Ajker Patrika

ফলকার তুর্কের ঢাকা সফর: বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া গড়ার তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image
ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত

মানবাধিকারকে কেন্দ্রে রেখে বাংলাদেশে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া গড়ে তোলা এবং রাষ্ট্রের প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলোয় সংস্কারের তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্ক। দুই দিনের সফরের প্রথম দিন গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় বিভিন্ন সভায় তিনি এ তাগিদ দেন।

গত জুলাই ও আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিপুল প্রাণহানি, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে গতকাল অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ফলকার তুর্ক বলেন, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি দীর্ঘস্থায়ীভাবে মোকাবিলা করা এবং রাষ্ট্রীয় প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকারের ওপর ভিত্তি করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কার্যকর করতে হবে।’

তুর্ক এ সময় বলেন, মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, নাগরিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং উত্তরণের প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতিসংঘ সহায়তা দিতে চায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন।

জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান ঢাবি ক্যাম্পাসে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় তরুণদের আঁকা দেয়াললিখন ও গ্রাফিতি পরিদর্শন করেন।

ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার কার্যালয় ফলকার তুর্কের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচজন উপদেষ্টার তিনটি আলাদা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

তিন উপদেষ্টার সঙ্গে একটি হোটেলে ফলকার তুর্কের এমন একটি বৈঠকের পর সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা ঢাকায় একটি কার্যালয় করতে যাচ্ছে।

উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা খুব বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের একটি কার্যালয় চালু হবে। কার্যালয়টি চালু হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রগুলোয় তারা সরাসরি তদন্ত করতে পারবে।’

শারমীন মুরশিদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের সরকারের অপরাধের তদন্ত করে, তাহলে সঠিক তদন্ত হয় না। নাগরিক সমাজ তদন্ত করে সত্যটা তুলে ধরলে তাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে।

সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা মনে করেন, ঢাকায় বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থাটির কার্যালয় হলে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তদন্ত করা সম্ভব হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও এ বৈঠকে অংশ নেন।

সরকারের ভেতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় চালু করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি। এই অনুমতি এখনই দেওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে মতভেদ আছে। একটি অংশ মনে করে, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন।

শারমীন মুরশিদ মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় বিষয়ে যে সিদ্ধান্তের কথা জানালেন, সে বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হয়েছে কি না বা এটা পরিষদের সিদ্ধান্ত কি না, এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আজকের পত্রিকাকে গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা নেই।’

শান্তি রক্ষা মিশনে দেখেশুনে পাঠানোর পরামর্শ

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে আলাদা এক বৈঠকে ফলকার তুর্কের দলটি জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের পাঠানোর ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে যাচাই-বাছাই ও ‘দেখেশুনে পাঠানোর’ পরামর্শ দেয়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ সংস্কারের ক্ষেত্রে মানবাধিকার রক্ষা এবং বিচারপ্রক্রিয়ায় সাক্ষী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির সুরক্ষার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রহিত করার প্রস্তাব

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে সভায় জাতিসংঘের দলটি বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রসঙ্গটি আলাপে আসার কথা নিশ্চিত করে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, তিনি জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান এখনই বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। যে ফ্যাসিস্টদের হাতে হাজারো তরুণ নিহত হয়েছে, তাদের হত্যার বিচারকে সামনে রেখে হঠাৎ করে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার প্রশ্নই আসে না।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সুবিচার হবে, এমন আশ্বাস জাতিসংঘ দলকে দেওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা থেকে সেখানে বিচার হবে না।

আইন উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপে ফলকার তুর্ক বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার ওপরও গুরুত্ব দেন।

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে ফলকার তুর্কের একটি বৈঠক হয়। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে স্বাধীন কমিশন গঠন দেশে সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন জাতিসংঘ কর্মকর্তা।

প্রধান বিচারপতি জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকারের সুরক্ষায় বিচার বিভাগ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

বিয়ে করলেন সারজিস আলম

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে শ্রীলঙ্কা, ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ কোথায় দেখবেন

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

সাবেক শিক্ষার্থীর প্রাইভেট কারে ধাক্কা, জাবিতে ১২ বাস আটকে ক্ষতিপূরণ আদায় ছাত্রদলের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত