কঠোর আন্দোলনের হুমকি, কমিটি করছে সরকার

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল না করলে কোরবানির ঈদের পর কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়েছেন কর্মচারী নেতারা। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে গতকাল মঙ্গলবার নিজেদের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার পর এ হুমকি দেয় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।

এদিকে, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ নিয়ে কর্মচারীদের আপত্তির বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এই কমিটির সুপারিশ নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হবে।

স্মারকলিপি গ্রহণ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এ আইনের বিষয়ে ওনাদের অনেক আপত্তি আছে।

ওনাদের আপত্তিগুলো শোনার পূর্ণ মানসিকতা আমাদের রয়েছে। আমি যত দূর জানি, উপদেষ্টা পর্যায়ের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি করা হবে। কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে ওনাদের যে আপত্তিগুলো আছে, সেগুলো ভালো করে শোনা, বিবেচনা করা এবং সে অনুযায়ী সুপারিশ প্রণয়ন করা।’

আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘যেহেতু কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার মানে আমরা পুনর্বিবেচনা করার স্কোপ রেখেছি। কমিটি আজকে বা কালকে গঠন হবে। উপদেষ্টা পর্যায়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

উচ্চপর্যায়ের ওই কমিটির সুপারিশ উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি যদি কমিটিতে থাকি, সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে ওনাদের বক্তব্যগুলো শুনব এবং উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তুলে ধরার চেষ্টা করব।’

এক প্রশ্নের আইন উপদেষ্টা বলেন, কিছু ক্ষেত্রে (চাকরি অধ্যাদেশ) অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে।

অপপ্রয়োগের সুযোগ থাকা কখনোই একটি প্রত্যাশিত ব্যাপার হতে পারে না। ভালো করে শোনা-বোঝার জন্যই কমিটিটা গঠন করা হয়েছে।

এ সময় সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবীর বলেন, ‘ঈদের ছুটির পর ১৬ জুন আমরা বসব। আমরা আশা করি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে এটার একটা পূর্ণাঙ্গ সমাধান আসবে। এই কালো ও নিবর্তনমূলক আইন প্রত্যাহার হবে।’

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে গতকাল ১১তম দিনের মতো সচিবালয়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম সরকারের নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যদি ভেবে থাকেন আন্দোলন থেমে গেছে, তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। আমরা এমন কর্মসূচি দেব, আপনারা কল্পনা করতে পারবেন না। ঈদ সামনে তাই আগামীকাল (আজ) কর্মসূচি রাখিনি। যদি এই আইন বাতিল না করা হয়, তাহলে প্রয়োজনে শুধু কর্মবিরতি নয়, অবস্থান কর্মসূচিও দিতে পারি। দরকার হলে সারা দেশে ডিসি অফিস, বিভাগীয়সহ সমগ্র বাংলাদেশে এই কর্মসূচি ছড়িয়ে দেব।’ ১৫ জুনের মধ্যে ভালো সংবাদ না পেলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বিক্ষোভ সমাবেশে ঐক্য ফোরামের আরেক কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘১৬ জুন আপনারা সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন। কেউ যেন কর্মস্থলে না থাকেন, সবাই বেলা ১১টায় সচিবালয়ের বাদামতলায় একত্র হয়ে উচ্চারণ করব—অবৈধ কালো আইন বাতিল করো, করতে হবে।’

মার্চ টু সচিবালয়

‘বিতর্কিত’ ৪৪ জন আমলাকে অপসারণ না করায় ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালন করছে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সংগঠনগুলোর জোট ‘জুলাই ঐক্য’। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে পৌঁছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে মিছিলটি। এ সময় ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন আন্দোলনে থাকা জুলাই ঐক্যের সমর্থকেরা। পরে পুলিশ আর নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার সমঝোতায় আসে।

এ সময় জুলাই ঐক্যের সংগঠক এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি ৫ আগস্টের পরও সচিবালয়ের অভ্যন্তরে কোনো বড় পরিবর্তন আসেনি। সচিবালয়ের অভ্যন্তরে একটি দল সিভিল ক্যু ঘটাতে চেষ্টা করেছে।...দুঃখের বিষয়, আমরা ৩১ মে পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। ৩১ মে পার হয়ে যাওয়ার পরও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাইনি।’