আবু তাহের খান
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে আগের ১৫.৫ শতাংশের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে চীন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও ইসরায়েলের ক্ষেত্রে আরোপিত এ শুল্কহার হচ্ছে যথাক্রমে ৩৪, ২৬, ২৯, ৪৬, ৪৪ ও ১৭ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ দফায় দায়িত্বভার গ্রহণের আগে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন, যার সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই যুক্ত হয়েছিল রাশিয়া ও কানাডা। অবশ্য পরে রাশিয়া ও কানাডার ওপর থেকে তা বহুলাংশে কমিয়ে আনা হয়। তবে এ দফায় যেভাবে তিনি চীনসহ অনেক দেশের ওপর একযোগে বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেন, তাতে করে বাংলাদেশসহ সেসব দেশের রপ্তানিকারক, সরকার, এমনকি সাধারণ জনগণের অন্তরাত্মাও একসঙ্গে কেঁপে উঠেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য পর্যালোচনার মাধ্যমে এ হারের ক্ষেত্রে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটানোর এখনো যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা দুই-ই রয়েছে এবং পৃথিবীর অনেক দেশই যে তা করে কিছুটা হলেও সফলকাম হবে, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। আর এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক দূতিয়ালির মাধ্যমে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে কতটা কী করতে পারবে, সেটাও ভাবনার বিষয়। উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ হার কমিয়ে আনা হবে।
বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির বার্ষিক পরিমাণ এখন কমবেশি সাড়ে ৮০০ কোটি ডলারের মতো। ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ ক্ষেত্রে প্রকৃত পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮৫৮ কোটি ডলার ও ৭৩৪ কোটি ডলার। ২০৩০ সাল নাগাদ এ পরিমাণকে ১ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে ইতিপূর্বে প্রদত্ত ঘোষণায় দাবি করা হয়েছে। এ অবস্থায় বর্ধিত আমদানি শুল্ক আরোপসংক্রান্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার হয়তো ওই লক্ষ্যমাত্রা বহাল রাখা নিয়ে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তা বোধ করবে। আমার অভিমত হচ্ছে, বিষয়টি দুশ্চিন্তার হলেও লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ফেলাটা মোটেও সমীচীন হবে না। বরং লক্ষ্যমাত্রা অক্ষুণ্ন রেখে কীভাবে তা অর্জন করা যায়, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবা জরুরি। তবে তা করতে গিয়ে কোনোভাবেই এ পরিস্থিতিকে করোনাকালীন বা ইউক্রেন যুদ্ধের সময়কার মতো সুবিধা ও ফায়দা লোটার অছিলা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না, যা করার আশঙ্কা যথেষ্টই রয়েছে।
বাংলাদেশের গত সাড়ে পাঁচ দশকের উদ্যোক্তা-সংস্কৃতি বলে যে, ট্রাম্পের এ উচ্চ শুল্কহার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা, বিশেষত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের শিগগিরই সরকারের কাছে বাড়তি নগদ প্রণোদনা, কর হ্রাস, ঋণের সুদ মওকুফ ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধার দাবি উত্থাপনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আর ব্যবসায়ী ও আমলা প্রভাবিত সরকার যে তাদের সেসব দাবিদাওয়ার প্রতি যথেষ্টই সহানুভূতিশীল হবে, সে আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সে আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হোক, সেটি শুধু কাম্যই নয়—দেশের জনগণ ও অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে অপরিহার্যও। কিন্তু ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার সে অপরিহার্যতা রক্ষায় কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে বা রাখতে পারবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী বাণিজ্য উপদেষ্টার প্রতি বিনীত অনুরোধ—ব্যবসায়ীদের স্বার্থ অবশ্যই দেখতে হবে, তবে তা কোনোভাবেই দেশ, জনগণ ও অর্থনীতির সামগ্রিক স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে নয়। অনুরোধ থাকবে, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কহার মোকাবিলার জন্য দয়া করে নগদ প্রণোদনা বৃদ্ধির দিকে ঝুঁকবেন না। বরং প্রণোদনাবহির্ভূত অন্য ক্ষেত্রগুলোতে গতি ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করাই হবে উত্তম পন্থা। কিন্তু তা না করে যদি নগদ প্রণোদনা বাড়ানোর দিকে যাওয়া হয়, তাহলে বিপুল রাজস্ব ঘাটতির এ দেশে সেটি হবে স্পষ্টতই একটি জনস্বার্থবিরোধী উদ্যোগ।
আর সে ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন ক. দেশের সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে বিরাজমান অনিয়ম, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও দীর্ঘসূত্রতা দূরীকরণের মাধ্যমে পরিবহন-সময় ও পরিবহন-ব্যয় কমিয়ে আনা; খ. কর ও শুল্কসংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় দপ্তরগুলোকে উদ্যোক্তা-স্বার্থের অনুগামী করে ঢেলে সাজানো; গ. রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), ব্যবসায় উন্নয়ন পর্ষদ (বিপিসি) ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট অন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের বাড়তি তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা; ঘ. রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানিকে সহজতর করার লক্ষ্যে আমদানি প্রাপ্যতা (এনটাইটেলমেন্ট) নির্ধারণ, ঋণপত্র (লেটার অব ক্রেডিট-এলসি) খোলা, শুল্কের পরিমাণ নির্ধারণ, পণ্য খালাস ইত্যাদি কাজগুলোকে হয়রানিমুক্ত ও ত্বরান্বিত করা; ঙ. অভ্যন্তরীণ পরিবহনব্যবস্থাকে চাঁদাবাজি ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত রাখা ইত্যাদি।
বিরাজমান কাঠামোর আওতায় ওপরে যেসব সংশোধন ও সমন্বয়মূলক (অ্যাডজাস্টমেন্ট) ব্যবস্থাদির কথা উল্লেখ করা হলো, সেগুলোর অধিকাংশই তাৎক্ষণিক প্রকৃতির। এর বাইরে রপ্তানি উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা থেকে এসবের পাশাপাশি অন্য যেসব ব্যবস্থাদির কথা জরুরি ভিত্তিতে ভাবা প্রয়োজন, সে-সংক্রান্ত কতিপয় প্রস্তাবও রাষ্ট্রের বিবেচনার জন্য এখানে তুলে ধরা হলো। এক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাইরে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি পণ্যের বিকল্প বাজার খুঁজে বের করতে হবে। দুই. তৈরি পোশাকের বাইরে নতুন রপ্তানি পণ্য খুঁজে বের করতে হবে, যেগুলো রপ্তানি মাধ্যমে তৈরি পোশাকের ওপর থেকে একক নির্ভরতা হ্রাস করা সম্ভব হবে (বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই)। তিন. ওষুধ, চামড়াজাত দ্রব্যাদি ও এ-জাতীয় রপ্তানি সম্ভাবনাময় পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে, যেগুলো তাদের উচ্চ মূল্যমানের কারণে স্বল্প রপ্তানি করেও দ্রুত আয় বাড়াতে সক্ষম। চার. পণ্যের গুণগত মান ও উৎপাদনশীলতা উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের তাগিদ ও সহায়তা দুই-ই দিতে হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে ইচ্ছুক বিভিন্ন পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকলেও তাতে আতঙ্কিত হওয়াটা মোটেও সমীচীন হবে না। বরং আতঙ্কিত না হয়ে যত দ্রুত সম্ভব কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এ শুল্কহার কার্যকর হওয়ার আগেই তা কমিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। আসলে মানদণ্ডটিই এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বরাজনীতি সফলতা পায়। আর সে কারণেই ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ শুল্কহার ৪৬, ৪৪ ও ৩৭ শতাংশ হলেও ইসরায়েল বা যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে তা মাত্র ১৭ ও ১০ শতাংশ। তাই কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর সময় এ বিষয়গুলোকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ তুলনা (রেফারেন্স) হিসেবে টেনে আনতে হবে। তদুপরি ট্রাম্পের এসব একতরফা পদক্ষেপ যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর স্বাক্ষরিত কোনো কোনো প্রটোকলের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ, সেটিও উল্লেখ করতে হবে।
মোটকথা, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক শুল্ক আরোপের বিষয়টিকে মোকাবিলা করতে হবে অতি সূক্ষ্ম কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে আগের ১৫.৫ শতাংশের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে চীন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও ইসরায়েলের ক্ষেত্রে আরোপিত এ শুল্কহার হচ্ছে যথাক্রমে ৩৪, ২৬, ২৯, ৪৬, ৪৪ ও ১৭ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ দফায় দায়িত্বভার গ্রহণের আগে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন, যার সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই যুক্ত হয়েছিল রাশিয়া ও কানাডা। অবশ্য পরে রাশিয়া ও কানাডার ওপর থেকে তা বহুলাংশে কমিয়ে আনা হয়। তবে এ দফায় যেভাবে তিনি চীনসহ অনেক দেশের ওপর একযোগে বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেন, তাতে করে বাংলাদেশসহ সেসব দেশের রপ্তানিকারক, সরকার, এমনকি সাধারণ জনগণের অন্তরাত্মাও একসঙ্গে কেঁপে উঠেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য পর্যালোচনার মাধ্যমে এ হারের ক্ষেত্রে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটানোর এখনো যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা দুই-ই রয়েছে এবং পৃথিবীর অনেক দেশই যে তা করে কিছুটা হলেও সফলকাম হবে, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। আর এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক দূতিয়ালির মাধ্যমে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে কতটা কী করতে পারবে, সেটাও ভাবনার বিষয়। উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ হার কমিয়ে আনা হবে।
বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির বার্ষিক পরিমাণ এখন কমবেশি সাড়ে ৮০০ কোটি ডলারের মতো। ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ ক্ষেত্রে প্রকৃত পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮৫৮ কোটি ডলার ও ৭৩৪ কোটি ডলার। ২০৩০ সাল নাগাদ এ পরিমাণকে ১ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে ইতিপূর্বে প্রদত্ত ঘোষণায় দাবি করা হয়েছে। এ অবস্থায় বর্ধিত আমদানি শুল্ক আরোপসংক্রান্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার হয়তো ওই লক্ষ্যমাত্রা বহাল রাখা নিয়ে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তা বোধ করবে। আমার অভিমত হচ্ছে, বিষয়টি দুশ্চিন্তার হলেও লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ফেলাটা মোটেও সমীচীন হবে না। বরং লক্ষ্যমাত্রা অক্ষুণ্ন রেখে কীভাবে তা অর্জন করা যায়, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবা জরুরি। তবে তা করতে গিয়ে কোনোভাবেই এ পরিস্থিতিকে করোনাকালীন বা ইউক্রেন যুদ্ধের সময়কার মতো সুবিধা ও ফায়দা লোটার অছিলা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না, যা করার আশঙ্কা যথেষ্টই রয়েছে।
বাংলাদেশের গত সাড়ে পাঁচ দশকের উদ্যোক্তা-সংস্কৃতি বলে যে, ট্রাম্পের এ উচ্চ শুল্কহার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা, বিশেষত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের শিগগিরই সরকারের কাছে বাড়তি নগদ প্রণোদনা, কর হ্রাস, ঋণের সুদ মওকুফ ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধার দাবি উত্থাপনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আর ব্যবসায়ী ও আমলা প্রভাবিত সরকার যে তাদের সেসব দাবিদাওয়ার প্রতি যথেষ্টই সহানুভূতিশীল হবে, সে আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সে আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হোক, সেটি শুধু কাম্যই নয়—দেশের জনগণ ও অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে অপরিহার্যও। কিন্তু ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার সে অপরিহার্যতা রক্ষায় কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে বা রাখতে পারবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী বাণিজ্য উপদেষ্টার প্রতি বিনীত অনুরোধ—ব্যবসায়ীদের স্বার্থ অবশ্যই দেখতে হবে, তবে তা কোনোভাবেই দেশ, জনগণ ও অর্থনীতির সামগ্রিক স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে নয়। অনুরোধ থাকবে, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কহার মোকাবিলার জন্য দয়া করে নগদ প্রণোদনা বৃদ্ধির দিকে ঝুঁকবেন না। বরং প্রণোদনাবহির্ভূত অন্য ক্ষেত্রগুলোতে গতি ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করাই হবে উত্তম পন্থা। কিন্তু তা না করে যদি নগদ প্রণোদনা বাড়ানোর দিকে যাওয়া হয়, তাহলে বিপুল রাজস্ব ঘাটতির এ দেশে সেটি হবে স্পষ্টতই একটি জনস্বার্থবিরোধী উদ্যোগ।
আর সে ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন ক. দেশের সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে বিরাজমান অনিয়ম, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও দীর্ঘসূত্রতা দূরীকরণের মাধ্যমে পরিবহন-সময় ও পরিবহন-ব্যয় কমিয়ে আনা; খ. কর ও শুল্কসংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় দপ্তরগুলোকে উদ্যোক্তা-স্বার্থের অনুগামী করে ঢেলে সাজানো; গ. রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), ব্যবসায় উন্নয়ন পর্ষদ (বিপিসি) ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট অন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের বাড়তি তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা; ঘ. রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানিকে সহজতর করার লক্ষ্যে আমদানি প্রাপ্যতা (এনটাইটেলমেন্ট) নির্ধারণ, ঋণপত্র (লেটার অব ক্রেডিট-এলসি) খোলা, শুল্কের পরিমাণ নির্ধারণ, পণ্য খালাস ইত্যাদি কাজগুলোকে হয়রানিমুক্ত ও ত্বরান্বিত করা; ঙ. অভ্যন্তরীণ পরিবহনব্যবস্থাকে চাঁদাবাজি ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত রাখা ইত্যাদি।
বিরাজমান কাঠামোর আওতায় ওপরে যেসব সংশোধন ও সমন্বয়মূলক (অ্যাডজাস্টমেন্ট) ব্যবস্থাদির কথা উল্লেখ করা হলো, সেগুলোর অধিকাংশই তাৎক্ষণিক প্রকৃতির। এর বাইরে রপ্তানি উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা থেকে এসবের পাশাপাশি অন্য যেসব ব্যবস্থাদির কথা জরুরি ভিত্তিতে ভাবা প্রয়োজন, সে-সংক্রান্ত কতিপয় প্রস্তাবও রাষ্ট্রের বিবেচনার জন্য এখানে তুলে ধরা হলো। এক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাইরে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি পণ্যের বিকল্প বাজার খুঁজে বের করতে হবে। দুই. তৈরি পোশাকের বাইরে নতুন রপ্তানি পণ্য খুঁজে বের করতে হবে, যেগুলো রপ্তানি মাধ্যমে তৈরি পোশাকের ওপর থেকে একক নির্ভরতা হ্রাস করা সম্ভব হবে (বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই)। তিন. ওষুধ, চামড়াজাত দ্রব্যাদি ও এ-জাতীয় রপ্তানি সম্ভাবনাময় পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে, যেগুলো তাদের উচ্চ মূল্যমানের কারণে স্বল্প রপ্তানি করেও দ্রুত আয় বাড়াতে সক্ষম। চার. পণ্যের গুণগত মান ও উৎপাদনশীলতা উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের তাগিদ ও সহায়তা দুই-ই দিতে হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে ইচ্ছুক বিভিন্ন পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকলেও তাতে আতঙ্কিত হওয়াটা মোটেও সমীচীন হবে না। বরং আতঙ্কিত না হয়ে যত দ্রুত সম্ভব কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এ শুল্কহার কার্যকর হওয়ার আগেই তা কমিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। আসলে মানদণ্ডটিই এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বরাজনীতি সফলতা পায়। আর সে কারণেই ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ শুল্কহার ৪৬, ৪৪ ও ৩৭ শতাংশ হলেও ইসরায়েল বা যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে তা মাত্র ১৭ ও ১০ শতাংশ। তাই কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর সময় এ বিষয়গুলোকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ তুলনা (রেফারেন্স) হিসেবে টেনে আনতে হবে। তদুপরি ট্রাম্পের এসব একতরফা পদক্ষেপ যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর স্বাক্ষরিত কোনো কোনো প্রটোকলের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ, সেটিও উল্লেখ করতে হবে।
মোটকথা, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক শুল্ক আরোপের বিষয়টিকে মোকাবিলা করতে হবে অতি সূক্ষ্ম কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে।
আবু তাহের খান
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে আগের ১৫.৫ শতাংশের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে চীন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও ইসরায়েলের ক্ষেত্রে আরোপিত এ শুল্কহার হচ্ছে যথাক্রমে ৩৪, ২৬, ২৯, ৪৬, ৪৪ ও ১৭ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ দফায় দায়িত্বভার গ্রহণের আগে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন, যার সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই যুক্ত হয়েছিল রাশিয়া ও কানাডা। অবশ্য পরে রাশিয়া ও কানাডার ওপর থেকে তা বহুলাংশে কমিয়ে আনা হয়। তবে এ দফায় যেভাবে তিনি চীনসহ অনেক দেশের ওপর একযোগে বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেন, তাতে করে বাংলাদেশসহ সেসব দেশের রপ্তানিকারক, সরকার, এমনকি সাধারণ জনগণের অন্তরাত্মাও একসঙ্গে কেঁপে উঠেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য পর্যালোচনার মাধ্যমে এ হারের ক্ষেত্রে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটানোর এখনো যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা দুই-ই রয়েছে এবং পৃথিবীর অনেক দেশই যে তা করে কিছুটা হলেও সফলকাম হবে, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। আর এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক দূতিয়ালির মাধ্যমে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে কতটা কী করতে পারবে, সেটাও ভাবনার বিষয়। উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ হার কমিয়ে আনা হবে।
বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির বার্ষিক পরিমাণ এখন কমবেশি সাড়ে ৮০০ কোটি ডলারের মতো। ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ ক্ষেত্রে প্রকৃত পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮৫৮ কোটি ডলার ও ৭৩৪ কোটি ডলার। ২০৩০ সাল নাগাদ এ পরিমাণকে ১ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে ইতিপূর্বে প্রদত্ত ঘোষণায় দাবি করা হয়েছে। এ অবস্থায় বর্ধিত আমদানি শুল্ক আরোপসংক্রান্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার হয়তো ওই লক্ষ্যমাত্রা বহাল রাখা নিয়ে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তা বোধ করবে। আমার অভিমত হচ্ছে, বিষয়টি দুশ্চিন্তার হলেও লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ফেলাটা মোটেও সমীচীন হবে না। বরং লক্ষ্যমাত্রা অক্ষুণ্ন রেখে কীভাবে তা অর্জন করা যায়, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবা জরুরি। তবে তা করতে গিয়ে কোনোভাবেই এ পরিস্থিতিকে করোনাকালীন বা ইউক্রেন যুদ্ধের সময়কার মতো সুবিধা ও ফায়দা লোটার অছিলা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না, যা করার আশঙ্কা যথেষ্টই রয়েছে।
বাংলাদেশের গত সাড়ে পাঁচ দশকের উদ্যোক্তা-সংস্কৃতি বলে যে, ট্রাম্পের এ উচ্চ শুল্কহার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা, বিশেষত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের শিগগিরই সরকারের কাছে বাড়তি নগদ প্রণোদনা, কর হ্রাস, ঋণের সুদ মওকুফ ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধার দাবি উত্থাপনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আর ব্যবসায়ী ও আমলা প্রভাবিত সরকার যে তাদের সেসব দাবিদাওয়ার প্রতি যথেষ্টই সহানুভূতিশীল হবে, সে আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সে আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হোক, সেটি শুধু কাম্যই নয়—দেশের জনগণ ও অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে অপরিহার্যও। কিন্তু ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার সে অপরিহার্যতা রক্ষায় কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে বা রাখতে পারবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী বাণিজ্য উপদেষ্টার প্রতি বিনীত অনুরোধ—ব্যবসায়ীদের স্বার্থ অবশ্যই দেখতে হবে, তবে তা কোনোভাবেই দেশ, জনগণ ও অর্থনীতির সামগ্রিক স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে নয়। অনুরোধ থাকবে, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কহার মোকাবিলার জন্য দয়া করে নগদ প্রণোদনা বৃদ্ধির দিকে ঝুঁকবেন না। বরং প্রণোদনাবহির্ভূত অন্য ক্ষেত্রগুলোতে গতি ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করাই হবে উত্তম পন্থা। কিন্তু তা না করে যদি নগদ প্রণোদনা বাড়ানোর দিকে যাওয়া হয়, তাহলে বিপুল রাজস্ব ঘাটতির এ দেশে সেটি হবে স্পষ্টতই একটি জনস্বার্থবিরোধী উদ্যোগ।
আর সে ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন ক. দেশের সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে বিরাজমান অনিয়ম, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও দীর্ঘসূত্রতা দূরীকরণের মাধ্যমে পরিবহন-সময় ও পরিবহন-ব্যয় কমিয়ে আনা; খ. কর ও শুল্কসংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় দপ্তরগুলোকে উদ্যোক্তা-স্বার্থের অনুগামী করে ঢেলে সাজানো; গ. রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), ব্যবসায় উন্নয়ন পর্ষদ (বিপিসি) ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট অন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের বাড়তি তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা; ঘ. রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানিকে সহজতর করার লক্ষ্যে আমদানি প্রাপ্যতা (এনটাইটেলমেন্ট) নির্ধারণ, ঋণপত্র (লেটার অব ক্রেডিট-এলসি) খোলা, শুল্কের পরিমাণ নির্ধারণ, পণ্য খালাস ইত্যাদি কাজগুলোকে হয়রানিমুক্ত ও ত্বরান্বিত করা; ঙ. অভ্যন্তরীণ পরিবহনব্যবস্থাকে চাঁদাবাজি ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত রাখা ইত্যাদি।
বিরাজমান কাঠামোর আওতায় ওপরে যেসব সংশোধন ও সমন্বয়মূলক (অ্যাডজাস্টমেন্ট) ব্যবস্থাদির কথা উল্লেখ করা হলো, সেগুলোর অধিকাংশই তাৎক্ষণিক প্রকৃতির। এর বাইরে রপ্তানি উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা থেকে এসবের পাশাপাশি অন্য যেসব ব্যবস্থাদির কথা জরুরি ভিত্তিতে ভাবা প্রয়োজন, সে-সংক্রান্ত কতিপয় প্রস্তাবও রাষ্ট্রের বিবেচনার জন্য এখানে তুলে ধরা হলো। এক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাইরে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি পণ্যের বিকল্প বাজার খুঁজে বের করতে হবে। দুই. তৈরি পোশাকের বাইরে নতুন রপ্তানি পণ্য খুঁজে বের করতে হবে, যেগুলো রপ্তানি মাধ্যমে তৈরি পোশাকের ওপর থেকে একক নির্ভরতা হ্রাস করা সম্ভব হবে (বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই)। তিন. ওষুধ, চামড়াজাত দ্রব্যাদি ও এ-জাতীয় রপ্তানি সম্ভাবনাময় পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে, যেগুলো তাদের উচ্চ মূল্যমানের কারণে স্বল্প রপ্তানি করেও দ্রুত আয় বাড়াতে সক্ষম। চার. পণ্যের গুণগত মান ও উৎপাদনশীলতা উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের তাগিদ ও সহায়তা দুই-ই দিতে হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে ইচ্ছুক বিভিন্ন পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকলেও তাতে আতঙ্কিত হওয়াটা মোটেও সমীচীন হবে না। বরং আতঙ্কিত না হয়ে যত দ্রুত সম্ভব কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এ শুল্কহার কার্যকর হওয়ার আগেই তা কমিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। আসলে মানদণ্ডটিই এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বরাজনীতি সফলতা পায়। আর সে কারণেই ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ শুল্কহার ৪৬, ৪৪ ও ৩৭ শতাংশ হলেও ইসরায়েল বা যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে তা মাত্র ১৭ ও ১০ শতাংশ। তাই কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর সময় এ বিষয়গুলোকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ তুলনা (রেফারেন্স) হিসেবে টেনে আনতে হবে। তদুপরি ট্রাম্পের এসব একতরফা পদক্ষেপ যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর স্বাক্ষরিত কোনো কোনো প্রটোকলের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ, সেটিও উল্লেখ করতে হবে।
মোটকথা, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক শুল্ক আরোপের বিষয়টিকে মোকাবিলা করতে হবে অতি সূক্ষ্ম কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে আগের ১৫.৫ শতাংশের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে চীন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও ইসরায়েলের ক্ষেত্রে আরোপিত এ শুল্কহার হচ্ছে যথাক্রমে ৩৪, ২৬, ২৯, ৪৬, ৪৪ ও ১৭ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ দফায় দায়িত্বভার গ্রহণের আগে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন, যার সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই যুক্ত হয়েছিল রাশিয়া ও কানাডা। অবশ্য পরে রাশিয়া ও কানাডার ওপর থেকে তা বহুলাংশে কমিয়ে আনা হয়। তবে এ দফায় যেভাবে তিনি চীনসহ অনেক দেশের ওপর একযোগে বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেন, তাতে করে বাংলাদেশসহ সেসব দেশের রপ্তানিকারক, সরকার, এমনকি সাধারণ জনগণের অন্তরাত্মাও একসঙ্গে কেঁপে উঠেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য পর্যালোচনার মাধ্যমে এ হারের ক্ষেত্রে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটানোর এখনো যথেষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনা দুই-ই রয়েছে এবং পৃথিবীর অনেক দেশই যে তা করে কিছুটা হলেও সফলকাম হবে, তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। আর এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক দূতিয়ালির মাধ্যমে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে কতটা কী করতে পারবে, সেটাও ভাবনার বিষয়। উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ হার কমিয়ে আনা হবে।
বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির বার্ষিক পরিমাণ এখন কমবেশি সাড়ে ৮০০ কোটি ডলারের মতো। ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ ক্ষেত্রে প্রকৃত পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮৫৮ কোটি ডলার ও ৭৩৪ কোটি ডলার। ২০৩০ সাল নাগাদ এ পরিমাণকে ১ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে ইতিপূর্বে প্রদত্ত ঘোষণায় দাবি করা হয়েছে। এ অবস্থায় বর্ধিত আমদানি শুল্ক আরোপসংক্রান্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার হয়তো ওই লক্ষ্যমাত্রা বহাল রাখা নিয়ে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তা বোধ করবে। আমার অভিমত হচ্ছে, বিষয়টি দুশ্চিন্তার হলেও লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ফেলাটা মোটেও সমীচীন হবে না। বরং লক্ষ্যমাত্রা অক্ষুণ্ন রেখে কীভাবে তা অর্জন করা যায়, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবা জরুরি। তবে তা করতে গিয়ে কোনোভাবেই এ পরিস্থিতিকে করোনাকালীন বা ইউক্রেন যুদ্ধের সময়কার মতো সুবিধা ও ফায়দা লোটার অছিলা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না, যা করার আশঙ্কা যথেষ্টই রয়েছে।
বাংলাদেশের গত সাড়ে পাঁচ দশকের উদ্যোক্তা-সংস্কৃতি বলে যে, ট্রাম্পের এ উচ্চ শুল্কহার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা, বিশেষত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের শিগগিরই সরকারের কাছে বাড়তি নগদ প্রণোদনা, কর হ্রাস, ঋণের সুদ মওকুফ ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধার দাবি উত্থাপনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আর ব্যবসায়ী ও আমলা প্রভাবিত সরকার যে তাদের সেসব দাবিদাওয়ার প্রতি যথেষ্টই সহানুভূতিশীল হবে, সে আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সে আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হোক, সেটি শুধু কাম্যই নয়—দেশের জনগণ ও অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে অপরিহার্যও। কিন্তু ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার সে অপরিহার্যতা রক্ষায় কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে বা রাখতে পারবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী বাণিজ্য উপদেষ্টার প্রতি বিনীত অনুরোধ—ব্যবসায়ীদের স্বার্থ অবশ্যই দেখতে হবে, তবে তা কোনোভাবেই দেশ, জনগণ ও অর্থনীতির সামগ্রিক স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে নয়। অনুরোধ থাকবে, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কহার মোকাবিলার জন্য দয়া করে নগদ প্রণোদনা বৃদ্ধির দিকে ঝুঁকবেন না। বরং প্রণোদনাবহির্ভূত অন্য ক্ষেত্রগুলোতে গতি ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করাই হবে উত্তম পন্থা। কিন্তু তা না করে যদি নগদ প্রণোদনা বাড়ানোর দিকে যাওয়া হয়, তাহলে বিপুল রাজস্ব ঘাটতির এ দেশে সেটি হবে স্পষ্টতই একটি জনস্বার্থবিরোধী উদ্যোগ।
আর সে ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন ক. দেশের সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে বিরাজমান অনিয়ম, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও দীর্ঘসূত্রতা দূরীকরণের মাধ্যমে পরিবহন-সময় ও পরিবহন-ব্যয় কমিয়ে আনা; খ. কর ও শুল্কসংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় দপ্তরগুলোকে উদ্যোক্তা-স্বার্থের অনুগামী করে ঢেলে সাজানো; গ. রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), ব্যবসায় উন্নয়ন পর্ষদ (বিপিসি) ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট অন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের বাড়তি তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা; ঘ. রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানিকে সহজতর করার লক্ষ্যে আমদানি প্রাপ্যতা (এনটাইটেলমেন্ট) নির্ধারণ, ঋণপত্র (লেটার অব ক্রেডিট-এলসি) খোলা, শুল্কের পরিমাণ নির্ধারণ, পণ্য খালাস ইত্যাদি কাজগুলোকে হয়রানিমুক্ত ও ত্বরান্বিত করা; ঙ. অভ্যন্তরীণ পরিবহনব্যবস্থাকে চাঁদাবাজি ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত রাখা ইত্যাদি।
বিরাজমান কাঠামোর আওতায় ওপরে যেসব সংশোধন ও সমন্বয়মূলক (অ্যাডজাস্টমেন্ট) ব্যবস্থাদির কথা উল্লেখ করা হলো, সেগুলোর অধিকাংশই তাৎক্ষণিক প্রকৃতির। এর বাইরে রপ্তানি উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা থেকে এসবের পাশাপাশি অন্য যেসব ব্যবস্থাদির কথা জরুরি ভিত্তিতে ভাবা প্রয়োজন, সে-সংক্রান্ত কতিপয় প্রস্তাবও রাষ্ট্রের বিবেচনার জন্য এখানে তুলে ধরা হলো। এক. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাইরে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি পণ্যের বিকল্প বাজার খুঁজে বের করতে হবে। দুই. তৈরি পোশাকের বাইরে নতুন রপ্তানি পণ্য খুঁজে বের করতে হবে, যেগুলো রপ্তানি মাধ্যমে তৈরি পোশাকের ওপর থেকে একক নির্ভরতা হ্রাস করা সম্ভব হবে (বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই)। তিন. ওষুধ, চামড়াজাত দ্রব্যাদি ও এ-জাতীয় রপ্তানি সম্ভাবনাময় পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে, যেগুলো তাদের উচ্চ মূল্যমানের কারণে স্বল্প রপ্তানি করেও দ্রুত আয় বাড়াতে সক্ষম। চার. পণ্যের গুণগত মান ও উৎপাদনশীলতা উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের তাগিদ ও সহায়তা দুই-ই দিতে হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে ইচ্ছুক বিভিন্ন পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকলেও তাতে আতঙ্কিত হওয়াটা মোটেও সমীচীন হবে না। বরং আতঙ্কিত না হয়ে যত দ্রুত সম্ভব কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এ শুল্কহার কার্যকর হওয়ার আগেই তা কমিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। আসলে মানদণ্ডটিই এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বরাজনীতি সফলতা পায়। আর সে কারণেই ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ শুল্কহার ৪৬, ৪৪ ও ৩৭ শতাংশ হলেও ইসরায়েল বা যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে তা মাত্র ১৭ ও ১০ শতাংশ। তাই কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর সময় এ বিষয়গুলোকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ তুলনা (রেফারেন্স) হিসেবে টেনে আনতে হবে। তদুপরি ট্রাম্পের এসব একতরফা পদক্ষেপ যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর স্বাক্ষরিত কোনো কোনো প্রটোকলের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ, সেটিও উল্লেখ করতে হবে।
মোটকথা, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক শুল্ক আরোপের বিষয়টিকে মোকাবিলা করতে হবে অতি সূক্ষ্ম কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে।
একদা ‘বিশ্বে এল নতুন বাদ মুজিববাদ, মুজিববাদ’ বলা সিরাজুল আলম খানই মুজিবের বলয় থেকে বের হয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করেছিলেন। সেটা ছিল পুঁজিবাদী ঘরানার জাতীয়তাবাদীদের মতোই সমাজতন্ত্রবিরোধী দল। নিজেদের দলের নাম তাঁরা যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক রেখেছিলেন, সেটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়; নামটি তাঁদের চেতনা
১৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের তৈরি পোশাক শুধু রপ্তানির পণ্য নয়, বরং লাখো মানুষের জীবিকার ভিত্তি। গ্রামের নারী-পুরুষ বা তরুণ-তরুণী পোশাকশিল্পে কাজ করে নিজের জন্য শুধু আয় করছেন না, তাঁদের ঘামে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও গড়ে উঠছে। এই শিল্প খাতে শুধু তৈরি পোশাকই গুরুত্বপূর্ণ নয়, পোশাক তৈরির পর উচ্ছিষ্ট কাপড়ের টুকরাগুল
১৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ এখন যেন বিপর্যয়কর এক অবস্থায় পড়েছে। গত এক সপ্তাহে দু-এক দিনের ব্যবধানে তিনটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি হলো, দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে আগুন লাগার ঘটনা। এতে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগেবৈশ্বিক পর্নো সাইটে নামডাক করেছেন বাংলাদেশি যুগল। চলতি বছরের অক্টোবরে পর্নো তারকাদের আন্তর্জাতিক পারফরমার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁরা অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন। এক বছরে তাঁদের পর্নো ভিডিও দেখা হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার। বান্দরবান থেকে এই যুগলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগেশ্রেণির সঙ্গে শ্রেণির সম্পর্কের সমস্যা, সেটির সমাধান তো হয়ইনি, উল্টো ধনবৈষম্য আগের চেয়ে বেড়েছে। এর কারণ খুবই স্পষ্ট। সেটা হলো, স্বাধীন বাংলাদেশে যে বুর্জোয়ারা ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁরা আগের শাসকদের মতোই পুঁজিবাদী উন্নয়নের ধারাই অব্যাহত রেখেছেন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
একদা ‘বিশ্বে এল নতুন বাদ মুজিববাদ, মুজিববাদ’ বলা সিরাজুল আলম খানই মুজিবের বলয় থেকে বের হয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করেছিলেন। সেটা ছিল পুঁজিবাদী ঘরানার জাতীয়তাবাদীদের মতোই সমাজতন্ত্রবিরোধী দল। নিজেদের দলের নাম তাঁরা যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক রেখেছিলেন, সেটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়; নামটি তাঁদের চেতনার ভেতরই প্রোথিত ছিল। সিরাজুল আলম খানের নিজের ব্যাপারটা মূলত ছিল ব্যক্তিগত; ক্ষমতার উত্তরাধিকার তাঁরই প্রাপ্য—এটা ছিল তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস; কিন্তু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শেখ মুজিবের ভগিনীপুত্র শেখ ফজলুল হক মনি। সিরাজুল আলম খান তাঁর নিজের শক্তির প্রমাণ দেখাতে চেয়েছিলেন এবং সেটা প্রধান কারণ। এ জন্য তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠনের উদ্যোগ নেন। প্রকৃত সমাজতন্ত্রীরা তখন মাঠে দৃশ্যমান নন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা ‘উগ্রপন্থী’ বলে চিহ্নিত, তাঁরা রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের কারণে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে গোপন তৎপরতায় ছিলেন। এরাই আবার কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন, নয়তো রয়েছেন কারাগারে বন্দী অবস্থায়। কেউ কেউ প্রাণও হারিয়েছেন। তার আগেই এ দেশে রুশ-চীন বিভাজন ঘটে। এই বিভাজন বাম আন্দোলনে বড় ক্ষতি করে।
স্বাধীনতার পরে রুশপন্থীরাই ছিলেন দৃশ্যমান।
তাঁরা ‘উগ্রপন্থা’ তো শুরুতেই পরিহার করেছিলেন। পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদী শাসকেরা যে পূর্ববঙ্গকে একটি অভ্যন্তরীণ উপনিবেশে পরিণত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল, সেটা অনুধাবনেও তাঁদের বিস্তর বিলম্ব ঘটে। ফলে পাকিস্তানি শাসকদের সঙ্গে পূর্ববঙ্গবাসীর দ্বন্দ্বটাই যে তখন প্রধান ছিল, এটা না বুঝে তাঁরা ‘সারা’ পাকিস্তানেই শ্রেণিসংগ্রাম অব্যাহত রেখে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্নকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পরে উঠতি বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা যে শাসনক্ষমতা পেয়ে গেছেন, এটা তাঁরা দেখেও দেখতে চাইলেন না। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন ওই শাসকদের সহায়তাতেই অসম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কাজটি সমাপ্ত করার। উগ্রপন্থা পরিহারের জন্য মস্কো থেকে তখন তাঁরা পরামর্শও পেয়েছিলেন বৈকি। পরিস্থিতিটা এ রকম দাঁড়িয়েছিল যে রুশপন্থীরা সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, চীনপন্থীরা মাঠে নেই, সমাজতন্ত্রের আওয়াজটা সমর্থক পাওয়ার জন্য প্রতীক্ষা করছে এবং আওয়াজটা জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে। হিটলার-মুসোলিনির নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতন্ত্রীরা কমিউনিজমকে রুখে দেওয়ার জন্য ইউরোপে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, বাংলাদেশের জাতীয় সমাজতন্ত্রীরাও তেমন পন্থা ধরেই এগোতে থাকলেন। ‘মুজিব-বিরোধী’ জাতীয়তাবাদীরা খাড়া করলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। আসলে উভয় দলই ছিল যথার্থ সমাজতন্ত্রের বিরোধী, যদিও উভয় দলই সমাজতন্ত্রের পক্ষে বলে দাবি করত।
বামপন্থীদের দমনে সরকার তো তৎপর ছিলই, জাসদও তাতে যুক্ত হলো, যদিও প্রচ্ছন্নভাবে। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের গলা-ফাটানো আওয়াজ তুলে সামাজিক বিপ্লবের জন্য অধীর হয়ে পড়েছিল যে তরুণেরা, তাদের একাংশকে তারা নিজেদের দলে টেনে নিয়ে বিপ্লব-বিরোধিতার অন্ধগলিতে ঠেলে দিল। একই সঙ্গে আবার সম্ভাব্য সমাজবিপ্লবীদের উন্মোচন করে দিয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে সহায়ক হলো। লাল পতাকা তুলে লাল পতাকার বিরোধিতা করার আরও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশেই সংঘটিত হলো বৈকি।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ যখন চলছে, তখন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সমাজতন্ত্রের কথা বলতেন, জাতীয়তাবাদের কথা তাঁর বক্তৃতায় শোনা যায়নি। এর কারণ এই যে যুদ্ধটা যেহেতু চলছিল জাতীয় মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যেই এবং এর অভ্যন্তরীণ আকাঙ্ক্ষাটা যেহেতু ছিল পাকিস্তানি রাষ্ট্র থেকে কেবল যে আয়তনে নয়, চরিত্রেও সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, তাই জাতীয়তাবাদের কথা বলা ছিল অপ্রয়োজনীয়।
জাতীয়তাবাদের কথা না-বলার পেছনে অবশ্য আরও একটি কারণ ছিল, সেটা হলো ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অনাগ্রহ। ইন্দিরা গান্ধীর শঙ্কা ছিল, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম না আবার দুই বাংলার মানুষদের মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের আবেগ সৃষ্টি করে। তেমন আবেগ প্রবল হলে বাংলাদেশের বামপন্থীদের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় শাসনবিরোধী পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীদের একটি মিলনের সূত্রপাত ঘটে যেতে পারে, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাকে ভিত্তি করে। ভিয়েতনামের যুদ্ধের দৃষ্টান্ত তো চোখের সামনেই ছিল; জাতীয় মুক্তির ওই লড়াইয়ে কমিউনিস্টরা যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে, দুই বাংলার কমিউনিস্টরা ওই রকম কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে, এমন শঙ্কা ভারতীয় শাসকদের কাছে অমূলক ঠেকেনি। ইন্দিরা গান্ধী তখন নকশালবাড়ী আন্দোলন দমনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। তিনি তাই চাননি যে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীতে বামপন্থী তরুণেরা যোগ দিক। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ও ইন্দিরা গান্ধীর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অভিন্ন।
তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন বিশেষভাবেই বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন নেতা। ভারতে তিনি আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে যাননি, গিয়েছিলেন যোদ্ধা হিসেবে। যুদ্ধের ব্যাপারে সহায়তা চাইবার জন্য দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের সময় তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য প্রস্তাবিত পতাকার একটি নমুনা সঙ্গে রেখেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে পতাকার ভেতরে বাংলাদেশের মানচিত্রের অবস্থান দেখিয়ে এই বলে আশ্বস্ত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন যে বাংলাদেশ বলতে তাঁরা শুধু পূর্ববঙ্গকেই বোঝেন, তার বাইরের বাংলাভাষী অঞ্চলকে নয়। ‘জয় বাংলা’র অর্থ গোটা বাংলার জয় নয়, পূর্ববঙ্গের জয় হোক, এটাই তাঁরা চান; তার বেশি কিছু নয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রলম্বিত হোক, এটা বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদীদের দল আওয়ামী লীগ যেমন চায়নি, সেটি কাঙ্ক্ষিত ছিল না ভারতের জাতীয়তাবাদীদেরও; বহির্বিশ্বের পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর তো বটেই, সোভিয়েত ইউনিয়নের দিক থেকেও দ্রুত যুদ্ধাবসান কাঙ্ক্ষিত ছিল। কারণ ওই একই—নতুন একটি ভিয়েতনামের অভ্যুদয়ের শঙ্কা।
নানা দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের আওয়াজই যথেষ্ট ছিল, জাতীয়তাবাদের আওয়াজ তোলা ছিল অনাবশ্যক। কিন্তু শেখ মুজিব যখন পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে এলেন, জাতীয়তাবাদের আওয়াজটা তারপর থেকেই উঠতে থাকল। সমাজতন্ত্রের সঙ্গে জাতীয়তাবাদের মিশ্রণ ঘটিয়ে সমাজতন্ত্রের দাবিকে দুর্বল করার জাতীয়তাবাদী যে চিন্তা মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি ধারণ করতেন, যুদ্ধ শেষে সেটিকেই ফেরত আনতে তিনি উদ্গ্রীব হয়ে উঠলেন। সংবিধানে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির সঙ্গেই কেবল নয়, একেবারে প্রথমেই জাতীয়তাবাদকে স্থান দেওয়া হলো। আর এই সংযোজনের তাৎপর্য প্রকাশ পেল বাঙালি ছাড়াও যেসব স্বতন্ত্র জাতিসত্তার মানুষ বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে, সংবিধানে তাদের অস্তিত্বই অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে। এমনকি তাদেরকে বাঙালি হয়ে যেতেও বলা হয়েছিল; অনেকটা সেভাবেই, একদা যেভাবে পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের বলা হয়েছিল পাকিস্তানি বনে যেতে। বিদগ্ধজনদের মুখে এবং তাঁদের লেখাতেও বলা শুরু হলো যে বাংলাদেশ একটি জাতিরাষ্ট্র। এটি যে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে, সে ধরনের প্রত্যাশা তাঁদের খেয়ালে রইল না।
পরাধীন ভারতবর্ষে মূল সমস্যাটি ছিল শ্রেণির; এবং সেটিকে সামনে আনার জন্যই জাতি সমস্যার সমাধান অত্যাবশ্যক ছিল। সাতচল্লিশের পরে পাকিস্তানের ব্যাপারেও ছিল ওই একই কথা। জাতি সমস্যার সমাধানের সেখানেও প্রয়োজন ছিল শ্রেণি সমস্যা সমাধানে হাত দেওয়ার জন্য। একাত্তরে পূর্ববঙ্গ স্বাধীন হলো, জাতি সমস্যার পুরোপুরি না হলেও একরকমের সমাধান মিলল। স্বতন্ত্র জাতিসত্তাগুলোকে সাংবিধানিকভাবে অবশ্য এখনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, তবু তারা যে আছে, সেটা মেনে নেওয়া হয়েছে এবং একুশে ফেব্রুয়ারিকে ইউনেসকোর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতিদানের পর থেকে বাংলাদেশে অন্তত সরকারিভাবে বাংলা ভাষা ছাড়াও অন্য মাতৃভাষাগুলো রক্ষা করার এবং স্বতন্ত্র জাতিসত্তার মানুষদের জন্য প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয়তাটা স্বীকৃতি পেয়েছে।
কিন্তু মূল যে সমস্যা—শ্রেণির সঙ্গে শ্রেণির সম্পর্কের সমস্যা, সেটির সমাধান তো হয়ইনি, উল্টো ধনবৈষম্য আগের চেয়ে বেড়েছে। এর কারণ খুবই স্পষ্ট। সেটা হলো, স্বাধীন বাংলাদেশে যে বুর্জোয়ারা ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁরা আগের শাসকদের মতোই পুঁজিবাদী উন্নয়নের ধারাই অব্যাহত রেখেছেন। আর পুঁজিবাদী উন্নয়ন যে ধনবৈষম্য বাড়াতে বাধ্য, সেটা তো সর্বজনবিদিত।
লেখক: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
একদা ‘বিশ্বে এল নতুন বাদ মুজিববাদ, মুজিববাদ’ বলা সিরাজুল আলম খানই মুজিবের বলয় থেকে বের হয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করেছিলেন। সেটা ছিল পুঁজিবাদী ঘরানার জাতীয়তাবাদীদের মতোই সমাজতন্ত্রবিরোধী দল। নিজেদের দলের নাম তাঁরা যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক রেখেছিলেন, সেটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়; নামটি তাঁদের চেতনার ভেতরই প্রোথিত ছিল। সিরাজুল আলম খানের নিজের ব্যাপারটা মূলত ছিল ব্যক্তিগত; ক্ষমতার উত্তরাধিকার তাঁরই প্রাপ্য—এটা ছিল তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস; কিন্তু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শেখ মুজিবের ভগিনীপুত্র শেখ ফজলুল হক মনি। সিরাজুল আলম খান তাঁর নিজের শক্তির প্রমাণ দেখাতে চেয়েছিলেন এবং সেটা প্রধান কারণ। এ জন্য তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠনের উদ্যোগ নেন। প্রকৃত সমাজতন্ত্রীরা তখন মাঠে দৃশ্যমান নন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা ‘উগ্রপন্থী’ বলে চিহ্নিত, তাঁরা রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের কারণে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে গোপন তৎপরতায় ছিলেন। এরাই আবার কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন, নয়তো রয়েছেন কারাগারে বন্দী অবস্থায়। কেউ কেউ প্রাণও হারিয়েছেন। তার আগেই এ দেশে রুশ-চীন বিভাজন ঘটে। এই বিভাজন বাম আন্দোলনে বড় ক্ষতি করে।
স্বাধীনতার পরে রুশপন্থীরাই ছিলেন দৃশ্যমান।
তাঁরা ‘উগ্রপন্থা’ তো শুরুতেই পরিহার করেছিলেন। পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদী শাসকেরা যে পূর্ববঙ্গকে একটি অভ্যন্তরীণ উপনিবেশে পরিণত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল, সেটা অনুধাবনেও তাঁদের বিস্তর বিলম্ব ঘটে। ফলে পাকিস্তানি শাসকদের সঙ্গে পূর্ববঙ্গবাসীর দ্বন্দ্বটাই যে তখন প্রধান ছিল, এটা না বুঝে তাঁরা ‘সারা’ পাকিস্তানেই শ্রেণিসংগ্রাম অব্যাহত রেখে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্নকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পরে উঠতি বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা যে শাসনক্ষমতা পেয়ে গেছেন, এটা তাঁরা দেখেও দেখতে চাইলেন না। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন ওই শাসকদের সহায়তাতেই অসম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কাজটি সমাপ্ত করার। উগ্রপন্থা পরিহারের জন্য মস্কো থেকে তখন তাঁরা পরামর্শও পেয়েছিলেন বৈকি। পরিস্থিতিটা এ রকম দাঁড়িয়েছিল যে রুশপন্থীরা সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, চীনপন্থীরা মাঠে নেই, সমাজতন্ত্রের আওয়াজটা সমর্থক পাওয়ার জন্য প্রতীক্ষা করছে এবং আওয়াজটা জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে। হিটলার-মুসোলিনির নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতন্ত্রীরা কমিউনিজমকে রুখে দেওয়ার জন্য ইউরোপে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, বাংলাদেশের জাতীয় সমাজতন্ত্রীরাও তেমন পন্থা ধরেই এগোতে থাকলেন। ‘মুজিব-বিরোধী’ জাতীয়তাবাদীরা খাড়া করলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। আসলে উভয় দলই ছিল যথার্থ সমাজতন্ত্রের বিরোধী, যদিও উভয় দলই সমাজতন্ত্রের পক্ষে বলে দাবি করত।
বামপন্থীদের দমনে সরকার তো তৎপর ছিলই, জাসদও তাতে যুক্ত হলো, যদিও প্রচ্ছন্নভাবে। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের গলা-ফাটানো আওয়াজ তুলে সামাজিক বিপ্লবের জন্য অধীর হয়ে পড়েছিল যে তরুণেরা, তাদের একাংশকে তারা নিজেদের দলে টেনে নিয়ে বিপ্লব-বিরোধিতার অন্ধগলিতে ঠেলে দিল। একই সঙ্গে আবার সম্ভাব্য সমাজবিপ্লবীদের উন্মোচন করে দিয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে সহায়ক হলো। লাল পতাকা তুলে লাল পতাকার বিরোধিতা করার আরও একটি ঐতিহাসিক ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশেই সংঘটিত হলো বৈকি।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ যখন চলছে, তখন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সমাজতন্ত্রের কথা বলতেন, জাতীয়তাবাদের কথা তাঁর বক্তৃতায় শোনা যায়নি। এর কারণ এই যে যুদ্ধটা যেহেতু চলছিল জাতীয় মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যেই এবং এর অভ্যন্তরীণ আকাঙ্ক্ষাটা যেহেতু ছিল পাকিস্তানি রাষ্ট্র থেকে কেবল যে আয়তনে নয়, চরিত্রেও সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, তাই জাতীয়তাবাদের কথা বলা ছিল অপ্রয়োজনীয়।
জাতীয়তাবাদের কথা না-বলার পেছনে অবশ্য আরও একটি কারণ ছিল, সেটা হলো ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অনাগ্রহ। ইন্দিরা গান্ধীর শঙ্কা ছিল, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম না আবার দুই বাংলার মানুষদের মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের আবেগ সৃষ্টি করে। তেমন আবেগ প্রবল হলে বাংলাদেশের বামপন্থীদের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় শাসনবিরোধী পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীদের একটি মিলনের সূত্রপাত ঘটে যেতে পারে, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাকে ভিত্তি করে। ভিয়েতনামের যুদ্ধের দৃষ্টান্ত তো চোখের সামনেই ছিল; জাতীয় মুক্তির ওই লড়াইয়ে কমিউনিস্টরা যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে, দুই বাংলার কমিউনিস্টরা ওই রকম কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে, এমন শঙ্কা ভারতীয় শাসকদের কাছে অমূলক ঠেকেনি। ইন্দিরা গান্ধী তখন নকশালবাড়ী আন্দোলন দমনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। তিনি তাই চাননি যে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীতে বামপন্থী তরুণেরা যোগ দিক। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের ও ইন্দিরা গান্ধীর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অভিন্ন।
তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন বিশেষভাবেই বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন নেতা। ভারতে তিনি আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে যাননি, গিয়েছিলেন যোদ্ধা হিসেবে। যুদ্ধের ব্যাপারে সহায়তা চাইবার জন্য দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের সময় তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য প্রস্তাবিত পতাকার একটি নমুনা সঙ্গে রেখেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে পতাকার ভেতরে বাংলাদেশের মানচিত্রের অবস্থান দেখিয়ে এই বলে আশ্বস্ত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন যে বাংলাদেশ বলতে তাঁরা শুধু পূর্ববঙ্গকেই বোঝেন, তার বাইরের বাংলাভাষী অঞ্চলকে নয়। ‘জয় বাংলা’র অর্থ গোটা বাংলার জয় নয়, পূর্ববঙ্গের জয় হোক, এটাই তাঁরা চান; তার বেশি কিছু নয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রলম্বিত হোক, এটা বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদীদের দল আওয়ামী লীগ যেমন চায়নি, সেটি কাঙ্ক্ষিত ছিল না ভারতের জাতীয়তাবাদীদেরও; বহির্বিশ্বের পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর তো বটেই, সোভিয়েত ইউনিয়নের দিক থেকেও দ্রুত যুদ্ধাবসান কাঙ্ক্ষিত ছিল। কারণ ওই একই—নতুন একটি ভিয়েতনামের অভ্যুদয়ের শঙ্কা।
নানা দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের আওয়াজই যথেষ্ট ছিল, জাতীয়তাবাদের আওয়াজ তোলা ছিল অনাবশ্যক। কিন্তু শেখ মুজিব যখন পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে এলেন, জাতীয়তাবাদের আওয়াজটা তারপর থেকেই উঠতে থাকল। সমাজতন্ত্রের সঙ্গে জাতীয়তাবাদের মিশ্রণ ঘটিয়ে সমাজতন্ত্রের দাবিকে দুর্বল করার জাতীয়তাবাদী যে চিন্তা মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি ধারণ করতেন, যুদ্ধ শেষে সেটিকেই ফেরত আনতে তিনি উদ্গ্রীব হয়ে উঠলেন। সংবিধানে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির সঙ্গেই কেবল নয়, একেবারে প্রথমেই জাতীয়তাবাদকে স্থান দেওয়া হলো। আর এই সংযোজনের তাৎপর্য প্রকাশ পেল বাঙালি ছাড়াও যেসব স্বতন্ত্র জাতিসত্তার মানুষ বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে, সংবিধানে তাদের অস্তিত্বই অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে। এমনকি তাদেরকে বাঙালি হয়ে যেতেও বলা হয়েছিল; অনেকটা সেভাবেই, একদা যেভাবে পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের বলা হয়েছিল পাকিস্তানি বনে যেতে। বিদগ্ধজনদের মুখে এবং তাঁদের লেখাতেও বলা শুরু হলো যে বাংলাদেশ একটি জাতিরাষ্ট্র। এটি যে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে, সে ধরনের প্রত্যাশা তাঁদের খেয়ালে রইল না।
পরাধীন ভারতবর্ষে মূল সমস্যাটি ছিল শ্রেণির; এবং সেটিকে সামনে আনার জন্যই জাতি সমস্যার সমাধান অত্যাবশ্যক ছিল। সাতচল্লিশের পরে পাকিস্তানের ব্যাপারেও ছিল ওই একই কথা। জাতি সমস্যার সমাধানের সেখানেও প্রয়োজন ছিল শ্রেণি সমস্যা সমাধানে হাত দেওয়ার জন্য। একাত্তরে পূর্ববঙ্গ স্বাধীন হলো, জাতি সমস্যার পুরোপুরি না হলেও একরকমের সমাধান মিলল। স্বতন্ত্র জাতিসত্তাগুলোকে সাংবিধানিকভাবে অবশ্য এখনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, তবু তারা যে আছে, সেটা মেনে নেওয়া হয়েছে এবং একুশে ফেব্রুয়ারিকে ইউনেসকোর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতিদানের পর থেকে বাংলাদেশে অন্তত সরকারিভাবে বাংলা ভাষা ছাড়াও অন্য মাতৃভাষাগুলো রক্ষা করার এবং স্বতন্ত্র জাতিসত্তার মানুষদের জন্য প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয়তাটা স্বীকৃতি পেয়েছে।
কিন্তু মূল যে সমস্যা—শ্রেণির সঙ্গে শ্রেণির সম্পর্কের সমস্যা, সেটির সমাধান তো হয়ইনি, উল্টো ধনবৈষম্য আগের চেয়ে বেড়েছে। এর কারণ খুবই স্পষ্ট। সেটা হলো, স্বাধীন বাংলাদেশে যে বুর্জোয়ারা ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁরা আগের শাসকদের মতোই পুঁজিবাদী উন্নয়নের ধারাই অব্যাহত রেখেছেন। আর পুঁজিবাদী উন্নয়ন যে ধনবৈষম্য বাড়াতে বাধ্য, সেটা তো সর্বজনবিদিত।
লেখক: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে আগের ১৫.৫ শতাংশের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে চীন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও ইসরায়েলের
০৫ এপ্রিল ২০২৫বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শুধু রপ্তানির পণ্য নয়, বরং লাখো মানুষের জীবিকার ভিত্তি। গ্রামের নারী-পুরুষ বা তরুণ-তরুণী পোশাকশিল্পে কাজ করে নিজের জন্য শুধু আয় করছেন না, তাঁদের ঘামে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও গড়ে উঠছে। এই শিল্প খাতে শুধু তৈরি পোশাকই গুরুত্বপূর্ণ নয়, পোশাক তৈরির পর উচ্ছিষ্ট কাপড়ের টুকরাগুল
১৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ এখন যেন বিপর্যয়কর এক অবস্থায় পড়েছে। গত এক সপ্তাহে দু-এক দিনের ব্যবধানে তিনটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি হলো, দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে আগুন লাগার ঘটনা। এতে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগেবৈশ্বিক পর্নো সাইটে নামডাক করেছেন বাংলাদেশি যুগল। চলতি বছরের অক্টোবরে পর্নো তারকাদের আন্তর্জাতিক পারফরমার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁরা অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন। এক বছরে তাঁদের পর্নো ভিডিও দেখা হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার। বান্দরবান থেকে এই যুগলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগেশোয়েব সাম্য সিদ্দিক
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শুধু রপ্তানির পণ্য নয়, বরং লাখো মানুষের জীবিকার ভিত্তি। গ্রামের নারী-পুরুষ বা তরুণ-তরুণী পোশাকশিল্পে কাজ করে নিজের জন্য শুধু আয় করছেন না, তাঁদের ঘামে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও গড়ে উঠছে। এই শিল্প খাতে শুধু তৈরি পোশাকই গুরুত্বপূর্ণ নয়, পোশাক তৈরির পর উচ্ছিষ্ট কাপড়ের টুকরাগুলো গুরুত্বপূর্ণ, যাকে আমরা ঝুট বলে বর্জ্য আকারে ফেলে দিই। কিন্তু এই ঝুটেরও বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। আমরা ভাবি, কাটিং টেবিলের পাশে যেসব কাপড়ের ছোট্ট টুকরা জমে থাকে, সেগুলো আর কোনো কাজের নয়। অথচ এই ফেলে দেওয়া ঝুটই হতে পারে নতুন অর্থনীতির বীজ।
২০২৫ সালে বাংলাদেশে পোশাক কারখানাগুলো থেকে প্রায় ৫ দশমিক ৭ লাখ (প্রায় ৫ লাখ ৭৭ হাজার) টন টেক্সটাইল বর্জ্য তৈরি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে Thomson Reuters Foundation, TexSPACE Today এবং The Centre for Child Rights and Business-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। এই বিপুল বর্জ্য সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে তা হতে পারে টেকসই উৎপাদনের শক্তিশালী কাঁচামাল। এটি নতুন একটি শিল্প হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে। আজকের পোশাকের বিশ্ববাজার কেবল সস্তা দাম চায় না, চায় দায়বদ্ধতাও। পোশাকের দাম দেওয়ার আগে তারা জানতে চায় এসব তৈরি করতে গিয়ে কী পরিমাণ উপকরণ সাশ্রয় হলো, কত বর্জ্য পুনর্ব্যবহার হলো এবং কত কাঁচামাল উদ্বৃত্ত হলো? যে কারখানা এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারে, সেই কারখানার দর বাড়িয়ে দেয় আন্তর্জাতিক ক্রেতারা।
এই দায়বদ্ধতার চাহিদা এক বিরাট সুযোগ। ঝুট বাছাই, গ্রেডিং, বেইলিং, স্পিনিং, ফ্যাব্রিক—প্রতিটি ধাপে নতুন কর্মসংস্থান হতে পারে; বিশেষ করে নারী শ্রমিক আর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য তৈরি হতে পারে নতুন এক শিল্পের দ্বার। দেশের মধ্যে রিসাইকেলড সুতা তৈরি করা গেলে আরেক নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। কারণ, এতে অর্থের সাশ্রয় হবে, কাঁচামাল আমদানির ঝুঁকি কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচবে।
তবে এই সম্ভাবনার পথ একেবারেই মসৃণ নয়। এর সামনে আছে গেঁথে থাকা বহু পুরোনো গিঁট। প্রথম গিঁটটা আসে আমাদের মনোভাব থেকে। কারখানাগুলোতে এখনো বর্জ্য আলাদা করার অভ্যাস গড়ে ওঠেনি। কাটিং টেবিলের পাশে ঝুট পড়ে থাকে। ভালো-মন্দ সব একসঙ্গে থাকে। এতে ভালো মানের ঝুট খারাপের সঙ্গে মিশে গিয়ে মান হারায়। দাম পড়ে যায়। বাজারে এর জন্য আলাদা মূল্য মেলে না। শ্রমিকও বোঝে না কোনটা রাখবে, কোনটা ফেলবে।
দ্বিতীয় বড় সমস্যা প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে। আমাদের বেশির ভাগ কারখানা এখনো পুরোনো ধরনের ওপেন-এন্ড স্পিনিং পদ্ধতিতে আটকে আছে। এই প্রযুক্তিতে শুধু মাঝারি মানের সুতা তৈরি হয়। এর দাম কম এবং চাহিদাও সীমিত। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বড় ব্র্যান্ডগুলো উচ্চমানের পুনর্ব্যবহৃত (রিসাইকেলড) সুতা চায়। এমন সুতা বানাতে দরকার আধুনিক মেকানিক্যাল ও কেমিক্যাল রিসাইক্লিং যন্ত্র। এই যন্ত্রপাতি অনেক ব্যয়বহুল। তবে এগুলো না আনলে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করা সম্ভব নয়। ফলে আমরা এই গ্লোবাল দৌড়ে পিছিয়েই পড়ছি।
তৃতীয় গিঁট মালিকানা নিয়ে। ঝুট আসলে কার? কারখানা বলবে তাদের। রিসাইক্লার বলবে তাদের। আবার মধ্যস্বত্বভোগীরাও হাত গলিয়ে বসে থাকে মাঝখানে। ফলে কার মালিকানায় কবে ঝুট বিক্রি হবে, তার কোনো নিয়ম থাকে না। বাজারে দাম হঠাৎ বাড়ে, আবার হঠাৎ পড়ে। একেক দিন একেক রকম দর হয়। বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করাই কঠিন হয়ে পড়ে তখন।
এই তিনটি গিঁট সমস্যার সমাধান না হলে সম্ভাবনা শুধু ভাবনার মধ্যে আটকে থাকবে। ঝুট তখন কাঁচামাল নয়, বোঝা হয়ে যাবে। এই গিঁট খুলতে হলে প্রথমে দরকার স্বচ্ছ ভাবনা ও পরিকল্পনা। পরিকল্পনাহীন কোনো কিছুই সম্ভাবনা বয়ে আনে না। সে জন্য কারখানার কাটিং টেবিল থেকে শুরু করতে হবে নিয়মের চর্চা। ঝুটকে ফেলে দেওয়ার জিনিস না ভেবে রাখতে হবে আলাদা বাক্সে। রং, ফ্যাব্রিকের ধরন এবং গ্রেড অনুযায়ী আলাদা করতে হবে। প্রতিদিনের হিসাবও রাখতে হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। কারণ, যেটা মাপা যায়, সেটাই উন্নত করা যায়। এরপর দরকার স্বচ্ছতা, প্রতিটি ঝুটের যাত্রাপথ জানা থাকতে হবে। কারখানার মেঝে থেকে গুদাম, গুদাম থেকে ট্রাক, আর ট্রাক থেকে সুতা কারখানা পর্যন্ত এর যাত্রাপথ চিহ্ন দিয়ে রাখতে হবে। তাহলে ঝুট হারিয়ে যাবে না। ক্রেতার আস্থাও বাড়বে।
এভাবে ক্রেতারা নিশ্চিত হতে পারবে যে এই সুতা সত্যিই পুনর্ব্যবহৃত। এরপর জরুরি দরকার ঝুটের ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ। শিল্পাঞ্চলভিত্তিক কমন রিসাইক্লিং পার্ক গড়ে তুলতে হবে। তারপর শ্রমিকদের আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। এতে তাঁদের দক্ষতার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। পুরো প্রক্রিয়ার মানও ওপরের দিকে উঠবে। এখন শুধু সাধারণ টি-শার্ট বানিয়ে গেলে হবে না, বাজারে টিকে থাকতে হলে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতেই হবে। ডেনিম, ফ্লিস, অ্যাকটিভ পোশাক এমনকি পুরোনো কাপড় নতুনভাবে ডিজাইন করেও তৈরি করতে হবে। এতে প্রতি পণ্যে মূল্য অনেক বাড়বে। বাংলাদেশ গর্বের সঙ্গে বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে পারবে।
পাশাপাশি এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সস্তা ঋণ আর প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হবে। স্থানীয় ডিজাইনারদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করলে এই উদ্যোক্তারা পুরোনো কাপড় দিয়ে নতুন ধরনের পোশাক (আপসাইকেলড কালেকশন) বানাতে পারবেন। এতে বাজারে নতুন ভ্যালু অ্যাড যোগ হবে। শিল্পে আসবে সৃজনশীলতার রং। শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা আর সৃজনশীলতা—এই তিন শক্তিই পারে এই গিঁট খুলতে। একবার খুলে গেলে ঝুট আর বর্জ্য নয়, হবে সম্পদ।
আজকের প্রতিযোগিতা শুধু কম দামে পণ্য বানানোর প্রতিযোগিতা নয়, এখন এটি দায়বদ্ধতার প্রতিযোগিতা। যে দেশ নিজের বর্জ্যকে কাঁচামালে রূপ দিতে পারে, আর সাপ্লাই চেইনের প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা দেখাতে পারে, বিশ্ববাজার সেই দেশকে আস্থা দেয়। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ২০২৫ সালেই কয়েক লাখ টন বর্জ্য তৈরি করেছে। এই সংখ্যা ভয় দেখাতে পারে। কিন্তু আসলে এটা এক বিশাল সম্ভাবনা। বর্জ্য মানেই বোঝা—এমন ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সঠিক নিয়ম আর প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করলে এই বর্জ্যই হতে পারে নতুন শিল্পের ভিত।
লেখক: শোয়েব সাম্য সিদ্দিক
ব্যাংকার এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শুধু রপ্তানির পণ্য নয়, বরং লাখো মানুষের জীবিকার ভিত্তি। গ্রামের নারী-পুরুষ বা তরুণ-তরুণী পোশাকশিল্পে কাজ করে নিজের জন্য শুধু আয় করছেন না, তাঁদের ঘামে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও গড়ে উঠছে। এই শিল্প খাতে শুধু তৈরি পোশাকই গুরুত্বপূর্ণ নয়, পোশাক তৈরির পর উচ্ছিষ্ট কাপড়ের টুকরাগুলো গুরুত্বপূর্ণ, যাকে আমরা ঝুট বলে বর্জ্য আকারে ফেলে দিই। কিন্তু এই ঝুটেরও বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। আমরা ভাবি, কাটিং টেবিলের পাশে যেসব কাপড়ের ছোট্ট টুকরা জমে থাকে, সেগুলো আর কোনো কাজের নয়। অথচ এই ফেলে দেওয়া ঝুটই হতে পারে নতুন অর্থনীতির বীজ।
২০২৫ সালে বাংলাদেশে পোশাক কারখানাগুলো থেকে প্রায় ৫ দশমিক ৭ লাখ (প্রায় ৫ লাখ ৭৭ হাজার) টন টেক্সটাইল বর্জ্য তৈরি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে Thomson Reuters Foundation, TexSPACE Today এবং The Centre for Child Rights and Business-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। এই বিপুল বর্জ্য সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে তা হতে পারে টেকসই উৎপাদনের শক্তিশালী কাঁচামাল। এটি নতুন একটি শিল্প হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে। আজকের পোশাকের বিশ্ববাজার কেবল সস্তা দাম চায় না, চায় দায়বদ্ধতাও। পোশাকের দাম দেওয়ার আগে তারা জানতে চায় এসব তৈরি করতে গিয়ে কী পরিমাণ উপকরণ সাশ্রয় হলো, কত বর্জ্য পুনর্ব্যবহার হলো এবং কত কাঁচামাল উদ্বৃত্ত হলো? যে কারখানা এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারে, সেই কারখানার দর বাড়িয়ে দেয় আন্তর্জাতিক ক্রেতারা।
এই দায়বদ্ধতার চাহিদা এক বিরাট সুযোগ। ঝুট বাছাই, গ্রেডিং, বেইলিং, স্পিনিং, ফ্যাব্রিক—প্রতিটি ধাপে নতুন কর্মসংস্থান হতে পারে; বিশেষ করে নারী শ্রমিক আর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য তৈরি হতে পারে নতুন এক শিল্পের দ্বার। দেশের মধ্যে রিসাইকেলড সুতা তৈরি করা গেলে আরেক নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। কারণ, এতে অর্থের সাশ্রয় হবে, কাঁচামাল আমদানির ঝুঁকি কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচবে।
তবে এই সম্ভাবনার পথ একেবারেই মসৃণ নয়। এর সামনে আছে গেঁথে থাকা বহু পুরোনো গিঁট। প্রথম গিঁটটা আসে আমাদের মনোভাব থেকে। কারখানাগুলোতে এখনো বর্জ্য আলাদা করার অভ্যাস গড়ে ওঠেনি। কাটিং টেবিলের পাশে ঝুট পড়ে থাকে। ভালো-মন্দ সব একসঙ্গে থাকে। এতে ভালো মানের ঝুট খারাপের সঙ্গে মিশে গিয়ে মান হারায়। দাম পড়ে যায়। বাজারে এর জন্য আলাদা মূল্য মেলে না। শ্রমিকও বোঝে না কোনটা রাখবে, কোনটা ফেলবে।
দ্বিতীয় বড় সমস্যা প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে। আমাদের বেশির ভাগ কারখানা এখনো পুরোনো ধরনের ওপেন-এন্ড স্পিনিং পদ্ধতিতে আটকে আছে। এই প্রযুক্তিতে শুধু মাঝারি মানের সুতা তৈরি হয়। এর দাম কম এবং চাহিদাও সীমিত। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বড় ব্র্যান্ডগুলো উচ্চমানের পুনর্ব্যবহৃত (রিসাইকেলড) সুতা চায়। এমন সুতা বানাতে দরকার আধুনিক মেকানিক্যাল ও কেমিক্যাল রিসাইক্লিং যন্ত্র। এই যন্ত্রপাতি অনেক ব্যয়বহুল। তবে এগুলো না আনলে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করা সম্ভব নয়। ফলে আমরা এই গ্লোবাল দৌড়ে পিছিয়েই পড়ছি।
তৃতীয় গিঁট মালিকানা নিয়ে। ঝুট আসলে কার? কারখানা বলবে তাদের। রিসাইক্লার বলবে তাদের। আবার মধ্যস্বত্বভোগীরাও হাত গলিয়ে বসে থাকে মাঝখানে। ফলে কার মালিকানায় কবে ঝুট বিক্রি হবে, তার কোনো নিয়ম থাকে না। বাজারে দাম হঠাৎ বাড়ে, আবার হঠাৎ পড়ে। একেক দিন একেক রকম দর হয়। বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করাই কঠিন হয়ে পড়ে তখন।
এই তিনটি গিঁট সমস্যার সমাধান না হলে সম্ভাবনা শুধু ভাবনার মধ্যে আটকে থাকবে। ঝুট তখন কাঁচামাল নয়, বোঝা হয়ে যাবে। এই গিঁট খুলতে হলে প্রথমে দরকার স্বচ্ছ ভাবনা ও পরিকল্পনা। পরিকল্পনাহীন কোনো কিছুই সম্ভাবনা বয়ে আনে না। সে জন্য কারখানার কাটিং টেবিল থেকে শুরু করতে হবে নিয়মের চর্চা। ঝুটকে ফেলে দেওয়ার জিনিস না ভেবে রাখতে হবে আলাদা বাক্সে। রং, ফ্যাব্রিকের ধরন এবং গ্রেড অনুযায়ী আলাদা করতে হবে। প্রতিদিনের হিসাবও রাখতে হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। কারণ, যেটা মাপা যায়, সেটাই উন্নত করা যায়। এরপর দরকার স্বচ্ছতা, প্রতিটি ঝুটের যাত্রাপথ জানা থাকতে হবে। কারখানার মেঝে থেকে গুদাম, গুদাম থেকে ট্রাক, আর ট্রাক থেকে সুতা কারখানা পর্যন্ত এর যাত্রাপথ চিহ্ন দিয়ে রাখতে হবে। তাহলে ঝুট হারিয়ে যাবে না। ক্রেতার আস্থাও বাড়বে।
এভাবে ক্রেতারা নিশ্চিত হতে পারবে যে এই সুতা সত্যিই পুনর্ব্যবহৃত। এরপর জরুরি দরকার ঝুটের ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ। শিল্পাঞ্চলভিত্তিক কমন রিসাইক্লিং পার্ক গড়ে তুলতে হবে। তারপর শ্রমিকদের আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। এতে তাঁদের দক্ষতার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। পুরো প্রক্রিয়ার মানও ওপরের দিকে উঠবে। এখন শুধু সাধারণ টি-শার্ট বানিয়ে গেলে হবে না, বাজারে টিকে থাকতে হলে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতেই হবে। ডেনিম, ফ্লিস, অ্যাকটিভ পোশাক এমনকি পুরোনো কাপড় নতুনভাবে ডিজাইন করেও তৈরি করতে হবে। এতে প্রতি পণ্যে মূল্য অনেক বাড়বে। বাংলাদেশ গর্বের সঙ্গে বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে পারবে।
পাশাপাশি এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সস্তা ঋণ আর প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হবে। স্থানীয় ডিজাইনারদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করলে এই উদ্যোক্তারা পুরোনো কাপড় দিয়ে নতুন ধরনের পোশাক (আপসাইকেলড কালেকশন) বানাতে পারবেন। এতে বাজারে নতুন ভ্যালু অ্যাড যোগ হবে। শিল্পে আসবে সৃজনশীলতার রং। শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা আর সৃজনশীলতা—এই তিন শক্তিই পারে এই গিঁট খুলতে। একবার খুলে গেলে ঝুট আর বর্জ্য নয়, হবে সম্পদ।
আজকের প্রতিযোগিতা শুধু কম দামে পণ্য বানানোর প্রতিযোগিতা নয়, এখন এটি দায়বদ্ধতার প্রতিযোগিতা। যে দেশ নিজের বর্জ্যকে কাঁচামালে রূপ দিতে পারে, আর সাপ্লাই চেইনের প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা দেখাতে পারে, বিশ্ববাজার সেই দেশকে আস্থা দেয়। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ২০২৫ সালেই কয়েক লাখ টন বর্জ্য তৈরি করেছে। এই সংখ্যা ভয় দেখাতে পারে। কিন্তু আসলে এটা এক বিশাল সম্ভাবনা। বর্জ্য মানেই বোঝা—এমন ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সঠিক নিয়ম আর প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করলে এই বর্জ্যই হতে পারে নতুন শিল্পের ভিত।
লেখক: শোয়েব সাম্য সিদ্দিক
ব্যাংকার এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে আগের ১৫.৫ শতাংশের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে চীন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও ইসরায়েলের
০৫ এপ্রিল ২০২৫একদা ‘বিশ্বে এল নতুন বাদ মুজিববাদ, মুজিববাদ’ বলা সিরাজুল আলম খানই মুজিবের বলয় থেকে বের হয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করেছিলেন। সেটা ছিল পুঁজিবাদী ঘরানার জাতীয়তাবাদীদের মতোই সমাজতন্ত্রবিরোধী দল। নিজেদের দলের নাম তাঁরা যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক রেখেছিলেন, সেটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়; নামটি তাঁদের চেতনা
১৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ এখন যেন বিপর্যয়কর এক অবস্থায় পড়েছে। গত এক সপ্তাহে দু-এক দিনের ব্যবধানে তিনটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি হলো, দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে আগুন লাগার ঘটনা। এতে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগেবৈশ্বিক পর্নো সাইটে নামডাক করেছেন বাংলাদেশি যুগল। চলতি বছরের অক্টোবরে পর্নো তারকাদের আন্তর্জাতিক পারফরমার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁরা অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন। এক বছরে তাঁদের পর্নো ভিডিও দেখা হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার। বান্দরবান থেকে এই যুগলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগেমাহফুজা খাতুন
বাংলাদেশ এখন যেন বিপর্যয়কর এক অবস্থায় পড়েছে। গত এক সপ্তাহে দু-এক দিনের ব্যবধানে তিনটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি হলো, দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে আগুন লাগার ঘটনা। এতে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার আগে মিরপুরের একটি পোশাক কারখানায় এবং চট্টগ্রামের ইপিজেডে একটি বড় কোম্পানিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই তিনটি ঘটনায় দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। কয়েক মাস আগে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং দেশের সিভিল এভিয়েশন সেফটি এবং জাতীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে,
তা স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে মানুষের প্রশ্ন এখন একটাই—দেশে নিরাপত্তা বলতে কিছু আছে, নাকি সবই ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে?
আগে আমরা শুধু আগুন নিয়ে আতঙ্কিত হতাম, এখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। আজ কোনো জায়গাই যেন আর নিরাপদ মনে হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মকানুন না মানা, তদারকির চরম অভাব এবং নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতাই এখন দুর্ঘটনাকে নিয়মিত ঘটনায় পরিণত করেছে। বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বা দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাব্যবস্থায় ঘাটতি মানে কেবল দুর্ঘটনা নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও এক গভীর সংকট।
এসব অগ্নিদুর্ঘটনার মূল সমস্যা আসলে একটিই—জবাবদিহির অভাব। বারবার দুর্ঘটনার পরও এর জন্য কেউ শাস্তি পাচ্ছে না, যথাযথ জবাবদিহিও নিশ্চিত হচ্ছে না। নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি প্রকট। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ফায়ার সেফটি সরঞ্জাম নেই, বিমানের নিরাপত্তা পরীক্ষা দুর্বল, ফায়ার সার্ভিসে জনবল কম, এভিয়েশন অথরিটির নজরদারির অভাবও এসবের জন্য দায়ী। এ ছাড়া অনুমোদন, লাইসেন্স প্রদান এবং রক্ষণাবেক্ষণে অনিয়মের ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। সবচেয়ে হতাশাজনক হলো তদন্তের চিত্র, যেখানে সবকিছুর কারণ ‘শর্টসার্কিট’ বা ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’ বলে দায় এড়ানো যেন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। দোষীরা শাস্তিহীন থাকার কারণে দুর্ঘটনা এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
তবে একের পর এক বড় দুর্ঘটনার পেছনে পরিকল্পিত নাশকতার অদৃশ্য ছায়াও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। একটার পর একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা; যেমন বিমানবন্দর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বড় কলকারখানা টার্গেট হওয়া উদ্বেগজনক। এটা কি শুধু কাকতালীয়, নাকি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির একটি কৌশল? এসব বিষয়ও গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা অতি জরুরি। এমনকি কিছু কারখানায় আগুন দিয়ে বিমা জালিয়াতির প্রমাণও পাওয়া গেছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের শিল্পায়ন, অর্থনীতি, শিক্ষা, এমনকি সাধারণ মানুষের জীবনও চরম ঝুঁকিতে পড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ কমবে, পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আন্তর্জাতিক মহলে বিমান চলাচলের সেফটি রেটিং কমে যেতে পারে।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধযোগ্য, কিন্তু যখন অব্যবস্থাপনা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়, তখন তা জাতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ফায়ার অডিট এবং সেফটি সার্টিফিকেট হালনাগাদ করা, এভিয়েশন সেফটি কমিশন গঠন ও স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও ট্রেনিং এয়ার রুটের নতুন নীতিমালা প্রণয়ন এবং জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করা আবশ্যক। অগ্নিকাণ্ড এবং বিমান দুর্ঘটনা-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি, স্কুল, কলেজ, কলকারখানা ও অফিসে নিয়মিত ফায়ার ও সেফটি ড্রিল বাধ্যতামূলক করতে হবে। এর জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে—দেশের মানুষের জীবন আর জাতীয় নিরাপত্তা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া যায় না। জাতির দাবি আজ একটাই—নিরাপত্তা চাই, জবাবদিহি চাই।
লেখক: মাহফুজা খাতুন
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ এখন যেন বিপর্যয়কর এক অবস্থায় পড়েছে। গত এক সপ্তাহে দু-এক দিনের ব্যবধানে তিনটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি হলো, দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে আগুন লাগার ঘটনা। এতে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার আগে মিরপুরের একটি পোশাক কারখানায় এবং চট্টগ্রামের ইপিজেডে একটি বড় কোম্পানিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই তিনটি ঘটনায় দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। কয়েক মাস আগে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং দেশের সিভিল এভিয়েশন সেফটি এবং জাতীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে,
তা স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে মানুষের প্রশ্ন এখন একটাই—দেশে নিরাপত্তা বলতে কিছু আছে, নাকি সবই ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে?
আগে আমরা শুধু আগুন নিয়ে আতঙ্কিত হতাম, এখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। আজ কোনো জায়গাই যেন আর নিরাপদ মনে হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মকানুন না মানা, তদারকির চরম অভাব এবং নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতাই এখন দুর্ঘটনাকে নিয়মিত ঘটনায় পরিণত করেছে। বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বা দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাব্যবস্থায় ঘাটতি মানে কেবল দুর্ঘটনা নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও এক গভীর সংকট।
এসব অগ্নিদুর্ঘটনার মূল সমস্যা আসলে একটিই—জবাবদিহির অভাব। বারবার দুর্ঘটনার পরও এর জন্য কেউ শাস্তি পাচ্ছে না, যথাযথ জবাবদিহিও নিশ্চিত হচ্ছে না। নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি প্রকট। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ফায়ার সেফটি সরঞ্জাম নেই, বিমানের নিরাপত্তা পরীক্ষা দুর্বল, ফায়ার সার্ভিসে জনবল কম, এভিয়েশন অথরিটির নজরদারির অভাবও এসবের জন্য দায়ী। এ ছাড়া অনুমোদন, লাইসেন্স প্রদান এবং রক্ষণাবেক্ষণে অনিয়মের ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। সবচেয়ে হতাশাজনক হলো তদন্তের চিত্র, যেখানে সবকিছুর কারণ ‘শর্টসার্কিট’ বা ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’ বলে দায় এড়ানো যেন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। দোষীরা শাস্তিহীন থাকার কারণে দুর্ঘটনা এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
তবে একের পর এক বড় দুর্ঘটনার পেছনে পরিকল্পিত নাশকতার অদৃশ্য ছায়াও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। একটার পর একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা; যেমন বিমানবন্দর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বড় কলকারখানা টার্গেট হওয়া উদ্বেগজনক। এটা কি শুধু কাকতালীয়, নাকি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির একটি কৌশল? এসব বিষয়ও গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা অতি জরুরি। এমনকি কিছু কারখানায় আগুন দিয়ে বিমা জালিয়াতির প্রমাণও পাওয়া গেছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের শিল্পায়ন, অর্থনীতি, শিক্ষা, এমনকি সাধারণ মানুষের জীবনও চরম ঝুঁকিতে পড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ কমবে, পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আন্তর্জাতিক মহলে বিমান চলাচলের সেফটি রেটিং কমে যেতে পারে।
দুর্ঘটনা প্রতিরোধযোগ্য, কিন্তু যখন অব্যবস্থাপনা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়, তখন তা জাতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ফায়ার অডিট এবং সেফটি সার্টিফিকেট হালনাগাদ করা, এভিয়েশন সেফটি কমিশন গঠন ও স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও ট্রেনিং এয়ার রুটের নতুন নীতিমালা প্রণয়ন এবং জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করা আবশ্যক। অগ্নিকাণ্ড এবং বিমান দুর্ঘটনা-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি, স্কুল, কলেজ, কলকারখানা ও অফিসে নিয়মিত ফায়ার ও সেফটি ড্রিল বাধ্যতামূলক করতে হবে। এর জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে—দেশের মানুষের জীবন আর জাতীয় নিরাপত্তা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া যায় না। জাতির দাবি আজ একটাই—নিরাপত্তা চাই, জবাবদিহি চাই।
লেখক: মাহফুজা খাতুন
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে আগের ১৫.৫ শতাংশের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে চীন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও ইসরায়েলের
০৫ এপ্রিল ২০২৫একদা ‘বিশ্বে এল নতুন বাদ মুজিববাদ, মুজিববাদ’ বলা সিরাজুল আলম খানই মুজিবের বলয় থেকে বের হয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করেছিলেন। সেটা ছিল পুঁজিবাদী ঘরানার জাতীয়তাবাদীদের মতোই সমাজতন্ত্রবিরোধী দল। নিজেদের দলের নাম তাঁরা যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক রেখেছিলেন, সেটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়; নামটি তাঁদের চেতনা
১৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের তৈরি পোশাক শুধু রপ্তানির পণ্য নয়, বরং লাখো মানুষের জীবিকার ভিত্তি। গ্রামের নারী-পুরুষ বা তরুণ-তরুণী পোশাকশিল্পে কাজ করে নিজের জন্য শুধু আয় করছেন না, তাঁদের ঘামে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও গড়ে উঠছে। এই শিল্প খাতে শুধু তৈরি পোশাকই গুরুত্বপূর্ণ নয়, পোশাক তৈরির পর উচ্ছিষ্ট কাপড়ের টুকরাগুল
১৩ ঘণ্টা আগেবৈশ্বিক পর্নো সাইটে নামডাক করেছেন বাংলাদেশি যুগল। চলতি বছরের অক্টোবরে পর্নো তারকাদের আন্তর্জাতিক পারফরমার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁরা অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন। এক বছরে তাঁদের পর্নো ভিডিও দেখা হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার। বান্দরবান থেকে এই যুগলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়
বৈশ্বিক পর্নো সাইটে নামডাক করেছেন বাংলাদেশি যুগল। চলতি বছরের অক্টোবরে পর্নো তারকাদের আন্তর্জাতিক পারফরমার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁরা অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন। এক বছরে তাঁদের পর্নো ভিডিও দেখা হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার। বান্দরবান থেকে এই যুগলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পর্নো এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে ইতিবাচক কিছু কথা বলার সুযোগ নেই। আমাদের দেশের সামাজিক মূল্যবোধের কথা বিবেচনায় নিলে এই ধরনের সংবাদ খুবই বিব্রতকর।
বিব্রতকর হলেও পর্নো বিষয়ে কথা বলা উচিত। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে গোপন ম্যাগাজিন বা বইপত্র প্রকাশিত হতো। স্থূল যৌনতাই ছিল সেই প্রকাশনাগুলোর মূল উপজীব্য। প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভিসিআর বা ভিসিপির মাধ্যমে নীল ছবির আমদানি হয়। আশির দশকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ হানা দিয়েছে নীল ছবির ডেরায়, এ রকম খবর তখন দেখা যেত পত্রপত্রিকায়। বর্তমান যুগে ইন্টারনেট দুনিয়ায় রুচিশীল কনটেন্টের বিপরীতে রুচিহীন কনটেন্টেরও ছড়াছড়ি। ফলে অর্থ উপার্জনের জন্য যে কেউ বেছে নিতে পারছেন এমন সব পথ, যা একসময় ভেবেও দেখা যেত না।
গ্রেপ্তার যুগল বড়ই সেয়ানা। ভিডিও আপলোড করা ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচার চালাতেন। নতুনদের এসব প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাতেন। সম্ভাব্য আগ্রহীদের ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করার জন্য টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরিয়েই কারিগরি জ্ঞান দিয়ে যা ইচ্ছে তা ঘটানো যায়—এটাও তাঁরা প্রমাণ করেছেন। ফলে চাইলেই এই সখাত সলিলে আত্মবিসর্জন দেওয়া যায়। ব্যাপারটা এতই সহজ হয়ে গেছে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, পর্নোগ্রাফির প্রতি আকর্ষণ অনেকটা নেশার মতো। বাস্তব জীবনের ভালোবাসা বা যৌন সম্পর্কের প্রতি তাতে আগ্রহ কমে যায়। তাৎক্ষণিক আনন্দের সঙ্গে এর যোগ আছে বলে অনেকে এসব নীল ছবি দেখার জন্য অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। লুকিয়ে পর্নোগ্রাফির আস্বাদ গ্রহণ করতে করতে সামাজিক সম্পর্কগুলো শিথিল হয়ে পড়ে। যৌনতার অবাস্তব, অতিরঞ্জিত ও বাণিজ্যিক প্রকাশ ঘটানো এই পর্নোগ্রাফি দেখার ফলে নর-নারীর বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলো নিয়ে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এসব সাইট দেখতে দেখতে যেকোনো মানুষের একাকিত্ব ও বিষণ্নতা বেড়ে যেতে পারে, যা জীবনকে ভুল পথে পরিচালনা করতে পারে।
এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো খুব সহজ কাজ নয়। স্কুলেই বয়স-উপযোগী যৌনশিক্ষা এবং সচেতনতা তৈরি করা, অভিভাবকদেরও সচেতন হয়ে সন্তানদের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি খোলাসা করা, পর্নোতে আসক্ত হয়ে পড়লে মানবিক সহায়তা দেওয়া দরকার। তবে তার চেয়ে বেশি দরকার তরুণদের সামনে এমন এক সৃজনশীল, সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্র তৈরি করা, যা পর্নোর অশুভ থাবা থেকে তরুণদের রক্ষা করতে পারে। গ্রেপ্তার যুগলের মতো আরও কেউ যদি এই অপকর্মে লিপ্ত থাকেন, তাহলে তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা হোক।
বৈশ্বিক পর্নো সাইটে নামডাক করেছেন বাংলাদেশি যুগল। চলতি বছরের অক্টোবরে পর্নো তারকাদের আন্তর্জাতিক পারফরমার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁরা অষ্টম স্থান অধিকার করেছেন। এক বছরে তাঁদের পর্নো ভিডিও দেখা হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার। বান্দরবান থেকে এই যুগলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পর্নো এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে ইতিবাচক কিছু কথা বলার সুযোগ নেই। আমাদের দেশের সামাজিক মূল্যবোধের কথা বিবেচনায় নিলে এই ধরনের সংবাদ খুবই বিব্রতকর।
বিব্রতকর হলেও পর্নো বিষয়ে কথা বলা উচিত। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে গোপন ম্যাগাজিন বা বইপত্র প্রকাশিত হতো। স্থূল যৌনতাই ছিল সেই প্রকাশনাগুলোর মূল উপজীব্য। প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভিসিআর বা ভিসিপির মাধ্যমে নীল ছবির আমদানি হয়। আশির দশকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ হানা দিয়েছে নীল ছবির ডেরায়, এ রকম খবর তখন দেখা যেত পত্রপত্রিকায়। বর্তমান যুগে ইন্টারনেট দুনিয়ায় রুচিশীল কনটেন্টের বিপরীতে রুচিহীন কনটেন্টেরও ছড়াছড়ি। ফলে অর্থ উপার্জনের জন্য যে কেউ বেছে নিতে পারছেন এমন সব পথ, যা একসময় ভেবেও দেখা যেত না।
গ্রেপ্তার যুগল বড়ই সেয়ানা। ভিডিও আপলোড করা ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচার চালাতেন। নতুনদের এসব প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাতেন। সম্ভাব্য আগ্রহীদের ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করার জন্য টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরিয়েই কারিগরি জ্ঞান দিয়ে যা ইচ্ছে তা ঘটানো যায়—এটাও তাঁরা প্রমাণ করেছেন। ফলে চাইলেই এই সখাত সলিলে আত্মবিসর্জন দেওয়া যায়। ব্যাপারটা এতই সহজ হয়ে গেছে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, পর্নোগ্রাফির প্রতি আকর্ষণ অনেকটা নেশার মতো। বাস্তব জীবনের ভালোবাসা বা যৌন সম্পর্কের প্রতি তাতে আগ্রহ কমে যায়। তাৎক্ষণিক আনন্দের সঙ্গে এর যোগ আছে বলে অনেকে এসব নীল ছবি দেখার জন্য অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। লুকিয়ে পর্নোগ্রাফির আস্বাদ গ্রহণ করতে করতে সামাজিক সম্পর্কগুলো শিথিল হয়ে পড়ে। যৌনতার অবাস্তব, অতিরঞ্জিত ও বাণিজ্যিক প্রকাশ ঘটানো এই পর্নোগ্রাফি দেখার ফলে নর-নারীর বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলো নিয়ে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এসব সাইট দেখতে দেখতে যেকোনো মানুষের একাকিত্ব ও বিষণ্নতা বেড়ে যেতে পারে, যা জীবনকে ভুল পথে পরিচালনা করতে পারে।
এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো খুব সহজ কাজ নয়। স্কুলেই বয়স-উপযোগী যৌনশিক্ষা এবং সচেতনতা তৈরি করা, অভিভাবকদেরও সচেতন হয়ে সন্তানদের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি খোলাসা করা, পর্নোতে আসক্ত হয়ে পড়লে মানবিক সহায়তা দেওয়া দরকার। তবে তার চেয়ে বেশি দরকার তরুণদের সামনে এমন এক সৃজনশীল, সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্র তৈরি করা, যা পর্নোর অশুভ থাবা থেকে তরুণদের রক্ষা করতে পারে। গ্রেপ্তার যুগলের মতো আরও কেউ যদি এই অপকর্মে লিপ্ত থাকেন, তাহলে তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা হোক।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে আগের ১৫.৫ শতাংশের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে চীন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা ও ইসরায়েলের
০৫ এপ্রিল ২০২৫একদা ‘বিশ্বে এল নতুন বাদ মুজিববাদ, মুজিববাদ’ বলা সিরাজুল আলম খানই মুজিবের বলয় থেকে বের হয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করেছিলেন। সেটা ছিল পুঁজিবাদী ঘরানার জাতীয়তাবাদীদের মতোই সমাজতন্ত্রবিরোধী দল। নিজেদের দলের নাম তাঁরা যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক রেখেছিলেন, সেটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়; নামটি তাঁদের চেতনা
১৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের তৈরি পোশাক শুধু রপ্তানির পণ্য নয়, বরং লাখো মানুষের জীবিকার ভিত্তি। গ্রামের নারী-পুরুষ বা তরুণ-তরুণী পোশাকশিল্পে কাজ করে নিজের জন্য শুধু আয় করছেন না, তাঁদের ঘামে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও গড়ে উঠছে। এই শিল্প খাতে শুধু তৈরি পোশাকই গুরুত্বপূর্ণ নয়, পোশাক তৈরির পর উচ্ছিষ্ট কাপড়ের টুকরাগুল
১৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ এখন যেন বিপর্যয়কর এক অবস্থায় পড়েছে। গত এক সপ্তাহে দু-এক দিনের ব্যবধানে তিনটি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি হলো, দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে আগুন লাগার ঘটনা। এতে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগে