Ajker Patrika

পরিবেশ ছাড়পত্রের শর্ত

চলনবিলেই হচ্ছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

  • স্থানান্তর হলে আবার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
  • বিলের পানিপ্রবাহের ক্ষতির আশঙ্কা পরিবেশকর্মীদের।
  • জায়গা চলনবিলের অনেক দূরে বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তার।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০০: ৪৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আপাতত পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র ছাড়াই ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ স্থাপন’ প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। আজ রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার শর্তে সিরাজগঞ্জের ৫১৯ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। একনেক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এটিসহ অনুমোদিত প্রকল্পের তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেকের চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পাঁচটি নতুন প্রকল্প, দুটি সংশোধিত প্রকল্প এবং মেয়াদ বৃদ্ধির তিনটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এ ছাড়া পরিকল্পনা উপদেষ্টা নয়টি প্রকল্পের বিষয়ে একনেক সদস্যদের অবহিত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, একনেক সভায় পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার শর্তে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ স্থাপন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একনেকে অনুমোদন হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করতে হবে। মূলত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে এই শর্ত দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কিছুদিন আগে প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসের স্থান সফর করেছেন।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বুড়ি পোতাজিয়ায় ১০০ একর জমিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পরিবেশবাদীরা এতে গুরুত্বপূর্ণ বিস্তীর্ণ জলাভূমি চলনবিলের পানিপ্রবাহের ক্ষতি হবে দাবি করে এর বিরোধিতা করে আসছেন। তাঁরা এ জন্য কমিটি গঠন করে আন্দোলনও করে আসছেন।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রকল্প এলাকাটি চারণভূমি ছিল। ২০১৮ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় অকৃষি জমি হিসেবে ছাড়পত্র দিয়ে ভূমি অধিগ্রহণে অনাপত্তি সনদ দেয়। তখন বলা হয়েছিল, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিতে হবে। এখন সেই শর্ত পূরণের শর্ত দিয়ে প্রকল্পটি পাস করা হয়েছে। ...এ নিয়ে পরিবেশবাদীদের অনেক কথা আছে। এখন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। তারা পুরো বিষয়টি মূল্যায়ন করবে।’

চলনবিলের অংশে মাটি ভরাট করে এত বড় স্থায়ী কাঠামোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একটি শীর্ষ জাতীয় দৈনিকে শনিবার বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) শিবলী মাহবুব গতকাল দাবি করেন, চলনবিলের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত স্থান থেকে অনেক দূরে। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থানান্তরের কোনো সম্ভাবনা নেই। পূর্বনির্ধারিত স্থানেই এটি নির্মিত হবে।’

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু অবকাঠামো নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ৫১৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের মে মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৯ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত। এর আগে গত মে মাসে প্রকল্পটি পাসের জন্য একনেকে উঠেছিল, তখন তা আবার পর্যালোচনার জন্য ফেরত পাঠানো হয়।

শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শাহজাদপুর শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য এই জমি নির্ধারণ করা হয়। স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে শিক্ষার্থীরা একাধিকবার সড়ক অবরোধ করেছেন।

আজকের পত্রিকার কামারখন্দ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) শিবলী মাহবুব গতকাল মুঠোফোনে বলেন, ‘গতকাল একটি জাতীয় পত্রিকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল, যা সম্পূর্ণ মনগড়া। চলনবিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত স্থান থেকে অনেক দূরে। সুতরাং কোনো সমস্যা নেই। তবে অনুমোদনের চিঠি হাতে এলে বিস্তারিত জানতে পারব।’

এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘একনেকের প্রস্তাব এখনো হাতে পাইনি। ফলে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত কী হয়েছে বা কীভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে আমাদের প্রত্যাশা, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস পূর্বের জায়গাতেই হবে। আবার যদি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে কী কী শর্ত মানতে হবে সেটিও অনুমোদনের কপি না দেখে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।’

একই সঙ্গে প্রক্টর বলেন, ‘ক্যাম্পাস স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হলে আমরা তা মেনে নেব না। কারণ স্থানান্তর করতে গেলে পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হবে, যা অযথা সময়ক্ষেপণ ঘটাবে।’

প্রক্টর নজরুল ইসলাম বলেন, ১০০ একর জমির মধ্যে ৬০ একর বনায়ন, পুকুর বা লেকের জন্য বরাদ্দ থাকবে। অবশিষ্ট ৪০ একরে হবে অবকাঠামো, সড়ক ইত্যাদি। অবশ্যই পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করা হবে। তবে যদি এমন কোনো শর্ত দেওয়া হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বা দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি করে, তাহলে আমরা আবারও আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, সংগীত ও ব্যবস্থাপনা—এই পাঁচটি বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০ জন। পাশাপাশি ৩৪ জন শিক্ষক, ৫৪ জন কর্মকর্তা ও ১০৭ জন কর্মচারী আছেন। পৌর শহরের শাহজাদপুর মহিলা কলেজ, সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া ডিগ্রি কলেজসহ ভাড়া করা দুটি বাড়িতে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডেলটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকসহ ১৫ জনের নামে মামলা

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

‘বউ আমাকে মিথ্যা ভালোবাসত, টাকা না থাকলে ছেড়ে যাবে, তাই মরে গেলাম’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত