Ajker Patrika

কপটতার শাস্তি জাহান্নাম

ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান
কপটতার শাস্তি  জাহান্নাম

মানুষ যেসব বদ স্বভাব ও মন্দ আচরণের কারণে সমাজে নিন্দনীয় ও ঘৃণিত হয়, তার মধ্যে কপটতা একটি। কপটতার আরবি প্রতিশব্দ ‘নিফাক’। কপটতার আভিধানিক অর্থ হলো মনে কোনো কিছু গোপন করে মুখে তার বিপরীত প্রকাশ করা। পরিভাষায়, মনের মধ্যে কুফরি গোপন করে প্রকাশ্যে নিজকে ইমানদার বলে দাবি করাকে নিফাক বা কপটতা বলে। এটি আল্লাহর কাছে খুবই ক্রোধের বিষয়। এ প্রসঙ্গে সুরা সফের ২-৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা তা কেন বল, যা তোমরা কর না? তোমরা যা কর না,  তা বলা আল্লাহর কাছে বড়ই ক্রোধের বিষয়।’

আর যারা এমন করে, তাদের মুনাফিক বা কপটাচারী বলে। মুনাফিকদের পরিচয় সম্পর্কে আল্লাহ সুরাতুন নিসার ১৪২-১৪৩ আয়াতে বলেন, ‘অবশ্যই মুনাফিকেরা প্রতারণা করেছে আল্লাহর সঙ্গে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুত তারা যখন নামাজে দাঁড়ায়, তখন তারা শৈথিল্য প্রদর্শন করে এবং লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করে। আর তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। এরা দোদুল্যমান অবস্থায় ঝুলন্ত, এদিকেও নয়, 
ওদিকেও নয়।’

রসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে অনেক মুনাফিক ছিল, যাদের তিনি চিনতে পারলেও জনসমক্ষে তা প্রকাশ করেননি। মুনাফিক নেতা নামে খ্যাত ছিল আব্দুল্লাহ ইব্ন উবাই। সে ইসলামি আচার-অনুষ্ঠান কেবল লৌকিকতার জন্য প্রদর্শন করত। সে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রেও কপটতা প্রদর্শন করায় সবার কাছে ঘৃণিত হয়।

এমনকি সে উহুদ যুদ্ধের শুরুতে মহানবী (সা.)-এর পক্ষ অবলম্বন করে এবং একপর্যায়ে স্বীয় বাহিনী নিয়ে রসুল (সা.)-এর দল পরিত্যাগ করে। এদিন থেকেই সে মুনাফিক নেতা নামে পরিচিতি লাভ করে। রসুলের যুগেও মুনাফিকেরা যেমন ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য ভয়ংকর ছিল, তেমনি বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্যও তারা হুমকিস্বরূপ। কেবল তাদের কারণেই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে থাকে। মুনাফিকদের কার্যাবলি পর্যালোচনা করলে আমরা তাদের চারটি চিহ্ন পাই—১. আমানত রাখলে তা খিয়ানত করে, ২. কথা বললে মিথ্যা বলে, ৩. অঙ্গীকার করলে তা ভঙ্গ করে, ৪. ঝগড়া করলে খারাপ ভাষায় গালি দেয়।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘উপরোক্ত চারটি বৈশিষ্ট্য যার মধ্যে পাওয়া যাবে, তাকে নির্ভেজাল মুনাফিক বলা হয়। আর যার মধ্যে একটি পাওয়া যায়, তার মধ্যে মুনাফিকের একটি চিহ্ন আছে, যতক্ষণ না পরিত্যাগ করে।’

অন্য হাদিসে মহানবী (সা.) মুনাফিকদের উত্তেজিত ছাগলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যে ছাগল নিজেকে পরিতৃপ্ত করার জন্য কখনো একজনের কাছে আবার কখনো অন্যের কাছে গমন করে। মহানবী (সা.) আরও বলেন, ‘মুনাফিকের মধ্যে দুটি গুণ কখনো একত্র হতে পারে না। তা হলো সচ্চরিত্র ও ধৈর্য।’ মুনাফিক দুনিয়ায় যেমন কারও বিশ্বস্ততা লাভ করতে পারে না, তেমনি পরকালেও রয়েছে তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সুরা নিসার ১৪৫ আয়াতে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে মুনাফিকেরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তোমরা কখনো তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী পাবে না।’

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বাগাবি (রহ.) বলেন, ‘মুনাফিকেরা এমন তালাবদ্ধ গৃহে আবদ্ধ থাকবে, যার ওপরে ও নিচ দিক আগুন জ্বলতে থাকবে।’

পক্ষান্তরে যারা এসব নিন্দনীয় স্বভাব পরিহার করে তাওবা করে এবং একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর পথে চলে, তারাই কেবল মুক্তি পাবে। সুরা নিসার ১৪৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্য যারা তাওবা করেছে, নিজেদের অবস্থার সংস্কার করেছে, আল্লাহর পথকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যেই কেবল তাদের জীবনবিধানে একনিষ্ঠতা প্রদর্শন করেছে, তারা থাকবে মুমিনদের সঙ্গে।’

লেখক: ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাস্তি পাচ্ছেন বিটিআরসির মহাপরিচালকসহ ৩০ জনের বেশি কর্মকর্তা

ভূমি অফিসের কাণ্ড: এসি ল্যান্ড দপ্তরের নামে দেড় কোটি টাকা আদায়

‘তেলের ক্রেতা’ হিসেবে ভারতকে আর পাবে না রাশিয়া, জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

বরখাস্ত সৈনিককে অস্ত্র দিয়েছেন বিএনপি নেতা, অডিও নিয়ে তোলপাড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত