Ajker Patrika

যোগাযোগব্যবস্থা ‘গলার কাঁটা’, দিন দিন কমছে পর্যটকও

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৪৪
প্রায়ই যানজট লেগে থাকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। নষ্ট হয় অনেক মূল্যবান সময়। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ অংশে। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রায়ই যানজট লেগে থাকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। নষ্ট হয় অনেক মূল্যবান সময়। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ অংশে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় ২২ লাখ মানুষের বাস। পাশাপাশি রয়েছে লাখো পর্যটকের চাপ। তবে স্থানীয় বাসিন্দা এবং এসব পর্যটকের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে জেলার যোগাযোগব্যবস্থা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট, রেলের তীব্র টিকিট সংকট ও শমশেরনগর বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় এ মৌসুমে পর্যটক কম এসেছে বিগত সময়ের তুলনায়।

জানা গেছে, মৌলভীবাজারের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগের মাধ্যম রয়েছে তিনটি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সড়ক ও রেলপথ। গত এক বছর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ধীরগতির কাজ হওয়ার কারণে বেশির ভাগ সময়ে তীব্র যানজট লেগেই থাকে সড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে। ৫ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে অনেক সময় লাগে ১০-১৫ ঘণ্টা। এমন ঘটনাও আছে, তীব্র যানজটে পড়ে বিদেশযাত্রীরা বিমানের ফ্লাইট ধরতে পারেননি। অনেক সময় মুমূর্ষু রোগী দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থেকে পথেই মারা গেছেন।

সড়ক পথে যখন তীব্র যানজট—এই অবস্থায় ট্রেনের টিকিট যেন অমাবস্যার চাঁদ। সিলেট-আখাউড়া রেলপথ ব্রিটিশ আমলের তৈরি। এই পথের অতি গুরুত্বপূর্ণ চারটি স্টেশন হলো মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, ভানুগাছ ও শমশেরনগর।

স্টেশনগুলো পর্যটকের যাতায়াতের অন্যতম স্থান। জেলায় বছরে লাখো পর্যটক আসা-যাওয়া করেন এই পথে। তবে রেলস্টেশনগুলোয় ট্রেনের টিকিট সাধারণ যাত্রীরা কোনো অবস্থায় পান না। অভিযোগ রয়েছে, সব টিকিট অনলাইনে আসার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গায়েব হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে চলছে এ সংকট। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পর্যটক ও স্থানীয়দের।

এ জেলায় শমশেরনগর বিমানবন্দর রয়েছে; যা দীর্ঘদিন ধরে নানান সমস্যার কারণে চালু করা যাচ্ছে না। এটি চালু হলে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার মানুষেরা সহজেই যাতায়াত করতে পারত।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক তপু আহমেদ বলেন, ‘আমরা সাতজন ট্রেনে মৌলভীবাজার যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু টিকিট পাইনি। পরে মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে এসেছি। যানজটের কারণে ১০ ঘণ্টায় মৌলভীবাজার এসেছি। ১০ হাজার টাকার ভাড়ার বদলে চালক ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কমলগঞ্জের সাবিনা আক্তার জানান, তিনি গত মাসে জটিল অপারেশন করিয়েছেন। এই মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় গিয়ে আরও একটি অপারেশন করানোর কথা। সেই অবস্থায় সড়ক পথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। যানজটে দীর্ঘ সময় আটকে থাকার পর হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি হতে হয়েছে।

রাজনগর উপজেলার শওকত আহমেদ নামের এক প্রবাসী বলেন, ‘ঢাকা থেকে আমার ফ্লাইট ছিল। আমি কোনোভাবেই ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারিনি। সড়ক পথে তীব্র যানজট ছিল। পরে সিলেট থেকে বিমানে ঢাকা গিয়েছি। ৪-৫ হাজার টাকার টিকিট আমাকে ১১ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে ঢাকা যেতে হয়েছে। আমার সঙ্গের একজন সড়কপথে যানজটে আটকা পড়ে ফ্লাইট মিস করেছেন।’

কুলাউড়ার স্টেশনমাস্টার রুমান আহমেদ বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই টিকিটের চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। যাত্রীর তুলনায় অতি সামান্য টিকিট রয়েছে। লাইন সংস্কার, টিকিট বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।’

সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ট্রেনের টিকিট বৃদ্ধি, শমশেরনগর বিমানবন্দর চালুসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। রেলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করবেন বলে জানান তিনি।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক পার্থ সরকার বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ট্রেনের কোচ বৃদ্ধি করেছি। এ ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী থাকলেও কোচ বৃদ্ধি করা হয়। টিকিটের চাহিদা বেশি থাকলে আমাদের কাছে আবেদন করলে তা দেখা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত