তারেক ইব্রাহিম
ধরা যাক, পারস্য রাজা কলিঙ্গদেশ ভ্রমণে গেছেন পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বাণিজ্যের প্রসারের জন্য। কিন্তু কলিঙ্গের প্রতিবেশী রাষ্ট্র লঙ্কার রাজার এই ভ্রমণ পছন্দ হলো না। লঙ্কার রাজা মনে মনে ভেবে নিলেন, এটা নিশ্চয়ই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। লঙ্কায় সংবাদটি তখন দুইভাবে প্রচারিত হতে থাকল—এক. সম্পর্ক উন্নয়নে পারস্য রাজার কলিঙ্গদেশ ভ্রমণ, দুই. পারস্য ও কলিঙ্গদেশ মিলে লঙ্কায় হামলার পরিকল্পনা করছে।
এক্ষেত্রে প্রথমটি সংবাদ ও দ্বিতীয়টি মতামতের ভিত্তিতে অপতথ্য; নির্দিষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মনগড়া আখ্যা দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা। নিছক এই ছেলেমানুষি গল্পটি বলার নেপথ্যে রয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত গত ছয় মাসের সংবাদসমূহ।
প্রথমে আমাদের আলোকপাত করতে হবে গণমাধ্যমের কাজ কী সে বিষয়ে; কোনো ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর সেই ঘটনার ‘সত্যতা যাচাই’ করে, নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সংবাদ প্রকাশ করা। তা ছাড়া জনগণের মনস্তত্ত্ব, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে সংবাদ প্রচার এবং সংবাদমাধ্যমে মতামত প্রদান করাটাও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের অংশ। সংবাদমাধ্যমের মূলনীতির এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের সংবাদ প্রচারের সময় এই মূলনীতিগুলো অনুসরণ করতে অনেকাংশেই ব্যর্থ। সংবাদের ‘সত্যতা যাচাইয়ের’ স্তরই পার হতে পারবে না দেশটির গণমাধ্যম।
৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নিরলস অপপ্রচার তাদের সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রশ্ন তৈরি করে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব সংবাদ এমন ধারণার খোরাক জুগিয়েছে তার মধ্যে প্রথম হলো ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের ছাত্রদের ভূমিকাকে সঠিকভাবে উপস্থাপন না করা; ৭০০-এর ওপরে ছাত্রকে সরাসরি হত্যা করার নজির উপমহাদেশে নেই, এমন একটি বিশাল ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে শুধু আমেরিকা, চীন ও পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে ভারত। দেশটির গণমাধ্যমের মতে, এই আন্দোলন ছিল তৎকালীন ভারতের পরীক্ষিত বন্ধু আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করে ভারতবিদ্বেষী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চাল মাত্র। আক্ষেপের বিষয় হলো, জুলাই আন্দোলনের এত দিন পরেও ছাত্রদের প্রতি হাসিনা সরকারের অমানুষিক নির্যাতন নিয়ে কোনো সমবেদনামূলক প্রতিবেদন আসেনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। এই পুরো দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে, বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা ও প্রজ্ঞাকে হেয় করা হয়েছে। বিশাল এই ঐতিহাসিক আন্দোলনকে আমেরিকা, চীন ও পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের ফসল—এই আখ্যা অপমানসূচক।
দ্বিতীয়ত, ৪ আগস্ট পর্যন্ত ভারতীয় নেতৃবৃন্দ ও সংবাদমাধ্যমের চোখে বাংলাদেশ ছিল ভারতের বন্ধু ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীল রাষ্ট্র। কিন্তু শেখ হাসিনা পতনের পর এবং প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণের মধ্যবর্তী তিন দিন যখন দেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না তৎকালীন সংঘটিত রাজনৈতিক বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও হামলাগুলোকে ভারত সরকার ও তার গণমাধ্যম হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হিসেবে দেখিয়েছে। অথচ এই হামলাগুলো অনেকাংশেই ছিল রাজনৈতিক, পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে। তবু ভারতের গণমাধ্যম সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হিসেবে তুলে ধরেছে প্রতিনিয়ত।
প্রশ্ন থাকে, ২০০২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৩১টি দাঙ্গা সংঘটিত হয় ভারতে, যার মধ্যে ২০টি ছিল হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, তখন কি বাংলাদেশের গণমাধ্যমও এমন কোনো ভূমিকা রেখেছে, যা ভারতের গণমাধ্যম এখন রাখছে?
তৃতীয়ত, সাম্প্রতিক ২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে প্রথমবার পালিত হয় শহীদ সেনা দিবস, সে উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তাঁর বক্তব্য ছিল সময়োপযোগী ও দিকনির্দেশনামূলক, যেখানে তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন, জাতীয় ঐক্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহের বিচার ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেন।
অথচ ভারতীয় গণমাধ্যমে এর প্রচার ছিল জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সতর্কবার্তা, ক্ষমতা গ্রহণের ইঙ্গিত। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার শিরোনাম ছিল ‘ইউনূসের ব্যর্থতা উসকে বিতর্কের আগুন জ্বাললেন সেনাপ্রধান, তাতে ঘি ঢাললেন সাখাওয়াত’।
একজন সেনাপ্রধান একটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ ব্যক্তির একজন। একটি সুশৃঙ্খলিত বাহিনীপ্রধানের বক্তব্য এমন ভুলভাবে উপস্থাপনের দায় ভারতীয় গণমাধ্যম এড়াতে পারে না।
এর আগেও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের অনেক বক্তব্য ও সাক্ষাৎকারকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। বাংলাদেশের সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সত্যতা যাচাই করে সংবাদ প্রকাশের দায়বদ্ধতার ব্যাপার দেশটি বেমালম ভুলে যায়।
২ মার্চ ইন্ডিয়া টুডে নবগঠিত রাজনৈতিক দল National Ctitizen Party কে Nationalist Conservative Party হিসেবে প্রতিবেদন করেছে। এটাকে ভুল না বলে অপতথ্য বলাই শ্রেয়। সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য তুলে ধরে দলটিকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
মূলত সংবাদ দুইভাবে প্রচার করা যেতে পারে। একটি হচ্ছে ‘প্রতিবেদন’, অন্যটি ‘মতামত’। ভারতীয় গণমাধ্যম প্রতিবেদন না করে মতামত দেওয়াটাকেই দায়িত্ব হিসেবে বেছে নিয়েছে। নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা বা বক্তব্যকে তারা নিজেদের মনগড়া মতামত দিয়ে উপস্থাপন করে, সেক্ষেত্রে যে ধরনের ভাষা, শব্দ, ঘৃণা, অবজ্ঞা মিশিয়ে সংবাদ উপস্থাপন করে তাদের সংবাদমাধ্যমে, সেগুলো যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য অস্বস্তিকর এবং তা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব রেখে যাচ্ছে।
ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারের তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ আগস্ট থেকে ০৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের ৪৯টি গণমাধ্যমে অন্তত ১৩টি বিষয়ে বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবর প্রচার করা হয়েছে।
সিনিয়র সাংবাদিক ও দ্য হিন্দুর কূটনৈতিক সম্পাদক সুহাসিনী হায়দার বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারত কেবল একটি পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ রেখেছিল এবং সেদেশের বিরোধীদের উপেক্ষা করেছিল।’ দ্য হিন্দুর একটি আর্টিকেলে আবার তিনি লিখেছেন "India’s friendship is with a country and people not any one leader or party."
এক্ষেত্রে ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রথিতযশা সাংবাদিক মাহফুজ আনামের বক্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে, ‘ভারতের উচিত গণতন্ত্রের চশমায় বাংলাদেশকে দেখা, হাসিনা বা আওয়ামী লীগের চশমায় না।’
কূটনৈতিক জায়গায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের প্রথম ব্যর্থতা ছিল, নির্দিষ্ট একটি দলকে বেছে নেওয়া, দেশের সঙ্গে দেশের সম্পর্কের চেয়ে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দল; যা কূটনৈতিক সম্পর্কে কখনোই কাম্য নয়। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সফল কূটনৈতিক সম্পর্ক অর্থনীতি ও ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু প্রতিনিয়ত এমন মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য ও ভুল তথ্য উপস্থাপন করে ভারতীয় গণমাধ্যম নজিরবিহীন নেতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। ভারতীয় গণমাধ্যমের এই অপসংবাদিকতা বন্ধ করা এখন সময়ের প্রয়োজন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের সংবাদমাধ্যম পারিপার্শ্বিক রাজনীতি, ধর্ম ও সংস্কৃতি বিবেচনায় এনে আরও বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণ করবে—এমনটাই কাম্য।
ধরা যাক, পারস্য রাজা কলিঙ্গদেশ ভ্রমণে গেছেন পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বাণিজ্যের প্রসারের জন্য। কিন্তু কলিঙ্গের প্রতিবেশী রাষ্ট্র লঙ্কার রাজার এই ভ্রমণ পছন্দ হলো না। লঙ্কার রাজা মনে মনে ভেবে নিলেন, এটা নিশ্চয়ই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। লঙ্কায় সংবাদটি তখন দুইভাবে প্রচারিত হতে থাকল—এক. সম্পর্ক উন্নয়নে পারস্য রাজার কলিঙ্গদেশ ভ্রমণ, দুই. পারস্য ও কলিঙ্গদেশ মিলে লঙ্কায় হামলার পরিকল্পনা করছে।
এক্ষেত্রে প্রথমটি সংবাদ ও দ্বিতীয়টি মতামতের ভিত্তিতে অপতথ্য; নির্দিষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মনগড়া আখ্যা দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা। নিছক এই ছেলেমানুষি গল্পটি বলার নেপথ্যে রয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত গত ছয় মাসের সংবাদসমূহ।
প্রথমে আমাদের আলোকপাত করতে হবে গণমাধ্যমের কাজ কী সে বিষয়ে; কোনো ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর সেই ঘটনার ‘সত্যতা যাচাই’ করে, নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সংবাদ প্রকাশ করা। তা ছাড়া জনগণের মনস্তত্ত্ব, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে সংবাদ প্রচার এবং সংবাদমাধ্যমে মতামত প্রদান করাটাও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের অংশ। সংবাদমাধ্যমের মূলনীতির এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের সংবাদ প্রচারের সময় এই মূলনীতিগুলো অনুসরণ করতে অনেকাংশেই ব্যর্থ। সংবাদের ‘সত্যতা যাচাইয়ের’ স্তরই পার হতে পারবে না দেশটির গণমাধ্যম।
৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নিরলস অপপ্রচার তাদের সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রশ্ন তৈরি করে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব সংবাদ এমন ধারণার খোরাক জুগিয়েছে তার মধ্যে প্রথম হলো ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের ছাত্রদের ভূমিকাকে সঠিকভাবে উপস্থাপন না করা; ৭০০-এর ওপরে ছাত্রকে সরাসরি হত্যা করার নজির উপমহাদেশে নেই, এমন একটি বিশাল ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে শুধু আমেরিকা, চীন ও পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে ভারত। দেশটির গণমাধ্যমের মতে, এই আন্দোলন ছিল তৎকালীন ভারতের পরীক্ষিত বন্ধু আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করে ভারতবিদ্বেষী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চাল মাত্র। আক্ষেপের বিষয় হলো, জুলাই আন্দোলনের এত দিন পরেও ছাত্রদের প্রতি হাসিনা সরকারের অমানুষিক নির্যাতন নিয়ে কোনো সমবেদনামূলক প্রতিবেদন আসেনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। এই পুরো দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে, বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা ও প্রজ্ঞাকে হেয় করা হয়েছে। বিশাল এই ঐতিহাসিক আন্দোলনকে আমেরিকা, চীন ও পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের ফসল—এই আখ্যা অপমানসূচক।
দ্বিতীয়ত, ৪ আগস্ট পর্যন্ত ভারতীয় নেতৃবৃন্দ ও সংবাদমাধ্যমের চোখে বাংলাদেশ ছিল ভারতের বন্ধু ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীল রাষ্ট্র। কিন্তু শেখ হাসিনা পতনের পর এবং প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণের মধ্যবর্তী তিন দিন যখন দেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না তৎকালীন সংঘটিত রাজনৈতিক বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও হামলাগুলোকে ভারত সরকার ও তার গণমাধ্যম হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হিসেবে দেখিয়েছে। অথচ এই হামলাগুলো অনেকাংশেই ছিল রাজনৈতিক, পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে। তবু ভারতের গণমাধ্যম সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হিসেবে তুলে ধরেছে প্রতিনিয়ত।
প্রশ্ন থাকে, ২০০২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৩১টি দাঙ্গা সংঘটিত হয় ভারতে, যার মধ্যে ২০টি ছিল হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, তখন কি বাংলাদেশের গণমাধ্যমও এমন কোনো ভূমিকা রেখেছে, যা ভারতের গণমাধ্যম এখন রাখছে?
তৃতীয়ত, সাম্প্রতিক ২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে প্রথমবার পালিত হয় শহীদ সেনা দিবস, সে উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তাঁর বক্তব্য ছিল সময়োপযোগী ও দিকনির্দেশনামূলক, যেখানে তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন, জাতীয় ঐক্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহের বিচার ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেন।
অথচ ভারতীয় গণমাধ্যমে এর প্রচার ছিল জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সতর্কবার্তা, ক্ষমতা গ্রহণের ইঙ্গিত। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার শিরোনাম ছিল ‘ইউনূসের ব্যর্থতা উসকে বিতর্কের আগুন জ্বাললেন সেনাপ্রধান, তাতে ঘি ঢাললেন সাখাওয়াত’।
একজন সেনাপ্রধান একটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ ব্যক্তির একজন। একটি সুশৃঙ্খলিত বাহিনীপ্রধানের বক্তব্য এমন ভুলভাবে উপস্থাপনের দায় ভারতীয় গণমাধ্যম এড়াতে পারে না।
এর আগেও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের অনেক বক্তব্য ও সাক্ষাৎকারকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। বাংলাদেশের সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সত্যতা যাচাই করে সংবাদ প্রকাশের দায়বদ্ধতার ব্যাপার দেশটি বেমালম ভুলে যায়।
২ মার্চ ইন্ডিয়া টুডে নবগঠিত রাজনৈতিক দল National Ctitizen Party কে Nationalist Conservative Party হিসেবে প্রতিবেদন করেছে। এটাকে ভুল না বলে অপতথ্য বলাই শ্রেয়। সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য তুলে ধরে দলটিকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
মূলত সংবাদ দুইভাবে প্রচার করা যেতে পারে। একটি হচ্ছে ‘প্রতিবেদন’, অন্যটি ‘মতামত’। ভারতীয় গণমাধ্যম প্রতিবেদন না করে মতামত দেওয়াটাকেই দায়িত্ব হিসেবে বেছে নিয়েছে। নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা বা বক্তব্যকে তারা নিজেদের মনগড়া মতামত দিয়ে উপস্থাপন করে, সেক্ষেত্রে যে ধরনের ভাষা, শব্দ, ঘৃণা, অবজ্ঞা মিশিয়ে সংবাদ উপস্থাপন করে তাদের সংবাদমাধ্যমে, সেগুলো যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য অস্বস্তিকর এবং তা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব রেখে যাচ্ছে।
ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারের তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ আগস্ট থেকে ০৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের ৪৯টি গণমাধ্যমে অন্তত ১৩টি বিষয়ে বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবর প্রচার করা হয়েছে।
সিনিয়র সাংবাদিক ও দ্য হিন্দুর কূটনৈতিক সম্পাদক সুহাসিনী হায়দার বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারত কেবল একটি পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ রেখেছিল এবং সেদেশের বিরোধীদের উপেক্ষা করেছিল।’ দ্য হিন্দুর একটি আর্টিকেলে আবার তিনি লিখেছেন "India’s friendship is with a country and people not any one leader or party."
এক্ষেত্রে ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রথিতযশা সাংবাদিক মাহফুজ আনামের বক্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে, ‘ভারতের উচিত গণতন্ত্রের চশমায় বাংলাদেশকে দেখা, হাসিনা বা আওয়ামী লীগের চশমায় না।’
কূটনৈতিক জায়গায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের প্রথম ব্যর্থতা ছিল, নির্দিষ্ট একটি দলকে বেছে নেওয়া, দেশের সঙ্গে দেশের সম্পর্কের চেয়ে তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দল; যা কূটনৈতিক সম্পর্কে কখনোই কাম্য নয়। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সফল কূটনৈতিক সম্পর্ক অর্থনীতি ও ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু প্রতিনিয়ত এমন মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য ও ভুল তথ্য উপস্থাপন করে ভারতীয় গণমাধ্যম নজিরবিহীন নেতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। ভারতীয় গণমাধ্যমের এই অপসংবাদিকতা বন্ধ করা এখন সময়ের প্রয়োজন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের সংবাদমাধ্যম পারিপার্শ্বিক রাজনীতি, ধর্ম ও সংস্কৃতি বিবেচনায় এনে আরও বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণ করবে—এমনটাই কাম্য।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের বাইরে খুব কাছের একটা দেশে এসেছি। পৃথিবীর কত দূরদূরান্তের দেশে গিয়েছি, কিন্তু কখনো নেপালে আসিনি। যদিও অনেকবার সুযোগ হয়েছে, তবু আসা হয়নি। যেখানেই গিয়েছি, শুধু বেড়াবার জন্য যাইনি। গিয়েছি কাজে এবং নাটকের কাজে। হয় কোথাও অভিনয় করতে গিয়েছি, আবার কোথাও নাটকের কর্মশালার কাজে অথবা সেমিন
১ দিন আগেমস্তিষ্ক বিকাশের কারণে আমরা অনুধাবন করতে পারি যে বুদ্ধিমত্তা মানে চারপাশ থেকে সরাসরি শুধু তথ্য ধারণ করা নয়, সেই সঙ্গে বিচারবুদ্ধিও। যার মাধ্যমে তথ্যগুলোকে সমন্বয় সাধন ও ব্যবহার করা যায়, ভবিষ্যতের কোনো বিপদ সম্পর্কে আগে আভাস পাওয়া সম্ভব হয়, যা জিনের পক্ষে সম্ভব নয়। অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো প্রয়ো
১ দিন আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দ হলো জটিল। আমাদের যাপিত জীবনের অনেক কিছুতেই আমরা জটিলতার তারতম্য অনুভব করি। অঙ্ক জটিল, সমস্যা জটিল, সমাধান জটিল, মানবজীবন জটিল, জগৎসংসার জটিল—এমন বহুসংখ্যক জটিলতার মধ্যে আমাদের নিত্যবসবাস। এতসব জটিলতার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষায় কীভাবে এল জটিল শব্দটি আমরা কি তা জানি? আবার স
১ দিন আগেরাজধানীর গুলশানে মঙ্গলবার মধ্যরাতে আবার মব ভায়োলেন্স ঘটতে দেখা গেল। কোত্থেকে অভিযোগ এসেছে সেটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা না ভেবেই একদল মানুষ আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে সাবেক এমপি তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে একটি বাড়িতে ভাঙচুর
১ দিন আগে