Ajker Patrika

শ্যামপুর সুগার মিল: ফের আটকে গেল চিনি উৎপাদন

  • ১৩ জুলাই অর্থ মঞ্জুর ও ছাড় করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠায় সরকার
  • তবে ৩০ জুলাই এক চিঠির মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে অর্থ বিভাগ অসম্মতি জানিয়েছে
শিপুল ইসলাম, রংপুর 
৯ মাস আগে পুনরায় চালুর ঘোষণা এলেও এখনো বন্ধই পড়ে আছে ভারী শিল্প শ্যামপুর সুগার মিল। ছবি: আজকের পত্রিকা
৯ মাস আগে পুনরায় চালুর ঘোষণা এলেও এখনো বন্ধই পড়ে আছে ভারী শিল্প শ্যামপুর সুগার মিল। ছবি: আজকের পত্রিকা

একসময় আখের মিষ্টি গন্ধে মুখর থাকত রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গ্রামগুলো। চিনিকলের সাইরেন বাজলেই প্রাণ ফিরত শ্রমিকপল্লিতে, জমজমাট হতো স্থানীয় বাজার। কিন্তু সেই সাইরেন বহুদিন বন্ধ। ৯ মাস আগে পুনরায় চালুর ঘোষণা এলেও এখনো বন্ধই পড়ে আছে এখানকার একমাত্র ভারী শিল্প শ্যামপুর সুগার মিল। অর্থ বরাদ্দ না পেয়ে থমকে আছে টাস্কফোর্সের পরিকল্পনা, হতাশ শ্রমিক ও চাষিরা।

শ্যামপুর সুগার মিল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে প্রায় ১১১ দশমিক ৪৫ একর জমিতে চিনিকলটি স্থাপিত হয়। ১৯৬৭ সালে আখ মাড়াই শুরু হয়। সক্ষমতা ছিল দৈনিক ১ হাজার ১৬ টন আখ মাড়াইয়ের। বার্ষিক চিনি উৎপাদনক্ষমতা ছিল ১০ হাজার ১৬১ টন। এলাকায় ১০ হাজার একরে আখ চাষ হতো। এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন ১০ সহস্রাধিক চাষি। ২২৬ কোটি টাকা লোকসানের মুখে ২০২০-২১ অর্থবছরে ওই চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ওই সব জমিতে আখ চাষ করছেন না চাষিরা। কিন্তু জমিগুলোতে অন্য ফসল চাষে তাঁরা তেমন লাভবানও হচ্ছেন না। এতে ক্রমান্বয়ে ওই চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন।

তবে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বন্ধ থাকা চিনিকল পুনরায় চালু ও লাভজনকভাবে চালানোর লক্ষ্যে টাস্কফোর্সের সুপারিশ ও মতামতের আলোকে এবং পর্যাপ্ত আখ পাওয়া সাপেক্ষে শ্যামপুর সুগার মিলে মাড়াই কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার।

মিলটি চালু করার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আখ চাষ উন্নয়ন ও রোপণসংক্রান্ত সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রাক্কলন এবং ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য যথাক্রমে ৫৩৭ কোটি টাকা মঞ্জুর ও ছাড় করার লক্ষ্যে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠায় সরকার। পরে ১৩ জুলাই পুনরায় ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য শ্যামপুর চিনিকলের জন্য অর্থ মঞ্জুর ও ছাড় করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠায় সরকার। তবে ৩০ জুলাই এক চিঠির মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে অসম্মতি জানায় অর্থ বিভাগ।

সম্প্রতি শ্যামপুর সুগার মিল সরেজমিনে দেখা যায়, চিনিকল চত্বরজুড়ে এখন নিস্তব্ধতা। চারপাশ গাছগাছালিতে ঢেকে গেছে। নেই কোনো কোলাহল বা যান্ত্রিক শব্দ। আখ পরিবহনের ট্রাক্টর-ট্রলিগুলো অযত্নে পড়ে আছে। ঝোপঝাড় ও লতাপাতায় ঢেকে গেছে সেগুলো। রোদ-বৃষ্টিতে মরিচা পড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। চিনিকলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশও পড়ে আছে যত্রতত্র।

শ্যামপুর গ্রামের আখচাষি ফজলুল হক বলেন, তাঁরা বিভিন্ন সময় মিল চালুর জন্য আন্দোলন-সমাবেশ করেছেন। শ্যামপুর মিল চালুর আশ্বাসও দিয়েছিল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এখন শুনছেন মিল চালু হবে না। তিনি মিলটি চালু করার দাবি জানান।

আরেক চাষি আনারুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে শ্যামপুর অঞ্চলের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। একসময় আখ চাষ, কেনাবেচা করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হতো। কৃষক, ব্যবসায়ী সবাই শহরের মানের জীবনযাপন করতেন। কিন্তু কল বন্ধ থাকায় অন্য ফসলে তেমন লাভ হয় না। ব্যবসা-বাণিজ্যেও ভাটা পড়েছে।

শ্যামপুর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে শ্যামপুর চিনিকল চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্থ ছাড়ের বিষয় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে না করেছে। এ কারণে চালু হয়নি। আমাদের চেয়ারম্যান, ডিরেক্টর অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছেন। আমাদের বেতনভাতা আপডেট আছে। আমরা চাই মিল দ্রুত চালু হোক।’

শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা, বন্ধ চিনিকল টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, ‘টাস্কফোর্সের সুপারিশে ছিল কীভাবে মিলগুলোকে আধুনিকায়ন করে লাভজনক করা যায়। অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় আবারও মিলগুলোর কার্যক্রমে অনিশ্চয়তা দেখা দিল। হাজার হাজার কোটি টাকার এসব সম্পদকে কাজে লাগানো গেলে লোকসান নয়; লাভের মুখ দেখবে এসব প্রতিষ্ঠান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত