Ajker Patrika

সবুজের অভিযান মাঠহীন সবুজে

প্রশান্ত মৃধা
সবুজের অভিযান মাঠহীন সবুজে

হঠাৎ বিষয়টা খেয়ালে আসে। বিষয়টা আমাদের চারপাশে সব সময়ই ঘুরপাক খায়; কিন্তু প্রসঙ্গ না উঠলে সেভাবে আমলে নিই না। বরং তা নিয়ে বাজারচলতি কথার জোয়ারে ভাসি। ওদিকে তা সবার একই বারতা আর গেল গেল রব। রব তবু ভালো; কিন্তু ওই রব এখন আর্তনাদ হয়ে প্রায় হাহাকারে পরিণত হয়েছে।

নগর ও শহরের একটু বাইরের দিকে আর শহরে যেখানে স্কুল-কলেজের মাঠটি ফাঁকা থাকে বিকেলের দিকে, সেখানকার বালক-কিশোরেরা অন্য এলাকার সমবয়সীদের তুলনায় খেলার সুযোগ বেশি পায়। এখনো দু-এক প্রজন্ম আগের বালক-কিশোরদের মতো সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলে কাটায়। সে সময়ে নিজস্ব বৃত্তে যেমন ছিল এক একজন ছোটখাটো ম্যারাডোনা, প্লাতিনি, সক্রেটিস, রোনালদো কিংবা গাভাস্কার, ইমরান, রিচার্ড, আকরাম কিংবা সালাউদ্দিন, সালাম, আশিস, জনি প্রমুখ; এখন সেখানে মেসি-ক্রিস্টিয়ানো কিংবা সাকিব-মুশফিক-রিয়াদ-বিরাট।

বিষয়টা এক পাড়ার সঙ্গে অন্য পাড়ার খেলার সাবেকি ধরন নয়, ওই সব মহা খেলোয়াড়ের সঙ্গে নিজেদের নাম যুক্ত করারও নয়, বালক-কিশোরেরা যে খেলার মাঠে খেলতে পারছে, সেটিই খুশির বিষয়। কোথাও পাশে হয়তো একেবারে নিয়মিত খেলা হয় এমন গ্যালারি-সমৃদ্ধ মাঠ আছে অথবা নেই, সেগুলোয় ওই সব নবীনের ভাষায় বড়রা খেলে; কিন্তু যে আয়োজনহীন ফাঁকা জায়গাটুকুতে অথবা মাঠে তারা খেলতে পারছে, সেই আনন্দ কোনো কিছুর বিনিময়ে কেনা যাবে না।

শহরের মতো যেকোনো জায়গা মাঠ-পুকুর সবই লোপাট হয়ে গেছে। অনেক আগে প্রখ্যাত মিসরীয় লেখক নাগিব মাহফুজের একটি গল্প পড়েছিলাম। নাম সম্ভবত ‘বাজিকরের হাতে থালা লোপাট’। তা জাদুকরের হাতে একটি থালা উধাও হতেই পারে; কিন্তু আমাদের নাগরিক ও মহানাগরিক জীবন এমন সব বাজিকরের জোগান দিয়েছে যে, তাদের হাতে পড়ে আস্ত একটি খেলার মাঠ কিংবা একটা বড়সড় পুকুর একেবারে উধাও হয়ে যায়। কেউ কেউ হয়তো বলবেন, একেবারে নদীই যেখানে লোপাট হয়ে যাচ্ছে, সেখানে মাঠ অতি ক্ষুদ্র জিনিস। ওদিকে নাগরিকদের না তাকালেও চলবে।

আচ্ছা, তাহলে সেদিকে তাকালাম-ই না; কিন্তু শহর বা নগরের একটু বাইরের দিকে গেলে, প্রতিটি বিকেলে ওই যে চঞ্চল-দুরন্ত আধমরাদের ঘা মেরে সিধে করার শক্তিসম্পন্ন বালক-কিশোরদের দেখা যায়, তাদের দিকেও তাকানো যাবে না। তাহলে এর উল্টো পিঠে যাদের বাস, তাকাই তাদের দিকে। ওই খেলার মাঠের বদলে যাদের চোখের সামনে তখন মোবাইল ফোন বা অন্য বৈদ্যুতিক মাধ্যম। তারা সেখানে মেসি-ক্রিস্টিয়ানো কিংবা সাকিব-তামিমদের খেলা দেখতে দেখতে নিজেকে খেলার মাঠে কল্পনা করে নিচ্ছে। অন্য কোনো উপায় তো নেই। তাদের বাপ-দাদার প্রজন্ম তাদের জন্য খেলার কোনো জায়গা রাখেনি। স্কুলগুলো পায়রার খোপ।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। সেখানে খেলার মাঠ অতি কষ্টকল্পনা, কাব্য করার মতো শোনাতে পারে। এক ব্যবসায়ী নগরপিতা একবার বলেছিলেন, আপাতত যে উন্নয়নের দিকে হাঁটছি আমরা, এখন পরিবেশের দিকে একটু কম খেয়াল দেব।

ভালো কথা, পরিবেশ আর সেই উন্নয়ন দুটোই তো শুধু এই প্রজন্মেরই ‘ভোগে’র জন্য নয়, যারা একসময়ে এসব এগিয়ে নিয়ে যাবে, তারা যদি মাঠের মেসি-ক্রিস্টিয়ানো আর মোস্তাফিজ-লিটনকে চোখের সামনে ছয়-আট ইঞ্চির আয়োজনে দেখে, নিজেরা যদি খেলতে না পারে, যদি ভাবে সবকিছু এমনই, তখন উন্নয়নের সেই উন্নত মাঠ কোন কাজে লাগবে! এক বন্ধু বলেছিলেন, টানা কয়েক দিন কম্পিউটারে থাকতে থাকতে তার হাত থেকে কাচের গ্লাস পড়ে গেলে তিনি সামনের জনকে বলেছিলেন, কন্ট্রোল‍+জেড (কম্পিউটারের ব্যাকরণে ‘আনডু’) চাপতে। তাহলে গ্লাস আবার তার হাতে ফিরে আসবে।

আহারে, এসব বালক-কিশোরের কাছে মাঠের সবুজ কোনো বাস্তব বিষয় নয়। সেখানে গোল বা আউটটা যন্ত্রে টিপে বা টেনে আবার দেখে নেওয়া যায়! তার নবীন চোখে তাই বাস্তব!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাস্তি পাচ্ছেন বিটিআরসির মহাপরিচালকসহ ৩০ জনের বেশি কর্মকর্তা

ভূমি অফিসের কাণ্ড: এসি ল্যান্ড দপ্তরের নামে দেড় কোটি টাকা আদায়

‘তেলের ক্রেতা’ হিসেবে ভারতকে আর পাবে না রাশিয়া, জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

বরখাস্ত সৈনিককে অস্ত্র দিয়েছেন বিএনপি নেতা, অডিও নিয়ে তোলপাড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত