চা খাও।’ সংবাদপত্র অফিসের সেই চা অনেকটাই পাচনের মতো। তারপর বলতেন, ‘আজকে হবে না মামুন। কালকে বাসায় আসো আরও সকালে।’
ইতিমধ্যেই সংশপ্তক খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চলচ্চিত্রের তারকারা অভিনয় করছেন। সেই সঙ্গে বাঙালির গণজীবনের রূপায়ণ হচ্ছে। কিন্তু একাত্তরের প্রথমেই ধারাবাহিকটি বন্ধ করে দিতে হলো। মার্চ মাসের গোড়া থেকেই যেন একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। আমরা নামলাম আমাদের গণজাগরণের অস্ত্র নিয়ে—নাটক, গান, কথকতা, আবৃত্তি। ঢাকা টেলিভিশন যেন স্বাধীনতার এক দুর্জয় সেনা দলের নাম। তখনো কায়সার ভাইয়ের বাড়ি যাই। বলাবলি করি—কী হবে, কী হবে। এরপর তো ২৫ মার্চের ভয়াবহতা হয়ে গেল। তারপরও আমি যাই কায়সার ভাইয়ের কায়েতটুলীর সেই বাড়িতে।
আমি যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। শেষ দেখা করতে গেলাম। তাঁর অনুজ জহির রায়হান চলে গেছেন, অনুরোধ করলাম, ‘আপনিও চলুন।’ কায়সার ভাই কী যেন চিন্তা করলেন। বললেন, ‘তুমি যাও, আমি আরেকটু ভেবে দেখি।’ আশীর্বাদ করলেন। আমি চলে গেলাম। পরে জহির রায়হানকেও এ কথা বলেছি। তিনিও এ কথা তাঁর অগ্রজকে বলেছেন এবং একই নির্লিপ্ত কণ্ঠে কায়সার ভাই বলেছেন, ‘দেখি’। সেই ‘দেখি’র পরিণতি দেখা গেল ডিসেম্বরের এই সপ্তাহে।
আরেকজন ছিলেন, মুনীর চৌধুরী। অধ্যাপনা, পাণ্ডিত্য—এসবের বাইরেও ছিল তাঁর নাট্যমনস্কতা। আধুনিক নাট্যমনস্কতার তিনি প্রচারক। তিনিও ঢাকার বাড়িটাকেই ভেবেছেন নিরাপদ। সেই নিরাপত্তা যে ভয়ংকর, তা এ সময়ে এসেই বুঝলেন। না, আসলে বোঝেননি। আমরা পরে বুঝেছি, আমরা কী হারিয়েছি। ডা. ফজলে রাব্বি, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, প্রবাদপ্রতিম চক্ষু চিকিৎসক ডা. আলীম চৌধুরী, ডা. মোর্তুজাসহ আরও অনেককেই হারিয়েছি আমরা।
পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের পর জহির রায়হান দ্রুতই দেশে ফিরে আসেন এবং অগ্রজকে খোঁজ করতে গিয়ে নিজেই হারিয়ে গেলেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস হলো বটে, কিন্তু আমরা ফিরে এলাম একটা প্রবল বিষণ্নতা নিয়ে। আমাদের কিছু শ্রেষ্ঠ সন্তান হারিয়ে গেছেন। শত্রুরা বুঝতে পেরেছিল একটা জাতিকে মেধাশূন্য করতে পারলে মেরুদণ্ড সোজা করে কখনো দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু বাঙালি জাতি বারবার মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়েছে। তবে একাত্তরের সেই যোদ্ধা তরুণদের যে অঙ্গীকার, স্বাধীনতার জন্য যেসব দুঃসাহসিক অভিযান—তার তুলনা আর মেলেনি।
আমি নাটকের মানুষ। স্বাধীনতার পরপরই লেগে যাই নাটকের আন্দোলনে। যুদ্ধফেরত মুক্তিযোদ্ধারাও এর মধ্যে যুক্ত হয়ে যান। যুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের যোদ্ধারা। এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সব জায়গায় একটা আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। অসংখ্য নাটক রচিত হয় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। সেগুলো অভিনীত হয়। সেই সঙ্গে চলে প্রশিক্ষণ, যার অর্থ ভবিষ্যতের প্রস্তুতি। একটা দেশে যেখানে কোনো অবকাঠামো নেই, মানে অভিনয়-উপযোগী মঞ্চ নেই; নাটক, পরিচালক ও অভিনেতা নেই নিয়মিত মঞ্চায়নের জন্য, সেখানে এসব কী করে ঘটল?
এরপর সামরিক শাসন এসেছে। স্বৈরাচার এসেছে। কিন্তু নাটক সেখানেও প্রস্তুত। একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হাজার হাজার নাট্যকর্মী মাঠে নেমে এল। মঞ্চনাটকের বাইরেও পথনাটক, মুক্ত নাটক, গ্রুপ থিয়েটার—সব দলের কর্মী। এ এক তুলকালাম কাণ্ড! শহর, গ্রাম একাকার হয়ে গেল। মুক্ত নাটক সামাজিক ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছে নাটককে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, দেশের রাজনীতি কি এসব বিষয় নিয়ে ভাবছে? ভাবছে না, আজও ভাবছে না। মানুষের চিন্তার গভীরে এসব যে কীভাবে ক্রিয়া করে—এসব নিয়ে ভাববার কোনো অবকাশ নেই রাজনীতিবিদদের কর্মকাণ্ডে। যাদের কাছ থেকে এসব নিয়ে প্রত্যাশা করেছিলাম, সেই বাম দলগুলোও এসব নিয়ে মনে-প্রাণে উদাসীন। তাই ‘একলা চলো’র নীতি নিয়ে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় কাটিয়ে দিলাম।
এখনকার যে মেরুকরণ দেখছি, তা তো একেবারেই জনস্বার্থবিরোধী। এরপরেও সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নাটক একটা বিস্ময়—কী করে একটা দরিদ্র দেশ, অভিনেতা-কলাকুশলীদের একটা জায়গাও দেয়নি কিন্তু প্রতিদিন মঞ্চে নাটক করছে! শুধু তা-ই নয়, ৩৬৫ দিন কোথাও না কোথাও মহড়াকক্ষগুলো পূর্ণ থাকছে। মানুষের অবদমিত আকাঙ্ক্ষাগুলোর পূর্ণ প্রকাশ ঘটে নাটকে। পৃথিবীর সব মনীষীও নাটক লেখা এবং তার অভিনয়ের জন্য উদ্গ্রীব থাকতেন। সবাই মনে করতেন, মানুষের কাছে পৌঁছানোর একটা বড় মাধ্যম নাটক। অন্য কোনো শিল্পমাধ্যম এত দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনীতির বাম বা ডানরা এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারেননি। এই মাধ্যমটিকে ব্যবহারই করলেন না তাঁরা। এর গুরুত্বটাও বুঝলেন না।
বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমি নাটককে যেমন ছোট করে দেখছে, তেমনি টেনে আনছে অদ্ভুত এক শিল্পমাধ্যম—কাওয়ালি। কাওয়ালি কোন বিবেচনায় এ দেশের সংস্কৃতি? ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন জেলায় কাওয়ালি মাহফিল করা হচ্ছে। কী ভয়ংকর এই উদ্যোগ! সংস্কৃতি মানবদেহের মতোই। যা কিছু বর্জন করার প্রয়োজন তা সে অবলীলায় নানাভাবে বর্জন করে। এটাও বর্জিত হবে। মাঝখানে কিছু জনগণের অর্থের অপচয় করা হবে। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে পাকিস্তান এগুলো করেছে। এই কথাটি কেন তারা মনে করল না, এটাই প্রশ্ন।
একাত্তরের ডিসেম্বরের শীত এখনো যেন গায়ে লেগে আছে। আবার একই সঙ্গে শীতের মধ্যে উষ্ণতার কথাটাও মনে পড়ে—ঢাকার পতন হচ্ছে, বিজাতীয় পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের, নৃশংসতার অবসান হচ্ছে। অন্যদিকে, আমাদের পতাকা যে শকুনেরা খামচে ধরেছিল, তা-ও মুক্ত হচ্ছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ছিলাম। বিজয়ের সংবাদ আসছে। সেই সঙ্গে স্বজন হারানোর সংবাদও আসছে।
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পার হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক ঘনিষ্ঠ পরিচিতজনের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাই। আমি সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিলাম শহীদুল্লা কায়সারের সঙ্গে। প্রায় তিন বছর ধরে তাঁর সংশপ্তক উপন্যাসের নাট্যরূপ দিচ্ছিলাম। প্রায়ই সকালবেলা যেতাম তাঁর কায়েতটুলীর বাড়িতে। আমি যেতেই দেখতাম কায়সার ভাই স্যুট-টাই পরে প্রস্তুত। নাশতা শেষ পর্যায়ে। কোলে তাঁর কন্যাসন্তান। দুধ খাওয়াচ্ছেন। ভাবি আমাকে নাশতার জন্য আমন্ত্রণ জানাতেন। আমি নাশতা খাব না, তবে ছানা খাব। প্রত্যহই প্রাতরাশের সময় কায়সার ভাই ছানা খেতেন। ওটাতে আমার আগ্রহ। ছানা খেয়ে আমি নাট্যরূপের পাণ্ডুলিপি নিয়ে প্রস্তুত। কিন্তু কায়সার ভাই প্রায়ই বলতেন, ‘চল, অফিসে যাই। অনেক ঝামেলা আছে।’ তাঁর একটা ফক্সওয়াগন গাড়ি ছিল। তিনি নিজেই চালাতেন। তাঁর পাশে বসেই বংশালের সংবাদ অফিসে যেতাম। দোতলায় তাঁর অফিসকক্ষ। জনাকীর্ণ অফিস। প্রচুর সমস্যা। এর মধ্যেই তিনি বলতেন, ‘চা খাও।’ সংবাদপত্র অফিসের সেই চা অনেকটাই পাচনের মতো। তারপর বলতেন, ‘আজকে হবে না মামুন। কালকে বাসায় আসো আরও সকালে।’
ইতিমধ্যেই সংশপ্তক খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চলচ্চিত্রের তারকারা অভিনয় করছেন। সেই সঙ্গে বাঙালির গণজীবনের রূপায়ণ হচ্ছে। কিন্তু একাত্তরের প্রথমেই ধারাবাহিকটি বন্ধ করে দিতে হলো। মার্চ মাসের গোড়া থেকেই যেন একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। আমরা নামলাম আমাদের গণজাগরণের অস্ত্র নিয়ে—নাটক, গান, কথকতা, আবৃত্তি। ঢাকা টেলিভিশন যেন স্বাধীনতার এক দুর্জয় সেনা দলের নাম। তখনো কায়সার ভাইয়ের বাড়ি যাই। বলাবলি করি—কী হবে, কী হবে। এরপর তো ২৫ মার্চের ভয়াবহতা হয়ে গেল। তারপরও আমি যাই কায়সার ভাইয়ের কায়েতটুলীর সেই বাড়িতে।
আমি যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। শেষ দেখা করতে গেলাম। তাঁর অনুজ জহির রায়হান চলে গেছেন, অনুরোধ করলাম, ‘আপনিও চলুন।’ কায়সার ভাই কী যেন চিন্তা করলেন। বললেন, ‘তুমি যাও, আমি আরেকটু ভেবে দেখি।’ আশীর্বাদ করলেন। আমি চলে গেলাম। পরে জহির রায়হানকেও এ কথা বলেছি। তিনিও এ কথা তাঁর অগ্রজকে বলেছেন এবং একই নির্লিপ্ত কণ্ঠে কায়সার ভাই বলেছেন, ‘দেখি’। সেই ‘দেখি’র পরিণতি দেখা গেল ডিসেম্বরের এই সপ্তাহে।
আরেকজন ছিলেন, মুনীর চৌধুরী। অধ্যাপনা, পাণ্ডিত্য—এসবের বাইরেও ছিল তাঁর নাট্যমনস্কতা। আধুনিক নাট্যমনস্কতার তিনি প্রচারক। তিনিও ঢাকার বাড়িটাকেই ভেবেছেন নিরাপদ। সেই নিরাপত্তা যে ভয়ংকর, তা এ সময়ে এসেই বুঝলেন। না, আসলে বোঝেননি। আমরা পরে বুঝেছি, আমরা কী হারিয়েছি। ডা. ফজলে রাব্বি, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, প্রবাদপ্রতিম চক্ষু চিকিৎসক ডা. আলীম চৌধুরী, ডা. মোর্তুজাসহ আরও অনেককেই হারিয়েছি আমরা।
পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের পর জহির রায়হান দ্রুতই দেশে ফিরে আসেন এবং অগ্রজকে খোঁজ করতে গিয়ে নিজেই হারিয়ে গেলেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস হলো বটে, কিন্তু আমরা ফিরে এলাম একটা প্রবল বিষণ্নতা নিয়ে। আমাদের কিছু শ্রেষ্ঠ সন্তান হারিয়ে গেছেন। শত্রুরা বুঝতে পেরেছিল একটা জাতিকে মেধাশূন্য করতে পারলে মেরুদণ্ড সোজা করে কখনো দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু বাঙালি জাতি বারবার মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়েছে। তবে একাত্তরের সেই যোদ্ধা তরুণদের যে অঙ্গীকার, স্বাধীনতার জন্য যেসব দুঃসাহসিক অভিযান—তার তুলনা আর মেলেনি।
আমি নাটকের মানুষ। স্বাধীনতার পরপরই লেগে যাই নাটকের আন্দোলনে। যুদ্ধফেরত মুক্তিযোদ্ধারাও এর মধ্যে যুক্ত হয়ে যান। যুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের যোদ্ধারা। এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সব জায়গায় একটা আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। অসংখ্য নাটক রচিত হয় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। সেগুলো অভিনীত হয়। সেই সঙ্গে চলে প্রশিক্ষণ, যার অর্থ ভবিষ্যতের প্রস্তুতি। একটা দেশে যেখানে কোনো অবকাঠামো নেই, মানে অভিনয়-উপযোগী মঞ্চ নেই; নাটক, পরিচালক ও অভিনেতা নেই নিয়মিত মঞ্চায়নের জন্য, সেখানে এসব কী করে ঘটল?
এরপর সামরিক শাসন এসেছে। স্বৈরাচার এসেছে। কিন্তু নাটক সেখানেও প্রস্তুত। একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হাজার হাজার নাট্যকর্মী মাঠে নেমে এল। মঞ্চনাটকের বাইরেও পথনাটক, মুক্ত নাটক, গ্রুপ থিয়েটার—সব দলের কর্মী। এ এক তুলকালাম কাণ্ড! শহর, গ্রাম একাকার হয়ে গেল। মুক্ত নাটক সামাজিক ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছে নাটককে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, দেশের রাজনীতি কি এসব বিষয় নিয়ে ভাবছে? ভাবছে না, আজও ভাবছে না। মানুষের চিন্তার গভীরে এসব যে কীভাবে ক্রিয়া করে—এসব নিয়ে ভাববার কোনো অবকাশ নেই রাজনীতিবিদদের কর্মকাণ্ডে। যাদের কাছ থেকে এসব নিয়ে প্রত্যাশা করেছিলাম, সেই বাম দলগুলোও এসব নিয়ে মনে-প্রাণে উদাসীন। তাই ‘একলা চলো’র নীতি নিয়ে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় কাটিয়ে দিলাম।
এখনকার যে মেরুকরণ দেখছি, তা তো একেবারেই জনস্বার্থবিরোধী। এরপরেও সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নাটক একটা বিস্ময়—কী করে একটা দরিদ্র দেশ, অভিনেতা-কলাকুশলীদের একটা জায়গাও দেয়নি কিন্তু প্রতিদিন মঞ্চে নাটক করছে! শুধু তা-ই নয়, ৩৬৫ দিন কোথাও না কোথাও মহড়াকক্ষগুলো পূর্ণ থাকছে। মানুষের অবদমিত আকাঙ্ক্ষাগুলোর পূর্ণ প্রকাশ ঘটে নাটকে। পৃথিবীর সব মনীষীও নাটক লেখা এবং তার অভিনয়ের জন্য উদ্গ্রীব থাকতেন। সবাই মনে করতেন, মানুষের কাছে পৌঁছানোর একটা বড় মাধ্যম নাটক। অন্য কোনো শিল্পমাধ্যম এত দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনীতির বাম বা ডানরা এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারেননি। এই মাধ্যমটিকে ব্যবহারই করলেন না তাঁরা। এর গুরুত্বটাও বুঝলেন না।
বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমি নাটককে যেমন ছোট করে দেখছে, তেমনি টেনে আনছে অদ্ভুত এক শিল্পমাধ্যম—কাওয়ালি। কাওয়ালি কোন বিবেচনায় এ দেশের সংস্কৃতি? ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন জেলায় কাওয়ালি মাহফিল করা হচ্ছে। কী ভয়ংকর এই উদ্যোগ! সংস্কৃতি মানবদেহের মতোই। যা কিছু বর্জন করার প্রয়োজন তা সে অবলীলায় নানাভাবে বর্জন করে। এটাও বর্জিত হবে। মাঝখানে কিছু জনগণের অর্থের অপচয় করা হবে। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে পাকিস্তান এগুলো করেছে। এই কথাটি কেন তারা মনে করল না, এটাই প্রশ্ন।
মনজিল মোরসেদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র অ্যাডভোকেট। তিনি ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ (এইচআরপিবি)-এর প্রেসিডেন্ট। জনস্বার্থে এ পর্যন্ত তিনি ২২৫টির বেশি মামলা করে মানবাধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।
৫ ঘণ্টা আগেজুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই দ্রুত নির্বাচন এবং অন্তর্বর্তী সরকার যাতে বেশি দিন ক্ষমতায় না থাকে, সে বিষয়ে সোচ্চার বিএনপি। এমনকি সরকার যেসব প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলোও নির্বাচিত সরকার ছাড়া বাস্তবায়ন করা যাবে না বলে দলটি মনে করে।
৬ ঘণ্টা আগেজয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলায় যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে, সে ঘটনায় আর যাই হোক আক্কেলের কোনো পরিচয় দেখা যাচ্ছে না। সোজা কথায়, এটা বেআক্কেলি কর্মকাণ্ড। জয়পুরহাট ও রংপুরের নারী ফুটবল দলের মধ্যে ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়েছিল ২৯ জানুয়ারি।
৬ ঘণ্টা আগেজুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) যে তদন্ত করেছে, ২৭ জানুয়ারি সে তদন্তের ৫৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এইচআরডব্লিউর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে...
১ দিন আগে