ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে যাঁদের ইউরোপে পাঠানো হয়, তাঁরা চাকরি পান না। উল্টো লিবিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় অর্থ। এত কিছুর পরেও ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের স্বপ্নে লিবিয়া যাওয়ার এই প্রবণতা থামছে না।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
লিবিয়া থেকে ফেরত আসা ৫৫৭ জন বাংলাদেশির যাত্রা, গন্তব্য, অর্থ, নিপীড়ন ও উদ্ধার থেকে শুরু করে প্রত্যেকের ৫০ ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
এক দশক ধরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়া লোকজনের মধ্যে যেসব দেশের নাগরিকেরা রয়েছেন—বাংলাদেশ সেই তালিকার শীর্ষ দশে থাকছে। প্রায়ই এভাবে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ বছরে নানা দেশের ২৫ লাখ মানুষ এভাবে সাগরপথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে গিয়েছেন। এভাবে যেতে গিয়ে প্রায় ২২ হাজার মানুষ সাগরে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে অনেক বাংলাদেশি আছেন।
ইউরোপের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিরা লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে সবচেয়ে বেশি ইউরোপে প্রবেশে চেষ্টা করেন। এটি সেন্ট্রাল মেডিটেরিয়ান রুট হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই পথে অন্তত ৭০ হাজার ৯০৬ জন বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছেন।
গবেষণার ফলাফল
ব্র্যাকের গবেষণায় দেখা গেছে, ২৬ থেকে ৪০ বছর বয়সী লোকজন সবচেয়ে বেশি ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে ৩১ থেকে ৩৫ বছরের লোক সবচেয়ে বেশি। এঁদের বেশির ভাগেরই বাড়ি মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা এলাকায়।
লিবিয়াফেরত ৫৫৭ বাংলাদেশির তথ্য অনুযায়ী, তাঁদের ৬০ শতাংশের পরিবারকে স্থানীয় দালালেরা ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়েছিল। কিন্তু ৮৯ শতাংশই চাকরি বা কোনো কাজ পাননি। উল্টো নানা ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছেন।
যাত্রাপথ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে দুবাই-মিসর হয়ে লিবিয়া গেছেন সবচেয়ে বেশি মানুষ। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ইস্তাম্বুল-দুবাই হয়ে লিবিয়া, ঢাকা থেকে কাতার হয়ে লিবিয়া, ঢাকা থেকে দুবাই-সিরিয়া হয়ে লিবিয়া এবং অল্প কিছু লোক ঢাকা থেকে সরাসরি লিবিয়া গিয়েছেন।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এভাবে লিবিয়া যাওয়ার পথে ৬৩ শতাংশই বন্দী হয়েছেন। বন্দীদের মধ্যে ৯৩ শতাংশই ক্যাম্পে বন্দী ছিলেন। বন্দীদের ৭৯ শতাংশই শারীরিক নির্যাতনের শিকার। এ ছাড়া লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর ৬৮ শতাংশই মুক্তভাবে চলাচলের স্বাধীনতা হারিয়েছেন। ৫৪ শতাংশই বলেছেন, তাঁরা কখনো তিনবেলা খাবার পাননি। অন্তত ২২ শতাংশ দিনে মাত্র একবেলা খাবার পেয়েছেন।
এভাবে লিবিয়া হয়ে ইউরোপে যাওয়ার জন্য অর্থ কোথায় পেয়েছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে ৫৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা নিজেরাই এই টাকা জোগাড় করেছেন। ২৩ শতাংশ বলেছেন তাঁরা পরিবারের কাছ থেকে অর্থসহায়তা নিয়েছেন।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) বলেন, ‘বাংলাদেশের সব জেলার লোক কিন্তু এভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করে না। মূলত শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকার লোকজন এভাবে ইউরোপে যায়। আমাদের গবেষণায় এটি উঠে এসেছে যে দালালেরা এসব এলাকার অভিভাবক ও তরুণদের ভালো চাকরি আর ইউরোপের প্রলোভন দেখাচ্ছে যেটি বাস্তব নয়। কাজেই সাধারণ মানুষ ও বিদেশগামীদের সবার আগে সচেতন হতে হবে। এলাকার স্থানীয় দালাল ও মানব পাচার চক্রকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সমন্বিত অভিযান চালাতে হবে। বিশেষ করে অর্থের লেনদেন খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি যে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্র রয়েছে লিবিয়া বা অন্য দেশে, তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে। পাশাপাশি লিবিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তান—এই এলাকার স্থিতিশীলতা জরুরি। নয়তো সেখানকার মানুষজন জীবন বাঁচাতে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করবে, আর সেই সুযোগে পাচারকারীরা বাংলাদেশে মতো আরও অনেক দেশের নাগরিকদের সেখানে যুক্ত করবে। কাজেই সম্মিলিতভাবে এই পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আরও পড়ুন:
ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে যাঁদের ইউরোপে পাঠানো হয়, তাঁরা চাকরি পান না। উল্টো লিবিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় অর্থ। এত কিছুর পরেও ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের স্বপ্নে লিবিয়া যাওয়ার এই প্রবণতা থামছে না।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
লিবিয়া থেকে ফেরত আসা ৫৫৭ জন বাংলাদেশির যাত্রা, গন্তব্য, অর্থ, নিপীড়ন ও উদ্ধার থেকে শুরু করে প্রত্যেকের ৫০ ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
এক দশক ধরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়া লোকজনের মধ্যে যেসব দেশের নাগরিকেরা রয়েছেন—বাংলাদেশ সেই তালিকার শীর্ষ দশে থাকছে। প্রায়ই এভাবে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ বছরে নানা দেশের ২৫ লাখ মানুষ এভাবে সাগরপথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে গিয়েছেন। এভাবে যেতে গিয়ে প্রায় ২২ হাজার মানুষ সাগরে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে অনেক বাংলাদেশি আছেন।
ইউরোপের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিরা লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে সবচেয়ে বেশি ইউরোপে প্রবেশে চেষ্টা করেন। এটি সেন্ট্রাল মেডিটেরিয়ান রুট হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই পথে অন্তত ৭০ হাজার ৯০৬ জন বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছেন।
গবেষণার ফলাফল
ব্র্যাকের গবেষণায় দেখা গেছে, ২৬ থেকে ৪০ বছর বয়সী লোকজন সবচেয়ে বেশি ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে ৩১ থেকে ৩৫ বছরের লোক সবচেয়ে বেশি। এঁদের বেশির ভাগেরই বাড়ি মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা এলাকায়।
লিবিয়াফেরত ৫৫৭ বাংলাদেশির তথ্য অনুযায়ী, তাঁদের ৬০ শতাংশের পরিবারকে স্থানীয় দালালেরা ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়েছিল। কিন্তু ৮৯ শতাংশই চাকরি বা কোনো কাজ পাননি। উল্টো নানা ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছেন।
যাত্রাপথ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে দুবাই-মিসর হয়ে লিবিয়া গেছেন সবচেয়ে বেশি মানুষ। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ইস্তাম্বুল-দুবাই হয়ে লিবিয়া, ঢাকা থেকে কাতার হয়ে লিবিয়া, ঢাকা থেকে দুবাই-সিরিয়া হয়ে লিবিয়া এবং অল্প কিছু লোক ঢাকা থেকে সরাসরি লিবিয়া গিয়েছেন।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এভাবে লিবিয়া যাওয়ার পথে ৬৩ শতাংশই বন্দী হয়েছেন। বন্দীদের মধ্যে ৯৩ শতাংশই ক্যাম্পে বন্দী ছিলেন। বন্দীদের ৭৯ শতাংশই শারীরিক নির্যাতনের শিকার। এ ছাড়া লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর ৬৮ শতাংশই মুক্তভাবে চলাচলের স্বাধীনতা হারিয়েছেন। ৫৪ শতাংশই বলেছেন, তাঁরা কখনো তিনবেলা খাবার পাননি। অন্তত ২২ শতাংশ দিনে মাত্র একবেলা খাবার পেয়েছেন।
এভাবে লিবিয়া হয়ে ইউরোপে যাওয়ার জন্য অর্থ কোথায় পেয়েছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে ৫৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা নিজেরাই এই টাকা জোগাড় করেছেন। ২৩ শতাংশ বলেছেন তাঁরা পরিবারের কাছ থেকে অর্থসহায়তা নিয়েছেন।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) বলেন, ‘বাংলাদেশের সব জেলার লোক কিন্তু এভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করে না। মূলত শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকার লোকজন এভাবে ইউরোপে যায়। আমাদের গবেষণায় এটি উঠে এসেছে যে দালালেরা এসব এলাকার অভিভাবক ও তরুণদের ভালো চাকরি আর ইউরোপের প্রলোভন দেখাচ্ছে যেটি বাস্তব নয়। কাজেই সাধারণ মানুষ ও বিদেশগামীদের সবার আগে সচেতন হতে হবে। এলাকার স্থানীয় দালাল ও মানব পাচার চক্রকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সমন্বিত অভিযান চালাতে হবে। বিশেষ করে অর্থের লেনদেন খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি যে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্র রয়েছে লিবিয়া বা অন্য দেশে, তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে। পাশাপাশি লিবিয়া, সিরিয়া, আফগানিস্তান—এই এলাকার স্থিতিশীলতা জরুরি। নয়তো সেখানকার মানুষজন জীবন বাঁচাতে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করবে, আর সেই সুযোগে পাচারকারীরা বাংলাদেশে মতো আরও অনেক দেশের নাগরিকদের সেখানে যুক্ত করবে। কাজেই সম্মিলিতভাবে এই পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আরও পড়ুন:
সমালোচনার মুখে নিয়োগ দেওয়ার দুই দিন পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র (গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া) হিসেবে মুহাম্মদ আবু আবিদের নিয়োগ বাতিল করেছে সরকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরার জন্য ১৫ এপ্রিল তাঁকে খণ্ডকালীন নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যদিও জনপ্রশাসন
৩ মিনিট আগেবাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়েছে। আজ শনিবার বিকেলে বিকেল সাড়ে ৪টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শিরীন পারভীন হকের নেতৃত্বে কমিশনের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার হাতে প্রতিবেদনটি তুলে দেয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস
৩৮ মিনিট আগেপ্রকৃত মৎস্যচাষিদের স্বার্থে হাওরে ইজারা বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, কোনো হাওরে ইজারা থাকা উচিত নয়। হাওরে ইজারা বন্ধ করতে হবে। হাওর সেখানকার মানুষের অধিকারের জায়গা, আর তা রক্ষা করাই আমাদের কাজ। আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে
১ ঘণ্টা আগেপুলিশ সদস্যদের আবাসন ও খাদ্য ব্যবস্থার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
৩ ঘণ্টা আগে