Ajker Patrika

চীন সফরকে ফলপ্রসূ করতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করলেন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। ছবি: প্রেস উইং
আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। ছবি: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার সম্প্রতি চীন সফরের ফলাফল পর্যালোচনা এবং বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা দ্রুততর করতে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তাঁরা এ সাক্ষাৎ করেন।

বৈঠকে উভয় পক্ষ অবকাঠামো, বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতে আলোচনাকে বাস্তবসম্মত প্রকল্পে রূপ দেওয়ার জন্য যৌথ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হলো চীন সফরকালে আমরা যে পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছি, সেগুলোর বাস্তবায়ন দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যেন এই গতি থেমে না যায়।’

চীনা রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি আমাদেরও প্রধান অগ্রাধিকার। চীনে আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অ্যাজেন্ডাভিত্তিক বৈঠকগুলোর একটি অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আমরা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আরও দুই থেকে তিন বছর অপেক্ষা করতে চাই না—আমরা সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাই।’

আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে মোংলা ও আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন অন্যতম। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, প্রস্তুতি চলছে এবং সম্পন্ন হওয়ার পর অঞ্চলগুলো বাস্তবায়ন শুরু করার জন্য ডেভেলপারদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

উভয় পক্ষ চীন থেকে চারটি নতুন জাহাজ কেনার পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করে এবং চীনা পক্ষ নিশ্চিত করে যে এই প্রক্রিয়াটি চলতি বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

চীনা রাষ্ট্রদূত আরও নিশ্চিত করেন, চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী খুব শিগগির ১০০ সদস্যের বিনিয়োগকারী দল নিয়ে বাংলাদেশ সফর করবেন, যাদের লক্ষ্য নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সন্ধান করা।

বিডার চেয়ারম্যান আশিক বলেন, ‘আমরা চীনা বিনিয়োগকারীদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি ছোট আকারের বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করব, যাতে খাতভিত্তিক সহযোগিতা জোরদার করা যায়।’

স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা আলোচনায় বিশেষভাবে স্থান পায়। চীনা পক্ষ তাদের পূর্বে চীন সফরের সময় বাংলাদেশে প্রস্তাবিত ১ হাজার শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। তারা চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে চলমান সহায়তার কথাও তুলে ধরেন।

চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, কুনমিং-চট্টগ্রাম সরাসরি বিমান পরিষেবা চালুর ক্ষেত্রে অগ্রগতি হচ্ছে এবং বাংলাদেশি রোগীদের জন্য মেডিকেল ভিসা দ্রুত করার প্রচেষ্টা চলছে।

প্রধান উপদেষ্টা সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং তরুণ বাংলাদেশিদের চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিতে একটি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন।

উভয় পক্ষ তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনার কাজসহ পানি ব্যবস্থাপনার ওপর ৫০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা চালু করার জন্য তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।

প্রধান উপদেষ্টা চীনে পাট রপ্তানির সম্ভাবনা সম্প্রসারণের বিষয়টিও উত্থাপন করেন এবং লোকোমোটিভ খাতে বৃহত্তর চীনা বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরে লোকোমোটিভ উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র এবং সেই সঙ্গে সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রস্তাব করেন।

কৃষি-বাণিজ্য ছিল আরেকটি অগ্রগতিপূর্ণ ক্ষেত্র। বাংলাদেশ এই মৌসুমে চীনে আম রপ্তানি শুরু করবে এবং আগামী বছর কাঁঠাল রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি নিজে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে এক ঝুড়ি তাজা আম পাঠাব।’

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বিডার চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ বিন হারুন, বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া এবং এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদও উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত