Ajker Patrika

প্রতি মাসে ২৩ কন্যাশিশুকে হত্যা, বেড়েছে আত্মহনন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০: ১৯
Thumbnail image

এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ২৩ দশমিক ২৫ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে, আর আত্মহত্যা করেছে ২২ দশমিক ৬ জন। এ ছাড়া ৭১ দশমিক ৭৫ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

এ বছরের প্রথম ৮ মাসে ২৪টি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক এবং অনলাইন পত্রিকার সংবাদ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য দিয়েছে ‘জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম’।

আজ শুক্রবার ঢাকার প্রেসক্লাবে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে ‘জানুয়ারি-আগস্ট-২০২২ কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ উপস্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় সংগঠনটি।

কন্যাশিশু ও নারী নির্যাতনের বিভিন্ন চিত্র প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেন সংগঠনের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আট মাসে ১৮৬ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের প্রমাণ না রাখাসহ বেশ কিছু কারণে এই কন্যা শিশুদের হত্যা করা হয়। এ সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৭৪ জন কন্যাশিশু। এর মধ্যে ৩৬৪ জন একক ধর্ষণ, ৮৪ জন দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং ৪৩ জন প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়।

ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ২০ জনকে। আর যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয় ৭৪ জন। প্রতি মাসে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছে ৯০০ থেকে ১ হাজার জন।

এই আট মাসে আত্মহত্যা করেছে ১৮১ জন কন্যাশিশু। গত বছর একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ১৫৩ জন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ সময়ে অপহরণ ও পাচারের শিকার হয় ১৩৬ জন কন্যাশিশু। এর মধ্যে ৭৪ জনকে অপহরণের পর যৌন পেশায় নিয়োজিত করা হয়।

গত আট মাসে ২৮টি জেলায় ২ হাজার ৩০১টি বাল্যবিবাহ হয়েছে।মাঠ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে নাছিমা আক্তার জলি জানান, ২৮টি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এই সময়ে ২ হাজার ৩০১টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে এই সংখ্যা ছিল ২৮৮ টি। তবে আশার কথা, এ সময়ে ৫৮৯টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করাও সম্ভব হয়েছে।

উল্লেখিত সময়ে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয় ১৩ জন। এর মধ্যে হত্যা করা হয় পাঁচজনকে। অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার হয় ৩ জন। এই সময়ে আটজন কন্যাশিশুকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এডুকো বাংলাদেশের সহযোগিতায় ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

এতে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘কন্যাশিশুর ভবিষ্যৎ মানেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তাই কন্যাশিশুদের অধিকার নিশ্চিত করা না গেলে দেশের ভবিষ্যৎও অন্ধকার।’

বদিউল আলম আরও বলেন, ‘পরিবারে একটি কন্যাশিশু যখন জন্ম নেয়, তখন থেকেই তার প্রতি বৈষম্য শুরু হয়। এর অবসান ঘটাতে হলে পারিবারিক ও সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন করতে।’

শুধু আইন করে এ ধরনের নির্যাতন প্রতিকার করা যাবে না। এ জন্য সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি নৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। নৈতিকতার জায়গায় নাড়া দিতে পারলেই এ অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব বলে সংবাদ সম্মেলনে মত দেন বাংলাদেশ ওয়াইডব্লিউসিএর জাতীয় সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনীষা সরকার।

এ সময় এডুকো বাংলাদেশের চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড প্রোটেকশন স্পেশালিস্ট মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘কন্যাশিশু ও নারীদের ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে, তাতে প্রায় শতভাগ নির্যাতনকারীই হলো পুরুষ। তাই এ ক্ষেত্রে পুরুষের মানসিকতায় উন্নয়ন ঘটাতে হবে।’ এ ধরনের নির্যাতন বন্ধে প্রান্তিক পর্যায়ের তথ্য তুলে আনতে গণমাধ্যম কর্মীদের আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।

এ অবস্থায় সংগঠনটির পক্ষ ১১টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—শিশু নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত বিচার শেষ করা; ‘যৌন হয়রানি, প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ নামে একটি আইন প্রণয়ন; ভুক্তভোগীর পরিবর্তে অভিযুক্তকে প্রশ্ন করা ও আইনের আওতায় আনা; নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয় না দেওয়া এবং শিশু সুরক্ষায় পৃথক অধিদপ্তর গঠন।

আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীসহ আমন্ত্রিত অনেকেই অংশ নেন। তাঁরা কন্যাশিশুদের জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোরও আহ্বান জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত