Ajker Patrika

জাতিসংঘের জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠান

গভীর সংস্কার না করলে স্বৈরাচার ফিরে আসবে: ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৫, ২১: ৩১
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

গভীর সংস্কার না করলে স্বৈরাচার ফিরে আসবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এটা ওপরে একটা প্রলেপ দেওয়ার পরিবর্তন নয়, গভীরতমভাবে পরিবর্তন। সে গভীরতম পরিবর্তন যদি না করি, যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আজকে আমরা কথা বলছি, আবার ঘুরেফিরে সে চলে আসবে, যতই আমরা সামাল দিই, যতই সংস্কার করি। আমাদের আরও গভীরের সংস্কার দরকার। এই সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে জাতিসংঘ আয়োজিত ‘জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠানে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার আবেদন হচ্ছে, আমাদের জাতির ভেতরে এমন কিছু রয়ে গেছে, যতই শাস্তি দেই, সেটার বীজ বোধ হয় আমাদের মধ্যে থেকে যাবে। এই বীজ থেকে আমরা কীভাবে মুক্তি পাই, এটাই আজকে জানার বিষয়, আমাদের চ্যালেঞ্জের বিষয়। এটা কয়েকটা কাগজের সংস্কার নয়। এটা মনের গভীরতম জায়গার সংস্কার। আজকে জুলাইয়ের যে শিক্ষা, সেটা হবে, কীভাবে নিজ থেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারি নিজেকে, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা পুনর্জন্ম লাভ করব। জুলাই আমাদের পুনর্জন্মের মাস, এটা শুধু স্বৈরাচারমুক্তির মাস নয়।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য রাজনৈতিক ব্যবস্থার চারপাশে একটি বিস্তৃত জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেয়। লক্ষ্য স্পষ্ট—এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে সমস্ত বাংলাদেশি শান্তিতে, গর্বের সঙ্গে, স্বাধীনতার সঙ্গে ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারে।’

জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমাদের সবচেয়ে অন্ধকার সময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানাই এবং আমরা এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অব্যাহত অংশীদারত্বের জন্য আমি উন্মুখ।’

অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘গত এক বছরে অনেক পরিবর্তন ও অর্জন এসেছে। কিন্তু এখনো মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। তোষামোদী করা অপরাধ না, তারপরেও অনেকে এই কাজের জন্য জেলে আছেন। আপনি কাউকে অতিরিক্ত তোষামোদী করেছেন, এটা কোনো অপরাধের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে? আমার জানামতে, ফৌজদারি আইনে এটা কোনো অপরাধ না৷ তারপরেও এই অভিযোগে অনেকে এখন জেলখানার ভেতরে আছে। এটা আমাদের দেখতে হবে।’

আটক করা বা আসামিদের হাতকড়া পড়ানো এবং শিশুদের গ্রেপ্তারের বিষয়েও আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরাও চাই অতি দ্রুত এই হত্যার বিচার হোক। জরুরি সংস্কারগুলো অতি দ্রুত হোক। তবে একটি জিনিস মনে রাখা প্রয়োজন—জনগণের প্রতিনিধিত্বসম্পন্ন সরকার খুবই জরুরি। কারণ, ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করা আর ম্যান্ডেট ছাড়া কাজ করার মধ্যে অবশ্যই কিছু পার্থক্য রয়েছে।’

জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আগে দেশে কোনো নির্বাচন হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে হবে। বিচার ও সংস্কারের আগে নির্বাচন হলে সেটা জাতির জন্য ডিজাস্টার হবে। শহীদ পরিবারের দাবি, বিচার না দেখে আমরা কোনো নির্বাচন চাই না।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ বাংলাদেশের সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি, জাতিসংঘের কর্মকর্তাসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা জুলাই আন্দোলন, পরিবর্তিত বাংলাদেশ, জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনের বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত