Ajker Patrika

ইশরাকের শপথ ও স্থানীয় নির্বাচন

দুই ইস্যুতে মাঠ গরম

  • ইশরাক সমর্থকদের রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ। নির্বাচন কমিশনে অবস্থান কর্মসূচি এনসিপির।
  • ইশরাকের ইস্যুতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কর্মসূচির ব্যাপক সমালোচনায় এনসিপির নেতারা।
  • দুই উপদেষ্টাকে পদত্যাগের আহ্বান ইশরাকের। তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২২ মে ২০২৫, ০৮: ০৫
বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের ব্যারিকেডের ওপর উঠে মাইক হাতে স্লোগান দেন এক ব্যক্তি। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার বাইরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের ব্যারিকেডের ওপর উঠে মাইক হাতে স্লোগান দেন এক ব্যক্তি। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার বাইরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে কয়েক দিন ধরে টানা আন্দোলন করছেন তাঁর সমর্থকেরা। বিষয়টি নিয়ে সরব বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারাও। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে গতকাল বুধবার ইসি কার্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই সমাবেশ থেকে এনসিপির নেতারা ইশরাক ইস্যুতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কর্মসূচির ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। দুই পক্ষের উত্তপ্ত বক্তব্য ও কর্মসূচিতে গরম হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ।

ইশরাক হোসেনকে মেয়রের চেয়ারে বসাতে চলমান আন্দোলনের সপ্তম দিন গতকাল বুধবার রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করেন বিএনপির নেতা- কর্মীরা। ইশরাক সমর্থকদের আলটিমেটামে সরকার সাড়া না দেওয়ায় সকাল ১০টার পর থেকে মিছিল নিয়ে নগর ভবনসংলগ্ন সড়কে জড়ো হন তাঁর সমর্থকেরা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে মৎস্য ভবন মোড় ও কাকরাইলে এসে সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা কাকরাইল মোড়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার প্রবেশপথের কাছাকাছি অবস্থান নেওয়ার কিছুক্ষণ আগে যমুনার দিকে যাওয়ার পথ আটকে দেয় পুলিশ। বাংলাদেশ পেশাজীবী জোটের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সড়ক অবরোধের কারণে রাজধানীর শাহবাগ, গুলিস্তান, প্রেসক্লাব, পল্টনসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় সকাল থেকেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

ইশরাককে মেয়রের চেয়ারে বসাতে গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন ইশরাক হোসেনের পক্ষে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচির সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমান। কিন্তু এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যান তাঁরা। ইশরাকের শপথ নিয়ে আজ রায় ঘোষণা পর্যন্ত দলটির নেতা-কর্মীরা রাস্তায় বসে বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ জন্য থানাভিত্তিক সময় ভাগ করে নিয়েছেন তাঁরা। ইশরাকও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সমর্থকদের রাজপথ না ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনে অবস্থান কর্মসূচি এনসিপির

ইশরাকের সমর্থকেরা গতকাল যখন যমুনা অভিমুখে কর্মসূচি করছিলেন, তখন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন এনসিপি নেতারা। এই সমাবেশ থেকে তাঁরা ইশরাক ইস্যুতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কর্মসূচির ব্যাপক সমালোচনা করেছেন।

সমাবেশে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন না হওয়ায় সারা দেশে নাগরিক সেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরকারি প্রশাসনিক কার্যালয়গুলো একটি দলের দখলে চলে যাচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অচলাবস্থার উদাহরণ টেনে সারোয়ার তুষার বলেন, এ অবস্থার জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী। তাদের এ-সংক্রান্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা ছিল। কিন্তু তারা কোনো রহস্যজনক কারণে মামলার বিবাদী হওয়ার পরও আপিল না করে গেজেট প্রকাশ করেছে। এই নির্বাচন কমিশনকে আর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলা যাচ্ছে না। এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

এর আগে গতকাল বুধবার বেলা সোয়া ১টার দিকে এনসিপির নেতারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নেন। সমাবেশ থেকে বিএনপির উদ্দেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আপনারা জনসেবা উপেক্ষা করে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন, আজ পুরো ঢাকা অবরুদ্ধ। জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। এখনো নির্বাচন হয়নি, আর আপনারা আগেই জোরজবরদস্তি শুরু করেছেন। নির্বাচন হলে তো আপনারা হাসিনার চেয়েও বড় ফ্যাসিস্ট হিসেবে আবির্ভূত হবেন।’

ইসি পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে পাটওয়ারী বলেন, ‘ইসি এখন আর কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এক্সিস্ট করে না। এটি বিএনপির একটি দলীয় কার্যালয় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। এটা বিএনপির একটা মুখপাত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ইসি পুনর্গঠিত না হলে বর্তমান ইসির অধীনে নির্বাচনে যাবে না এনসিপি।’

জাতীয় নির্বাচনের আগে অবশ্যই স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচন ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হবে না। যত দিন এনসিপি থাকবে, তত দিন এই দাবি থেকে আমরা একচুলও সরব না।’

কোন নির্বাচন আগে সিদ্ধান্ত সরকারের

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্বাচন কোনটি আগে, কোনটি পরে, সেটি নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই। সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে—কোন নির্বাচন আগে আর কোন নির্বাচন পরে হবে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।

গতকাল নির্বাচন ভবনে কমিশন সভা শেষে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে এনসিপির দাবির বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ইসির পদত্যাগের দাবিতে এদিন কমিশনের সামনে আন্দোলন করেন এনসিপির নেতারা। বিষয়টি নজরে আনলে সানাউল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আমরা কোনো মতামত দিতে চাই না। কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে এবং করে যাবে।’

৫ উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি

মেয়র পদে শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারের দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছেন ইশরাক হোসেন। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে যৌক্তিক কারণে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে অন্তর্বর্তী সরকারের সব দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি। যেহেতু এটা প্রতীয়মান যে আপনারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন, হয়তো ভবিষ্যতে সরাসরি যুক্ত হবেন। এবং এটাও অনেকটা স্পষ্ট, আপনারা নির্বাচন করবেন। তাহলে আপনাদের পদত্যাগের দাবি কি অযৌক্তিক? নাকি এটাই সঠিক পদক্ষেপ হবে এবং আপনাদের নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের অবসান ঘটবে।’

নাহিদ ইসলামের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজকে পরমর্শ দিয়েছেন ইশরাক। এই দুই উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে বর্তমান সরকারের নিরপেক্ষতার ইমেজ বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে অর্থ, পরিকল্পনা ও আইন উপদেষ্টাকে বিএনপির মুখপাত্র দাবি করে তাঁদের পদত্যাগের আহ্বান জানান এনসিসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। গতকাল নির্বাচন কমিশনের ফটকে অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে শিক্ষা খাত ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য ওয়াহিদউদ্দিন ভাই কাজ করছেন। অর্থনৈতিক খাত ধ্বংসের জন্য সালেহউদ্দিন ভাই আর আইন মন্ত্রণালয় ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছেন আসিফ নজরুল। আমরা এসব উপদেষ্টাকে পদত্যাগে বাধ্য করব। এ মাঠে কুসুম কুসুম খেলা চলবে না। এবার কর্মসূচি নিয়ে তাঁদের পদত্যাগে বাধ্য করব।’

আইন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে পাটওয়ারী বলেন, ‘ঘোষণাপত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। একবার ছাত্র-জনতাকে মুলা দেখিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা রাখেননি। এটা বিশ্বাসঘাতকতা। এবার যদি কোনো হেরফের হয়, আসিফ নজরুল বাংলাদেশে থাকবেন কি না, তা বলা মুশকিল। জনগণের সঙ্গে অনেক বাটপারি হয়েছে, বেইমানি হয়েছে। আপনি (আসিফ নজরুল) এই বেইমানি নিয়ে সরকারি অফিসে আসতে পারেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়া উচিত: সেনাপ্রধান

শেখ হাসিনাসহ ৩৯৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নিলেন বিএনপি নেতা

৪ ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি চাকরিচ্যুতি

বদলে গেল স্কুল-কলেজের শপথ, বাদ মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত