Ajker Patrika

পুলিশ ও আদালত ঠিকভাবে কাজ করলে মবের তাণ্ডব কমবে: আসিফ নজরুল

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮: ২৬
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ছবি: পিআইডি
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ছবি: পিআইডি

পুলিশ ও বিচার বিভাগ যদি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে দেশে মবের (জনতার সহিংসতা) তাণ্ডব কমবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে বিচার বিভাগ, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।

কর্মশালায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘পুলিশ ও আদালত যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং মবের তাণ্ডবও কমে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্যে রয়েছি। জুলাই-আগস্টে সহস্র হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। হাজার হাজার তরুণের অঙ্গহানির ঘটনা ঘটেছে। অনেকেই এসব ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন। মনে হতে পারে, যেন গাজা স্ট্রিপের মতো পরিস্থিতি চলছে। যেন একধরনের ভিডিও গেম চলছে।’

বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা হুটহাট করে জামিন দেবেন না। জামিন পাওয়ার পর কেউ যদি দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হয়ে ওঠে, পালিয়ে যায় বা একই অপরাধ পুনরায় করে, তাহলে সে বিষয়ে বিচারকের বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা উচিত। তবে যাঁরা সত্যিকার অর্থে জামিনের উপযুক্ত, তাঁদেরও যাতে বঞ্চিত হতে না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।’

এই কর্মশালার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে কোনো শয়তান যেন পালাতে না পারে। বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সরকার গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করেছে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে দমন করেছে, প্রশাসনের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে এবং আদালতের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এককথায়, তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্যবহার করেছে।’

তিনি জানান, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। সারা দেশে অপতৎপরতায় লিপ্তদের দমনে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’’ চালু করা হয়েছে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সার্বিক অভিযানের তদারকি করা হবে এবং পুলিশ সদর দপ্তরে স্থাপিত ‘জয়েন্ট অপারেশন সেন্টার’-এর মাধ্যমে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আইনজীবীদের বলছি, আপনারা আদালতে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর তারিখ ও সময় সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং প্রসিকিউটিং এজেন্সির সঙ্গে সমন্বয় করে প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করুন। যাতে কোনো অপরাধী যেন সহজে জামিন না পায়।’

তিনি আরও জানান, ‘মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনায় সমন্বয় করবেন। একই সঙ্গে সিএমএম, সিজেএম, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে কাজ করবেন।’

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশ জনগণের বন্ধু হওয়া উচিত। অতীতে তা হয়নি, তবে এখন আমরা সে চেষ্টাই করছি। মানবাধিকার রক্ষা করেও পুলিশিং করা সম্ভব, সেটির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।’

তিনি বিচার বিভাগের উদ্দেশে বলেন, ‘বারবার আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া, নির্যাতন করা এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে বিচারব্যবস্থার অপব্যবহার যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সরকারের শাসনামলে শত শত গুম ও হাজার হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থাকে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।’

কর্মশালায় স্বরাষ্ট্রসচিব, আইজিপি, অ্যাটর্নি জেনারেল, আইসিটির প্রধান প্রসিকিউটর, ঢাকা ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত