Ajker Patrika

ঋণখেলাপি হলেই বাতিল হবে সংসদ সদস্য পদ

মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা 
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ৩১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরও ঋণখেলাপি হলে সংসদ সদস্য পদ বাতিল করার বিধান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) যুক্ত করার উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এটি সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও প্রয়োগের নজির নেই। ইসি মনে করছে, এই বিধান আরপিওতে যুক্ত হলে কমিশন স্বউদ্যোগে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ জন্য আরপিও সংশোধন করে বিধানটি যুক্ত করার প্রস্তাব দেবে কমিশন। ইসি মনে করছে, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর সংসদ সদস্যদের অনেকে ঋণখেলাপি হয়ে পড়েন। তাই বিধানটি থাকলে সংশ্লিষ্ট সদস্যরা এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। তাঁদের সতর্ক করতেই এই বিধান যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কমিশন মনে করে, ঋণখেলাপি হওয়ার প্রবণতা রুখতে এবং ঋণখেলাপে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে এই বিধান যুক্ত করা প্রয়োজন।

জানতে চাইলে ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির প্রধান এবং নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, সংবিধানে বিষয়টি আগে থেকেই আছে। আরপিওতে যুক্ত করার বিষয়টি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, কেউ ঋণখেলাপি হয়েছেন প্রমাণিত হলে তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে। এটি লেখা না হলেও বিষয়টি তা-ই দাঁড়ায়। অথবা জরিমানা করা হবে। তাঁরা আশা করছেন, বিধানটি যুক্ত হলে চিঠি পাওয়ার আগেই খেলাপি ঋণ পরিশোধ করা হবে। তাঁরা অন্তত এই ৩০০ মানুষকে ঋণখেলাপিমুক্ত রাখতে চান।

জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। গত বছরের ২৩ জানুয়ারি সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ জন বিজয়ী সংসদ সদস্যের মধ্যে ২০০ জনই ছিলেন পেশায় ব্যবসায়ী। একাদশ সংসদে ১৮৫ ব্যবসায়ী জয়লাভ করেছিলেন। কমিশনের সূত্র বলছে, ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা স্বাভাবিক। তবে খেলাপি হলে সমস্যা। বিজয়ী হওয়ার পর সংসদ সদস্যরা যাতে ঋণখেলাপি না হন, তাই বিধানটি যুক্ত করে তাঁদের জবাবদিহির মধ্যে রাখতে চায় ইসি।

ইসির সূত্র বলছে, শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন করাই যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের যে অনাস্থা রয়েছে সেটিও দূর করতে চায় বর্তমান ইসি। এ লক্ষ্যে আরপিওর অনুচ্ছেদ ১২-এর দফা ৭-এর (ক)-তে বিষয়টি সংযোজনের প্রস্তাব করা হবে। প্রস্তাবে বলা হবে–এই আদেশের অন্যত্র বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো সংসদ সদস্য তাঁর নির্বাচনের পর ওপরে বর্ণিত অযোগ্যতার অধীন হয়েছেন কি না মর্মে কোনো বিরোধ দেখা দিলে নির্বাচন কমিশন স্বউদ্যোগে অথবা অন্য কোনোভাবে জ্ঞাত হয়ে অনুরূপ বিরোধ শুনানি নিষ্পত্তি করতে পারবে এবং অনুরূপ ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

বর্তমানে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়টি সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ এবং আরপিওর ১২ ধারায় উল্লেখ রয়েছে। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে কেউ ঋণগ্রহীতা না হলে তাঁকে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। সংবিধান অনুযায়ী, ঋণখেলাপসহ প্রার্থীর অন্যান্য অযোগ্যতা নিয়ে যদি কোনো বিতর্ক দেখা দেয়, তাহলে সংসদ তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখার জন্য ইসির কাছে পাঠাবে। ইসি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে ফল দেবে সেটি চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। সংবিধানে বলা হয়েছে, ইসিকে শক্তিশালী করার জন্য ইচ্ছা করলে এ বিষয়ে আইনের বিধান করা যাবে। তবে স্বাধীনতার পর সংসদ থেকে এমন একটি বিষয়ও দেখার জন্য ইসিতে পাঠানো হয়নি। সংবিধানের ১২২-এর ৫ ধারা অনুযায়ী এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আইনও করা হয়নি।

ইসি সূত্র বলছে, আরপিওর ১২ ধারায় বিষয়টি সংযুক্ত করা হলে ইসি কোনো সংসদ সদস্যের ঋণখেলাপি থাকার খবর পেলে তা আমলে নিয়ে তদন্ত করতে পারবে। তদন্তে ওই সদস্য ঋণখেলাপি প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত