অবরুদ্ধ দেশের সাংবাদিকতা
জাহীদ রেজা নূর
সামরিক সরকার বোঝেওনি, তাদের পরামর্শগুলো হাস্যকর। জুলাই থেকেই ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় চলছিল বোমা হামলা। ভীত পাকিস্তানি বাহিনীকে নৈতিক সাহায্য দেওয়ার জন্য রাজাকার কিংবা শান্তি কমিটির লোকেরা থাকত বটে, কিন্তু তাদের অবস্থাও পাকিস্তানি হানাদারদের চেয়ে কোনো অংশে ভালো ছিল না।
ডিসেম্বরে এক আজব নির্দেশ পেয়েছিলেন থানার অফিস ইনচার্জরা। পিটুনিকর নামের সেই কর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে হবে। তার আগে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হেনস্তা হওয়া সামরিক কর্তৃপক্ষ কী নির্দেশ দিয়েছিল, সেটাও দেখে নেওয়া দরকার।
সরকারের সিদ্ধান্ত
দুষ্কৃতিকারী গ্রেফতার বা খবরের জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে
যে সব অনুগত ব্যক্তি দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতারের মতো নির্ভরযোগ্য খবর দেবে বা নিজেরা দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের কাছে পেশ করবে সরকার তাদের যথোপযুক্ত পুরস্কার দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে গতকাল বুধবার এক প্রেসনোটে জানানো হয়েছে।
এপিপির খবরে প্রকাশ, পুরস্কারের হার নিম্নরূপ:-
■ দুষ্কৃতিকারী গ্রেফতার অথবা দুষ্কৃতিকারীদের সাথে সফল মোকাবিলার জন্য খবর দেওয়ার জন্যে ৫০০.০০ টাকা।
■ ভারতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত দুষ্কৃতিকারী গ্রেফতারের জন্য ৭৫০.০০ টাকা।
■ রাইফেল, বোমা বা ডুপ্লিকেটিং মেশিন বা অপরাধ করা যায় এমন অন্য কোন আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতারের জন্য ১০০০.০০ টাকা।
■ দুষ্কৃতিকারী দলের নেতা গ্রেফতারের জন্য ২০০০.০০ টাকা।
■ বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার অথবা দুষ্কৃতিকারী দলের নেতা গ্রেফতারের জন্য দশ হাজার টাকা পর্যন্ত বড় অঙ্কের পুরস্কার দেবার বিষয় বিবেচিত হতে পারে।
■ জেলা পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট এক হাজার টাকা পর্যন্ত পুরস্কার মঞ্জুর করতে পারবেন।
দুষ্কৃতিকারীদের শ্রেণী বিভাগ নিম্নরূপ হবে:
■ তথাকথিত মুক্তি বাহিনীর নিয়মিত সদস্য, তথাকথিত মুক্তি বাহিনী ভর্তিতে সাহায্যকারীরা।
■ স্বেচ্ছায় বিদ্রোহীদের খাদ্য, যানবাহন ও অন্যান্য দ্রব্য সরবরাহকারী।
■ স্বেচ্ছায় বিদ্রোহীদের আশ্রয়দানকারী।
■ বিদ্রোহীদের ‘ইনফরমার’ বা বার্তাবাহক রূপে যারা কাজ করে এবং তথাকথিত মুক্তিবাহিনী সম্পর্কিত নাশকতামূলক লিফলেট, প্যাম্ফলেট প্রভৃতির লেখক বা প্রকাশক।
(দৈনিক পাকিস্তান, ২৫ নভেম্বর ১৯৭১)
এরপরও তো ধ্বংসাত্মক ঘটনা কমছিল না। তখন দেখা গেল নতুন নির্দেশ:
দুষ্কৃতিকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে না ধরিয়ে দিলে ঘটনার জন্য পিটুনীকর দিতে হবে
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় পিপিআই এর খবরে বলা হয় যে ৬ নম্বর সেক্টরের এসএমএলএ শহরের সবকটি থানার অফিসার ইন চার্জকে নির্দেশ দিয়েছেন যে তারা যেন জনসাধারণকে নির্দেশ দেন যে যখন যেখানে বোমা বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ প্রভৃতি ঘটাবে, ঘটনাস্থল থেকে ৫ শত গজের মধ্যে বসবাসকারী জনগণ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হলে তাদেরকে ঘটনার জন্য পিটুনীকর দিতে হবে।
(দৈনিক পাকিস্তান, ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১)
অর্থাৎ সাধারণ মানুষের জীবনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা হলো এই আদেশের মাধ্যমে। অবশ্য তত দিনে পুব আকাশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানি বাহিনী বুঝতে পারছিল, এখন তারা যা করছে, তা বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো। এখন যে আদেশই দেওয়া হোক না কেন, তাতে আর কাজ হবে না।
৩ ডিসেম্বরের ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় পিটুনীকরের রিপোর্টটি ছাড়াও আরও তিনটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল, যা তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রকাশ করা ছিল কঠিন। একটি হলো নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দুইজন পরিষদ সদস্যের বিবৃতি। ইত্তেফাকে ছাপা হওয়া বিবৃতিটি ছিল এ রকম:
জনগণ পরাজিত ও প্রত্যাখ্যাতদের নেতৃত্ব মানিয়া লইবে না
করাচী, ২ ডিসেম্বর (পিপিআই)—বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে বহাল সদস্য যথাক্রমে এ বি এম নূরুল ইসলাম ও জনাব এস বি জামান এই মর্মে মত প্রকাশ করেন যে, পাকিস্তানের জনগণ কখনও পরাজিত এবং প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তিদের নেতৃত্ব মানিয়া লইবে না।
গতকল্য এখানকার সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্যরা বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস করার কারণ রহিয়াছে যে তথাকথিত রাজনীতিকরা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিতেছে এবং তাহারা পশ্চাৎদ্বার দিয়া ক্ষমতা লাভের চেষ্টা করিতেছে।
...তাহারা বলেন, ‘আমরা গভীর বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করিতেছি যে, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা—যাহারা পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক প্রহরা ছাড়া চলাফিরা করিতে পারেন না এবং যাহাদের পিছনে জনসমর্থন নাই—তাহারা এক্ষণে যুদ্ধের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলিতেছেন। কিন্তু পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সহিত একমত হইয়া আমরা বলিতে চাই যে, যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান করে না বরং সমস্যা বৃদ্ধি করে।
...তাহারা আরও বলেন, ‘আমাদের পশ্চিম পাকিস্তান থাকাকালে পূর্ব পাকিস্তানের জনৈক দক্ষিণপন্থী প্রবীণ রাজনীতিবিদ এখানে দাবি করিতেছেন যে, বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের কতিপয় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যের সমর্থন তাহার পক্ষে রহিয়াছে। আমরা ওই ব্যাপারে উক্ত নেতাকে চ্যালেঞ্জ প্রদান করি এবং কথিত সমর্থকদের নাম ঘোষণার দাবি জানাই।
তাঁহারা বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের বহাল সদস্যরা পাকিস্তানের অপর কোনো দলে যোগদান করিবেন না। তাহারা বলেন, সরকার আমাদের জানাইয়াছে যে, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপারে আমরা কোনো মন্তব্য করিতে পারিব না। কেননা তিনি বিচারাধীন রহিয়াছেন। অথচ, বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে খান আবদুল কাইয়ুম খান, অধ্যাপক গোলাম আজম, মওলানা আবদুল খালেক এবং অন্য ব্যক্তিরা মধ্যে মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপারে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়া চলিয়াছেন।
(দৈনিক ইত্তেফাক, ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১)
অন্য সংবাদটি ইন্দিরা গান্ধীর। কংগ্রেস কর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তিনি। সে বক্তৃতায় তিনি যা বলেছিলেন, তা ইত্তেফাকে এভাবে ছাপা হয়েছিল—‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাংলা দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমেই শুধু ‘বাংলা দেশ’ সমস্যার সমাধান হইতে পারে। এইরূপ ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ বাস্তুত্যাগী গৃহে ফিরিয়া শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করিতে সক্ষম হইবে বলিয়া তিনি মন্তব্য করেন।’
তৃতীয় সংবাদটি মার্কিন সিনেটর উইলিয়াম সাক্সবির। তিনি এসেছিলেন শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু দেখা করতে পারেননি। সেই রিপোর্টটি নিয়েই কথা শুরু হবে কাল।
(চলবে)
লেখক: জাহীদ রেজা নূর
উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
সামরিক সরকার বোঝেওনি, তাদের পরামর্শগুলো হাস্যকর। জুলাই থেকেই ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় চলছিল বোমা হামলা। ভীত পাকিস্তানি বাহিনীকে নৈতিক সাহায্য দেওয়ার জন্য রাজাকার কিংবা শান্তি কমিটির লোকেরা থাকত বটে, কিন্তু তাদের অবস্থাও পাকিস্তানি হানাদারদের চেয়ে কোনো অংশে ভালো ছিল না।
ডিসেম্বরে এক আজব নির্দেশ পেয়েছিলেন থানার অফিস ইনচার্জরা। পিটুনিকর নামের সেই কর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে হবে। তার আগে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হেনস্তা হওয়া সামরিক কর্তৃপক্ষ কী নির্দেশ দিয়েছিল, সেটাও দেখে নেওয়া দরকার।
সরকারের সিদ্ধান্ত
দুষ্কৃতিকারী গ্রেফতার বা খবরের জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে
যে সব অনুগত ব্যক্তি দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতারের মতো নির্ভরযোগ্য খবর দেবে বা নিজেরা দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের কাছে পেশ করবে সরকার তাদের যথোপযুক্ত পুরস্কার দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে গতকাল বুধবার এক প্রেসনোটে জানানো হয়েছে।
এপিপির খবরে প্রকাশ, পুরস্কারের হার নিম্নরূপ:-
■ দুষ্কৃতিকারী গ্রেফতার অথবা দুষ্কৃতিকারীদের সাথে সফল মোকাবিলার জন্য খবর দেওয়ার জন্যে ৫০০.০০ টাকা।
■ ভারতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত দুষ্কৃতিকারী গ্রেফতারের জন্য ৭৫০.০০ টাকা।
■ রাইফেল, বোমা বা ডুপ্লিকেটিং মেশিন বা অপরাধ করা যায় এমন অন্য কোন আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতারের জন্য ১০০০.০০ টাকা।
■ দুষ্কৃতিকারী দলের নেতা গ্রেফতারের জন্য ২০০০.০০ টাকা।
■ বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার অথবা দুষ্কৃতিকারী দলের নেতা গ্রেফতারের জন্য দশ হাজার টাকা পর্যন্ত বড় অঙ্কের পুরস্কার দেবার বিষয় বিবেচিত হতে পারে।
■ জেলা পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট এক হাজার টাকা পর্যন্ত পুরস্কার মঞ্জুর করতে পারবেন।
দুষ্কৃতিকারীদের শ্রেণী বিভাগ নিম্নরূপ হবে:
■ তথাকথিত মুক্তি বাহিনীর নিয়মিত সদস্য, তথাকথিত মুক্তি বাহিনী ভর্তিতে সাহায্যকারীরা।
■ স্বেচ্ছায় বিদ্রোহীদের খাদ্য, যানবাহন ও অন্যান্য দ্রব্য সরবরাহকারী।
■ স্বেচ্ছায় বিদ্রোহীদের আশ্রয়দানকারী।
■ বিদ্রোহীদের ‘ইনফরমার’ বা বার্তাবাহক রূপে যারা কাজ করে এবং তথাকথিত মুক্তিবাহিনী সম্পর্কিত নাশকতামূলক লিফলেট, প্যাম্ফলেট প্রভৃতির লেখক বা প্রকাশক।
(দৈনিক পাকিস্তান, ২৫ নভেম্বর ১৯৭১)
এরপরও তো ধ্বংসাত্মক ঘটনা কমছিল না। তখন দেখা গেল নতুন নির্দেশ:
দুষ্কৃতিকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে না ধরিয়ে দিলে ঘটনার জন্য পিটুনীকর দিতে হবে
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় পিপিআই এর খবরে বলা হয় যে ৬ নম্বর সেক্টরের এসএমএলএ শহরের সবকটি থানার অফিসার ইন চার্জকে নির্দেশ দিয়েছেন যে তারা যেন জনসাধারণকে নির্দেশ দেন যে যখন যেখানে বোমা বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ প্রভৃতি ঘটাবে, ঘটনাস্থল থেকে ৫ শত গজের মধ্যে বসবাসকারী জনগণ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হলে তাদেরকে ঘটনার জন্য পিটুনীকর দিতে হবে।
(দৈনিক পাকিস্তান, ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১)
অর্থাৎ সাধারণ মানুষের জীবনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা হলো এই আদেশের মাধ্যমে। অবশ্য তত দিনে পুব আকাশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানি বাহিনী বুঝতে পারছিল, এখন তারা যা করছে, তা বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো। এখন যে আদেশই দেওয়া হোক না কেন, তাতে আর কাজ হবে না।
৩ ডিসেম্বরের ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় পিটুনীকরের রিপোর্টটি ছাড়াও আরও তিনটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল, যা তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রকাশ করা ছিল কঠিন। একটি হলো নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দুইজন পরিষদ সদস্যের বিবৃতি। ইত্তেফাকে ছাপা হওয়া বিবৃতিটি ছিল এ রকম:
জনগণ পরাজিত ও প্রত্যাখ্যাতদের নেতৃত্ব মানিয়া লইবে না
করাচী, ২ ডিসেম্বর (পিপিআই)—বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে বহাল সদস্য যথাক্রমে এ বি এম নূরুল ইসলাম ও জনাব এস বি জামান এই মর্মে মত প্রকাশ করেন যে, পাকিস্তানের জনগণ কখনও পরাজিত এবং প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তিদের নেতৃত্ব মানিয়া লইবে না।
গতকল্য এখানকার সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্যরা বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস করার কারণ রহিয়াছে যে তথাকথিত রাজনীতিকরা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিতেছে এবং তাহারা পশ্চাৎদ্বার দিয়া ক্ষমতা লাভের চেষ্টা করিতেছে।
...তাহারা বলেন, ‘আমরা গভীর বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করিতেছি যে, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা—যাহারা পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক প্রহরা ছাড়া চলাফিরা করিতে পারেন না এবং যাহাদের পিছনে জনসমর্থন নাই—তাহারা এক্ষণে যুদ্ধের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলিতেছেন। কিন্তু পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সহিত একমত হইয়া আমরা বলিতে চাই যে, যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান করে না বরং সমস্যা বৃদ্ধি করে।
...তাহারা আরও বলেন, ‘আমাদের পশ্চিম পাকিস্তান থাকাকালে পূর্ব পাকিস্তানের জনৈক দক্ষিণপন্থী প্রবীণ রাজনীতিবিদ এখানে দাবি করিতেছেন যে, বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের কতিপয় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যের সমর্থন তাহার পক্ষে রহিয়াছে। আমরা ওই ব্যাপারে উক্ত নেতাকে চ্যালেঞ্জ প্রদান করি এবং কথিত সমর্থকদের নাম ঘোষণার দাবি জানাই।
তাঁহারা বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের বহাল সদস্যরা পাকিস্তানের অপর কোনো দলে যোগদান করিবেন না। তাহারা বলেন, সরকার আমাদের জানাইয়াছে যে, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপারে আমরা কোনো মন্তব্য করিতে পারিব না। কেননা তিনি বিচারাধীন রহিয়াছেন। অথচ, বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে খান আবদুল কাইয়ুম খান, অধ্যাপক গোলাম আজম, মওলানা আবদুল খালেক এবং অন্য ব্যক্তিরা মধ্যে মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপারে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়া চলিয়াছেন।
(দৈনিক ইত্তেফাক, ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১)
অন্য সংবাদটি ইন্দিরা গান্ধীর। কংগ্রেস কর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তিনি। সে বক্তৃতায় তিনি যা বলেছিলেন, তা ইত্তেফাকে এভাবে ছাপা হয়েছিল—‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাংলা দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমেই শুধু ‘বাংলা দেশ’ সমস্যার সমাধান হইতে পারে। এইরূপ ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ বাস্তুত্যাগী গৃহে ফিরিয়া শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করিতে সক্ষম হইবে বলিয়া তিনি মন্তব্য করেন।’
তৃতীয় সংবাদটি মার্কিন সিনেটর উইলিয়াম সাক্সবির। তিনি এসেছিলেন শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু দেখা করতে পারেননি। সেই রিপোর্টটি নিয়েই কথা শুরু হবে কাল।
(চলবে)
লেখক: জাহীদ রেজা নূর
উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
২০ বছর আগে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অটিজম শব্দটির অস্তিত্ব প্রায় খুঁজে পাওয়া যেত না। অটিজম বিষয়ে মানুষের ধারণা সীমিত ছিল। ঠিক সেই সময়ে অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন পরিচালিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ‘কানন’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালের ৪ এপ্রিল, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির একটি চারতলা ভাড়া বাড়িতে...
১৫ ঘণ্টা আগেমাঝে মাঝে মনে হয় দেশটা বুঝি ট্রায়াল অ্যান্ড এররের ভিত্তিতে চলছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, এমনকি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়েও নানা ধরনের পরীক্ষামূলক তত্ত্ব দেখতে পাচ্ছি। প্রথমে নতুন কিছু একটা বলা হয় বা চালু করা হয়। তারপর দেখা হয়—কতটা বিতর্ক হয় সেটা নিয়ে।
২০ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে দেওয়া ও অস্থায়ী আবাসনসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের ফলে কর্তৃপক্ষ আন্দোলনের দাবি মেনে নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ার পরও প্রত্যাশিত দাবির বাস্তবায়ন না দেখে আবারও...
২১ ঘণ্টা আগেআকৃষ্ট করেছিল, সে বাণী যেন কথার কথায় পরিণত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ভালো একটি ভবিষ্যতের আশা ক্রমেই ধূসরতার দিকে যাচ্ছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোড ও নিউমার্কেট এলাকার মধ্যে থাকা ৫৭টি মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এই মার্কেটগুলো থেকে প্রতি মাসে সেবা খাত...
২১ ঘণ্টা আগে