Ajker Patrika

সরকারি স্থাপনায় হামলা চলছেই, নিহত আরও ১৮

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ১১: ০০
Thumbnail image

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই দিন পরও সরকারি স্থাপনায়, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর অব্যাহত রয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ও গতকাল বুধবার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ফেনীর সোনাগাজীতে ৭৫ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট ও হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে আদালতে আগুন দিয়ে নথি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে আহত চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে আরও ১৪ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া খাল থেকে এক যুবলীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সরকার পতনের পর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও যুবদলের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষেও তিনজন মারা গেছেন।

এলাকাবাসী, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে আজকের পত্রিকার সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের মদিনা বাজার এলাকায় মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে ৭৫ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় ১০ নম্বর সিকিউরিটি পোস্টে ডিউটিরত সিকিউরিটি গার্ড রবিউল ইসলাম ও আনসার সদস্য সাজিদকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। পরবর্তী সময়ে অ্যাডমিন ভবনের জানালা, সরকারি মোটরসাইকেল, ইপিসির এক্সকাভেটর, জেসিবির গ্লাস ভেঙে ফেলে। এরপর অন্যান্য আনসার সদস্য, সিকিউরিটি সুপারভাইজার, পিসি, এপিসি, সিকিউরিটি অফিসার, সাব-স্টেশন ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান, টিএসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী ধাওয়া দিলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফেন্সিংয়ের বাইরে খালে জেলেদের রক্ষিত একটি প্লাস্টিকের নৌকায় আগুন লাগিয়ে দেয়।

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে গত মঙ্গলবার সকালে আদালতের বেশ কয়েকটি কক্ষে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে আদালতের নথিপত্র রক্ষিত কক্ষ এবং জিআরও অফিসের কক্ষের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি ও দুটি কম্পিউটার পুড়ে গেছে। আদালতের পেশকার ঝলক দাস বলেন, ‘আমরা এখন নথিপত্র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছি। কী পরিমাণ নথিপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটা এখনো সঠিক বলতে পারছি না।’

এদিকে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের দত্তের বাগ গ্রামে সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিমের বাড়িতে গতকাল বিকেলে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় ওই বাড়িতে যারা ছিল, তাদের ভয় দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয়। এরপর সেখানে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে সেনাবাহিনী খবর পেয়ে সেখানে যায় এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

আরও ১৮ জনের মৃত্যু এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে আহত আরও ১৩ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই হিসাব পাওয়া গেছে। তাঁদের সবাই পুলিশ ও আনসার সদস্য।

৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘর্ষের সময় আহত হয়েছিলেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন চন্দ্র দে (৪১)। সেখানেই তিনি মারা গিয়েছিলেন। গতকাল সকালে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর ছোট ভাই সুমন চন্দ্র দে। চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি যাত্রাবাড়ী থানায় কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন এলাকায়। একই ঘটনা ঘটেছে উত্তরা পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খগেন্দ্র চন্দ্র সরকারের ক্ষেত্রেও। গতকাল তাঁকে উদ্ধার করে তাঁর স্ত্রী দ্বীপা রায় হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদরের বিন্নাটি এলাকায়।

এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে রয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সঞ্জয় কুমার দাস, কনস্টেবল রেজাউল করিম (৪৮), যাত্রাবাড়ী থানায় কর্মরত আনসার সদস্য আবু জাফর (৪৬), ঢাকা জেলার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাজু আহম্মেদ (৩৫), কদমতলী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফিরোজ হোসেন (৪৮), ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের কনস্টেবল শহিদুল আলম, কল্যাণ ও ফোর্সে কর্মরত কনস্টেবল আবু হাসনাত রনি। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা রয়েছেন আরও ৪ জন। এই ব্যক্তিরা রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, আশুলিয়া এলাকায় আহত হয়েছিলেন।

এদিকে ফেনীর সোনাগাজীতে খাল থেকে মঙ্গলবার মুশফিকুর রহমান নামের এক যুবলীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। সকালে সোনাগাজী উপজেলার সাহেবেরহাট এলাকায় খালের পানিতে একটি মরদেহ ভেসে আসে। খবর পেয়ে দুপুরে স্বজনেরা মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যান।

মুশফিকুর সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক পদে ছিলেন। তিনি সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মুন্সির ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ আরেকজন মারা গেছেন। তাঁর নাম মো. সাদেক (২৭)। তিনি সাভার পৌর এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে।

এ ছাড়া ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলা যুবদলের দুই কর্মী নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে সচীন বিশ্বাস সাজু (২২) নামের এক ছাত্রদলের কর্মী নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত